আর সেটা হলো তথ্যপ্রযুক্তি। যার মাধ্যমে দেশের মানুষের জীবন মান বাড়াতে, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করাটাই হলো তার নেশা আর পেশা।
যোগ দিলেন বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানে। এখন দেশ তো বটেই, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে অনগ্রসর অন্য দেশের মানুষরাও চেয়ে থাকেন তার উদ্যোগের দিকে।
এভাবেই দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব ঘটাতে নীরবে কাজ করে চলেছেন এক বাংলাদেশি। তিনি সাজিদ রহমান (৪৫)।
তথ্য প্রযুক্তিই যেন খেলার মতো বিষয় এই ব্যাংকারের কাছে। প্রতি মুহূর্তেই ভাবেন, কতটা সাশ্রয়ী ও টেকসই প্রযুক্তিতে অাধুনিক সেবা পৌঁছে দেওয়া যায় দেশের মানুষের হাতে।
আর এ কারণে নতুন নতুন অ্যাপস আর কনটেন্ট তৈরি করতে দিনরাত কাজ করে চলেছে তারই নেতৃত্বে অর্ধ শতাধিক তারুণ্যের উচ্ছল একটি টিম।
বাবা মরহুম সিদ্দিকুর রহমান। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট সাজিদের বেড়ে ওঠা ঢাকায়।
ছাত্রাবস্থা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল হয়ে নটরডেম কলেজ। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে হলেন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছেটা চুলোয় দিয়ে যোগ দিলেন ব্যাংকে। তখনকার এএনজেড গ্রিনলেজ ব্যাংকে। ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে।
দেশে ব্যাংক ব্যবস্থায় আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ে ক্রেডিট কার্ড তথা এটিএম কার্ড চালুর সূচনা উদ্যোগের সঙ্গে জড়িয়ে গেলেন তিনি।
এটিএম, রিটেইল ব্যাংকিং হেড হতে না হতেই বছরখানেক বাদে এএনজেড গ্রিনলেজ ব্যাংক অধিগ্রহণ করে নেয় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। সেটিরও হেড অব ডিরেক্ট ব্যাংকিং হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এক পর্যায়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধান করে ২০০৬ সালে তাকে পাঠানো হয় পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায়। সেখান থেকে কান্ট্রি হেড হিসেবে বদলি হয়ে আসেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায়। বেশ কিছুদিন ব্যাংকিংয়ে থাকার পর মনে হলো ভিন্ন কিছু করার। সাশ্রয়ী ও টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অাধুনিক স্বাস্থ্য সেবা কীভাবে অনগ্রসর মানু্ষদের হাতে পৌঁছে দেওয়া যায়- শুরু হলো সেটা নিয়েই গবেষণা।
এর মধ্যেই ডাক পড়লো নরওয়ের রাজধানী অসলো থেকে। বিশ্বখ্যাত মোবাইলফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিনরের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘টেলিনর হেলথ গ্রুপে’ যোগ দিলেন, চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) হিসেবে।
তার নিবিড় তত্বাবধানেই বাংলাদেশে ‘টেলিনর হেলথ গ্রুপ’র শাখা পুনর্গঠন করা হলো। নতুন উদ্যমে সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে ৫২ জন।
গ্রুপের দায়িত্ব নিয়েই নিজের মেধা ও মননের সমন্বয়ে সাজিদ বের করে আনলেন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন নতুন সেবা।
‘টনিক’ নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে এই সেবা চালু করে তাতে অল্প দিনেই পৌঁছে গেলেন ত্রিশ লাখ গ্রাহকের কাছে।
এতোসব সাফল্যের গল্প নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে বলছিলেন সাজিদ রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্লোগান সবার জন্যে স্বাস্থ্য। বিশ্বমানের স্বাস্থ্য। বাংলা ভাষায় আমরা তথ্য তুলে দিলাম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ মোবাইলফোন সেবাগ্রহীতাদের হাতে। পৌঁছে দিলাম ভালো থাকার স্বাস্থ্য নির্দেশিকা। ’
‘দেশবরেণ্য চিকিৎসকদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া থেকে শুরু করে হটলাইনে চিকিৎসকদের সঙ্গে সরাসরি ২৪ ঘণ্টা কথা বলার সুযোগ করে দিলাম। বেশ সাড়া পেলাম আমরা। ’
‘বিনামূল্যে আমাদের গ্রাহক হওয়ার সুযোগ করে দিলাম মোবাইলফোন সেবাগ্রহীতাদের। আমরা বললাম, দেশের তালিকাভূক্ত হাসপাতালে তিনদিন ভর্তি থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই গ্রাহকের হিসাবে পৌঁছে যাবে এক হাজার টাকা। ’
‘এই প্রয়াস আমাদের খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। এখন আমাদের লক্ষ্য মূল্য সংযোজন সেবার মাধ্যমে বড় পরিসরে স্বাস্থ্য বিমা পৌঁছে দেওয়া। ’
‘আর এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেবো এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে। ’
‘আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ। প্রিয় স্বদেশের কক্সবাজারেই ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। ’
এটা দেশের জ্বালানি খাতের উন্নয়নে অপরিসীম ভূমিকা রাখবে বলেও জানান ব্যাংকিং, তথ্যপ্রযুক্তি আর জ্বালানি নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের এই তরুণ উদ্যোক্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৭
এইচএ/
আরও পড়ুন
** ইন্দোনেশীয় ইউলিয়ানা আর বাংলাদেশি পলাশের প্রেমের আখ্যান!
** ঘামে ভেজা গেঞ্জি থেকেই সাফল্য!
** ইন্দোনেশিয়ায় নেমেই কোটিপতি!
** বাংলার পুকুরেই সাগরের ভেটকি
** প্রবাসে ভবিষ্যত বাংলাদেশ
** ইন্দোনেশিয়ায় অনন্য বাংলাদেশকেই মেলে ধরছেন হুমায়রা
** সন্ধ্যা হতেই বাতি নেভে শাহজালালের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের
**ঢাকা-জাকার্তা অনন্য উচ্চতায়
** ইন্দোনেশিয়া হতে পারে সেরা গন্তব্য
** এবার ইন্দোনেশিয়ার পথে বাংলানিউজের জাহিদ