ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

দেশে-দেশে বাংলাদেশের অর্জনের ফেরিওয়ালা রাকিবুল আমিন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৭
দেশে-দেশে বাংলাদেশের অর্জনের ফেরিওয়ালা রাকিবুল আমিন রাকিবুল আমিন

ব্যাংকক (থাইল্যান্ড থেকে): থাকেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে| কাজ করেন রাজধানী ব্যাংককে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায়। সেখানে বসেই তিনি খবর নেন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত জনপদ গাবুরার।

সাতক্ষীরা অঞ্চলের এই জনপদের মানুষদের জীবনমান উন্নয়ন, প্রকৃতির বিরূপ আচরণের বিপরীতে তাদের টিকে থাকার সংগ্রাম। এসব খোঁজ-খবর রাখা তার কাজের অংশ।

কেবল গাবুরাই নয়। গোটা বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার ১১টি দেশে তার কাজের বিস্তৃতি। পেশার কারেণই মালদ্বীপ থেকে ভিয়েতনাম আর ইন্দোনেশিয়া থেকে পাকিস্তানে ছুটে বেড়াতে হয় তাকে। তবে তার মন পড়ে থাকে বাংলাদেশে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের অর্জন। দুর্যোগ মোকাবেলায় দেশের সুদূরপ্রসারী কর্যক্রম আর সাফল্যের নানা দিকের গল্পগুলো বেশ গর্বের সঙ্গে তিনি বলে বেড়ান দেশে-দেশে। আবার জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সামগ্রিক পদক্ষেপকে দৃষ্টান্ত ধরে অন্যান্য দেশেও ঠিক এভাবেই নানা কর্মসূচির বাস্তবায়ন করছেন তিনি। এভাবেই দেশে-দেশে মেলে ধরছেন ভিন্ন এক বাংলাদেশকে।

সহকর্মীদের সঙ্গে রাকিবুল আমিন
যার কথা এতক্ষণ বলা হলো। তিনি হলেন রাকিবুল আমিন (৪৭)। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) দক্ষিণ এশিয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর। জাতিসংঘ ব্যবস্থার বাইরে বিশ্বজুড়ে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা শীর্ষ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের সদস্য বিভিন্ন রাষ্ট্র ও বেসরকারি সংস্থা।

সদস্যদের ভোটে সংস্থার নির্বাচিত হন প্রেসিডেন্ট। বর্তমান প্রেসিডেন্ট চীন। বাংলাদেশও দু'বার নির্বাচিত হয়েছিলো কাউন্সিলর। বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমি সুন্দরবন।

১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা হিসাবে জাতিসংঘের ইউনেস্কো কমিশন যে ঘোষণা দিয়েছিলো তাতেও অনুঘটকের ভূমিকায় ছিলো –আইইউসিএন। ঢাকাতেই বেড়ে ওঠা রাকিবুল আমিনের। বাবা রুহুল আমিন। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট রাকিবুল আমিন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম‍ৃত্তিকা বিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করে যোগ দেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিটপী’তে। ছাত্রজীবন থেকে কর্মজীবনে প্রবেশ করেই বুঝলেন। প্রচলিত যে শিক্ষা ব্যবস্থা তা থেকে কর্মজীবনে বাস্তবতার ব্যবধান আকাশ-পাতাল।

রাকিবুল আমিন বলেন, আমার আজকের যে অবস্থান তার গোড়াপত্তন বা ভিত্তিই এই ‘বিটপী’। আর তার কর্ণধার রেজা আলী ভাই। ফেলে আসা প্রতিষ্ঠানের প্রতি এভাবেই কৃতজ্ঞতা জানালেন তিনি।

‘এখানে প্রায় আট মাস কাজ করার পর মনে হলো- এটা তো আমার বিষয় না। পড়েছি ম‍ৃত্তিকা বিজ্ঞানে। অথচ চাকরি করছি বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। তাই আগের চেয়ে কম বেতনে যোগ দিলাম নর্থসাউথ ইউনির্ভাসিটিতে টিচি অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে’- যোগ করেন তিনি।

কিছুদিন তিনি বৃটিশ সরকারের শিভনিং স্কলারশিপ নিয়ে গেলেন যুক্তরাজ্যে। ইম্পিরিয়াল কলেজে পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার জন্য। সেখান থেকে ফিরে সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে যোগ দিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ঢাকা অফিসে।

কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টটেটিভ তখন পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত। অফিসে কাজের শেষে আমাদের এমনভাবে সবকিছু বোঝাতেন। যেন নতুন করে আবার ক্লাস করছি। শুরু হলো পরিবেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে মন্ত্রণালয় এবং এনজিওগুলোর সঙ্গে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করা। এভাবেই সংস্থাটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার থেকে হয়ে গেলেন প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর।

বাংলাদেশে দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা হবার সুবাদে বিভিন্ন দেশে যাওয়া আসা শুরু হলো তার। গবেষক, বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞ ছাড়াও অভিজ্ঞ জনদের সঙ্গে নানা আলাপ-আলোচনায় বাড়তে থাকলো জ্ঞানের বিস্তার।

২০০৯ সালে শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোতে সংস্থাটির একটি কর্মসূচির প্রধান করে পাঠানো হলো রাকিবুল আমিনকে। পরে ২০১১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর হিসেবে তাকে পদায়ন করা হয় সংস্থাটির এশীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ে। সে সময় থেকেই থাইল্যান্ডে বসবাস তার। বর্তমানে কাজ করছেন ম্যানগ্রোভ ফর দ্য ফিউচার প্রকল্প নিয়ে।

রাকিবুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, অতীতে ঝড়, ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাসের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বাইরের মানুষ চিনতো। এখন চেনে অন্যভাবে। নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিস্ময়কর অগ্রগতি- বিশেষ করে দ‍ুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের মানুষের অর্জন বিশ্বে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রাকৃতিক দ‍ুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করেই টিকে থাকা যায়-জয়ী হওয়া যায় বলে মত দেন তিনি।

এক উদাহরণ টেনে রাকিবুল আমিন বললেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ছোট ইউনিয়ন গাবুরা। জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় প্রায় দু’বছর সেখানকার একটি এলাকার মানুষের জীবন যাপন ছিলো দুর্বিষহ। পরবর্তীতে বনায়ন করার মধ্যদিয়ে আমরা প্রাকৃতিক দ‍ুর্যোগ মোকাবেলা করতে পেরেছিলাম।

এক অনুষ্ঠানে ব্ক্তব্যকালে রাকিবুল আমিনতিনি বলেন, আমাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে যদি ১০টি ভালো কাজের উদাহরণ থাকে। তার ছয়টিই থাকে পরিবেশ ও দ‍ুর্যোগ নিয়ে সচেতনতা নিয়ে। প্রতিটি সরকারই এ বিষয়ে যথেষ্ঠ সচেতন। ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান অব একশন (নাপা) ও বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটিজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যানের মতো অনেক কর্মসূচি নিয়ে কাজ হচ্ছে।

জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আমরা দেখেছি, যে মানুষ যতবেশী গরিব। তাদের বসবাসই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা চেষ্টা করছি তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানোর। ব্যক্তিগত ও আর্থিক সক্ষমতার পাশাপাশি তাদের নিয়ে আসছি সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে। দ‍ুর্যোগ প্রবণ অঞ্চলের মানুষদের আমরা বোঝাই, আপনার জীবনের জন্যে পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম- বলেন তিনি।

রাকিবুল আমিনের সঙ্গে সমাপনী কথাগুলো আশা জাগানিয়া আর উৎসাহব্যাঞ্জক মনে হলো। তার ভাষ্যমতে, আসলে আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে আপনি কি চাইছেন। হ্যাঁ মানছি, জীবনে চলতে গেলে টাকার প্রয়োজন আছে। তবে টাকা বা মর্যাদার পেছনে ছুটলে স্বপ্ন ধরা দেবে না। আপনি যে কাজটা করতে চান। ভালোভাবে, নিষ্ঠার সঙ্গে করুন, সাফল্য আসতে বাধ্য।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৭
টিআই

আরও পড়ুন
** দেশে-দেশে বাংলাদেশের অর্জনের ফেরিওয়ালা রাকিবুল আমিন
** অন অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধের শঙ্কা
** তথ্যপ্রযুক্তিতে সুস্থ রাখার এক ফেরিওয়ালা সাজিদ রহমান
** ইন্দোনেশীয় ইউলিয়ানা আর বাংলাদেশি পলাশের প্রেমের আখ্যান!​
** ঘামে ভেজা গেঞ্জি থেকেই সাফল্য!

** ইন্দোনেশিয়ায় নেমেই কোটিপতি!​
** বাংলার পুকুরেই সাগরের ভেটকি
** প্রবাসে ভবিষ্যত বাংলাদেশ
** ইন্দোনেশিয়ায় অনন্য বাংলাদেশকেই মেলে ধরছেন হুমায়রা 
** সন্ধ্যা হতেই বাতি নেভে শাহজালালের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের
** ঢাকা-জাকার্তা অনন্য উচ্চতায়
** ইন্দোনেশিয়া হতে পারে সেরা গন্তব্য
** এবার ইন্দোনেশিয়ার পথে বাংলানিউজের জাহিদ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।