সিঙ্গাপুরের ফুটবল ক্লাবে মাইগ্র্যান্ট ফুটবল ফেস্ট শেষে গেলাম কয়েকজন দেশি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। কাছেই একটি ভবনে কয়েকজন মিলে একটি রুম ভাড়া করে থাকেন।
‘পত্রিকাগুলোকে বিজ্ঞাপন ভিক্ষা করতে হচ্ছে’
প্রায় ২১ বছর ধরে সিঙ্গাপুরে রয়েছেন তিনি। এখানকার নাড়ি নক্ষত্র মুখস্থ। বলেন, এটা নিরাপদ দেশ। এখানে কাজ করেও ভাল লাগে। তবে সব কিছু মিলিয়ে দেশে ফিরতে চাই। অনেক বছর তো এখানে কাটালাম। পরিবারের জন্য রাজধানীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের একটি জায়গা কেনার কথা ভাবছি।
রোববারের অলস দুপুরে সকলেই বসে বসে ২ কার্ডের খেলায় মেতেছিলেন। এর মধ্যেই কথা হলো। এখানকার সবাই অনেক বছর ধরেই রয়েছেন সিঙ্গাপুরে, আর্থিকভাবেও স্বচ্ছল মোটামুটি। তবে সকলেই আবারো দেশে ফিরতে চান।
টাঙ্গাইলের মিনহাজ এখানে এসেছেন পঁচানব্বই সালে। এখন একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে সুপারভাইজরের কাজ করছেন। ৪৯ বছর বয়সী এই প্রবাসী বলেন, এখানে কাজের নিরাপত্তা রয়েছে। তাই সিঙ্গাপুরে থেকে গেছি। তবে সারাজীবন তো আর থাকবো না। এক সময় ফিরতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা যে কাজ এখানে শিখেছি, তা বাংলাদেশে কাজে লাগাতে পারবো না। আর এই বেতনও পাওয়া যাবে না। তাই দেশে ফিরে আর কাজের আশা নেই। চাই ব্যবসা করতে। কিন্তু দেশে ব্যাবসার পরিবেশ নেই।
কেন পরিবেশ নেই? জানতে চাইলে উত্তর দেন রবিউল। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার রবিউল ইসলামের বয়স ৪। ১৯৯৯ সালে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে যোগ দেন সিঙ্গাপুরে। তিনি বলেন, যে কোন ব্যবসার জন্যে নিরাপত্তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা শারীরিক নয়, বরং বিনিয়োগের নিরাপত্তা। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সরবরাহের নিশ্চয়তা। এগুলো যে কোন ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ময়মনসিংহের মুশফিকুর রহমানের বয়স ৩৪। ২০০৮ সাল থেকে এখানে তিনি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অনেক টাকা পাঠাই দেশে। কিন্তু তার ব্যবহার হয় না বিনিয়োগে। আসলে নিজে না থাকলে ব্যাবসা করা যায় না। আবার অনেক বছর পর দেশে ফিরলে আশপাশের মানুষই জীবনকে কঠিন করে তোলেন। সমাজ আমাদের দেশে গ্রহণ করতে চায় না।
এই প্রবাসীদের অনেকেরই অভিযোগ, দেশে বিভিন্ন সময় পোল্ট্রি বা চাষে তারা বিনিয়োগ করলেও সফল হতে পারেননি। কারণ হিসেবে তারা বিদ্যুতের ঘাটতি এবং সামাজিক নিরাপত্তার ঘাটতির কথা উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৭
এমএন/জেডএম