হোটেলের সামনের সড়কটির নাম বেলিশি। সড়কটি একটি প্রশস্ত রাস্তা দিয়ে সরাসরি পার হয়ে গেছে।
একটু এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো রাস্তা সংস্কারের কর্মযজ্ঞ। রাস্তাটির পূর্বদিকের লেনে ক্রাইম সিনের মতো হলুদ ফিতা দিয়ে অস্থায়ী ব্যারিকেড দিয়ে সংস্কার কাজ চলছে। এই লেনটি বন্ধ করে পশ্চিম পার্শ্বের লেনে অস্থায়ী রোড ডিভাইডার দিয়ে দু’দিকের যানবাহনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
চোখে পড়লো বড়সড়ো তিনটি গাড়ি। সামনের গাড়িটি রাস্তার সিলকোট কেটে কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে পেছনের ট্রলিতে তুলে দিচ্ছে। পেছনে থাকা গাড়িটি সঙ্গে সঙ্গে পিচ মাখানো পাথর ফেলে সমান করে দিচ্ছে। তৃতীয় গাড়িটি (রোড সুইপার) ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিস্কার করে দিচ্ছে।
কৌতুহলবশত পরদিন সকালেও এই রাস্তাটি ধরেই হেঁটেছিলাম। রাতে যে রাস্তাটির সংস্কার হয়েছে তা অনুমান করার কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ রাতারাতি যা পেরেছে সেটুকু কেটে সংস্কার করে গেছে। যদিও বেইজিং, এবং সাংহাইয়ে কোথাও কোনো রাস্তায় খানাখন্দ চোখে পড়েনি।
এই রাস্তাটি ধরেই হেঁটেছিলাম আরও খানিকটা পথ। এই রাস্তাটির পাশেই একটি ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। চারদিক দিয়ে স্টিলের ব্যারিয়ার বসানো। বড়সড়ো একটি গেট। সেই গেট দিয়ে উঁকি দিয়ে যা দেখলাম তা নিজের চোখে বিশ্বাস করা কঠিন ছিলো।
তখন একটি ট্রাক সেখান থেকে মালবোঝাই করে বের হচ্ছিল। আর সেই ট্রাকটির চাকা মেশিন দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছিল, যাতে চাকায় লেগে থাকা ময়লায় পথঘাট নোংরা না হয়ে যায়।
আর বাংলাদেশে কি হচ্ছে। কোথাও নির্মাণকাজ শুরু হলে সেই এলাকা দিয়ে চলাচল করা তো দূরের কথা আশাপাশের বাসিন্দারের ত্রাহি অবস্থা হয়ে যায়। রাস্তা খুঁড়ে তুলে রাখা মাটি মাসের পর মাস পড়ে থাকে। রোদ-বাতাসে ধুলা শহরময় ছড়িয়ে পড়ে। আবার বৃষ্টির পানি মিশে গেলে তাকে ঠেকানোর উপায় থাকে না।
কাদা মাড়িয়ে যানবাহনগুলো ছুটে যাচ্ছে রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। সেই কাদায় একাকার হচ্ছে বড় সড়ক থেকে গলির রাস্তাও। অর্থাৎ এক জায়গার ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ছে পুরো শহরে। ঢাকা শহরের আকাশে কি পরিমাণ ধুলিকণা উড়ে তার কিছুটা ধারণা পাওয়া যায় ফ্লাইওভারের দিকে তাকালে।
কুড়িল ফ্লাইওভারের ধুলিকণা জমতে জমতে কয়েক ইঞ্চি পুরু হয়েছে। সেই ধুলার আস্তরণে জন্মেছে নানা রকম আগাছা। অন্য সড়কে না হয় লোকজন ধুলোবালি ঝাড়ু দিয়ে ফেলে দেয়, এখানে যানবাহনের চাকা অথবা বাতাসের সঙ্গে যাওয়া ছাড়া তো তার কোনই সুযোগ নেই।
যাত্রাবাড়ীতে যখন ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়, আবার মৌচাকে যখন ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়, তখন দেখেছিলাম ঠিকাদারদের স্বেচ্ছাচারিতা। তারা পাইলিংয়ের জন্য মাটি খুঁড়ে উপরে স্তুপ করেছিলো। পরে তা বাতাস–বৃষ্টির পানি মিশে গেছে। ঠিকাদার সেগুলো সরানোর কোনো প্রয়োজন মনে করেনি।
তিনমাস আগে রূপনগর আবাসিক এলাকায় ড্রেনের কাজ শুরু করেছে। রাস্তা কেটে যে মাটি উপরে স্তুপ করে রেখেছে পাইপ বসানো শেষ হলেও সেই মাটি আজও সরানো হয়নি। বৃষ্টির পানিতে হচ্ছে একাকার, আবার রোদে শুকিয়ে বাতাসের সঙ্গে ক্ষয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছে, তারা জানালা খুলতে পারে না ধুলার জন্য।
শুধু কি রূপনগর, মিরপুর স্টেডিয়ামের বিপরীতে অনেকগুলো গলির রাস্তা কেটে মাটি তুলে রাখা হয়েছে কয়েকমাস ধরে। গাড়ি নিয়ে চলাচল করা থাকলো দূরের কথা পায়ে হেঁটেও চলাচল করা যায় না। এমন দৃষ্টান্ত রাজধানীতে অহরহ খুঁজে পাওয়া যাবে। রাস্তায় ধুলা-ময়লার কারণে একটি কাপড় আবার না ধুয়ে দ্বিতীয় দিনে গায়ে দেওয়া যায় না। অথচ চীন-থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া, রাশিয়া ঘুরে পরদিনই কাপড় ধোয়ার কোনই প্রয়োজনীয়তা বোধ করিনি।
সিটি করপোরেশন অন্যদের দোষারোপ করে। কিন্তু নিজেও রাস্তা কেটে মাটি স্তুপ করে রাখছে। আর সেই ধুলাবালি শহরময় ছড়িয়ে পড়ছে। সিটি করপোরেশনের এমন উদ্ভট কার্যক্রম দেখে লোকজন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অথচ অনেকে গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটির স্বপ্ন দেখান নাগরিকদের। অথচ তাদের একটি উন্নয়নের জন্য ধুলো শহরময় হয়ে যাচ্ছে। এটি দেখার কেউ নেই।
সময় এসেছে চোখ খোলার। ধুলিকণার পেছনে না ছুটে চীনের মতো উৎস বন্ধ করতে হবে। না হলে স্বপ্ন এক সময় স্বপ্ন.... পরিণত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৮
এসআই/আরআর