ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

অছাত্ররাও স্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায়

তামিম মজিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৮
অছাত্ররাও স্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশি। ছবি: বাংলানিউজ

কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া) থেকে: শরীয়তপুরের বাসিন্দা মো. ফিরোজ আলম। লেখাপড়ার গণ্ডি মাধ্যমিক না পেরুলেও মালয়েশিয়ায় এসেছেন স্টুডেন্ট ভিসায়। কিন্তু কোন ক্লাসে পড়তে এসেছেন তাও জানেন না এই তরুণ। দালালের মাধ্যমে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় চুক্তি করে বছর দুয়েক আগে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় আসেন। শুধু ফিরোজ নয়, এমন বহু লোক এসেছেন মালয়েশিয়ায়। এসব অছাত্র কলেজে কখনোই যান না, ফলে আসার পরে অবৈধ হয়ে যান।

প্রবাসী কমিউনিটি নেতারা বলছেন, এ কারণেই বাংলাদেশিদের প্রতি বিরূপ মনোভাব বাড়ছে মালয়েশিয়ানদের। তেমনি ভবিষ্যতে ছাত্র ভিসার পথও রুদ্ধ হচ্ছে।

 

দালালদের মাধ্যমে স্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় এসেছেন যশোরের আবুল খায়ের। যিনি ইংরেজিতে স্কুল বানানও জানেন না। কিন্তু কিভাবে স্টুডেন্ট ভিসায় এসেছেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ভাই এতো কিছু জানি না। আমাকে এনে দেবে বলছে, তাই এসেছি।  

জানা গেছে, ভ্রমণ ভিসায় এসেও একই কাজ করছেন অন্য বাংলাদেশিরা। এমনই একজন হচ্ছেন শরীয়তপুরের মো. ফারুক উদ্দিন। দেশটির রাজধানী থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরের একটি শহরে থাকেন ফারুক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকার এক দালাল ৩ লাখ টাকার চুক্তি করে মালয়েশিয়ায় নিয়ে আসে। পরে চুক্তি অনুযায়ী টাকাও দেন।  

তিনি আরও জানান, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ করতে মাইজি ও বিএম  প্রকল্প চালু  করেমালয়েশিয়ার সরকার। সেই সুযোগে তিনিও আবেদন করেন। প্রায় ৫ হাজার মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত দিয়ে ২০১৭ সালে এক বাঙালি এজেন্টের মাধ্যমে আবেদন করেন। কিন্তু এখনো ভিসার ব্যাপারে কিছু জানেন না। এজেন্টও টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে, ফলে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে এই প্রবাসীর। ফারুকের মতো এরকম বহু প্রবাসী বাংলাদেশি প্রতারণার শিকার হয়েছেন, কিন্তু এ ব্যাপারে নির্বাক দূতাবাসও।  

প্রবাসীরা বলছেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাজ করা উচিত। নইলে ভবিষ্যতে প্রকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার পথও বন্ধ হয়ে যাবে। তারা বলছেন, এমনিতেই মালয়দের কাছে বাঙালিরা এক আতঙ্কের নাম। অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করে বৈধভাবে দক্ষ ও শিক্ষিত জনশক্তি পাঠালে প্রবাসী আয় যেমন বাড়বে, তেমনই সুনামও বাড়বে।  

মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সানাউল্লাহ সানী বাংলানিউজকে বলছিলেন, একটা সময় ছিল, যখন মালয়রা বাংলাদেশিদের খুব ভালোবাসতো। বাঙালিদের পরিশ্রমী জাতি হিসেবে খুবই প্রশংসা করতো, কিন্তু এখন বাঙালি মানেই মালয়দের কাছে ঘৃণিত নাম। কারণ হচ্ছে, এদেশে অনেক অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ছে তারা। নিয়ম না মানায় মালয় পুলিশের কাছে প্রতিনিয়ত হেনস্তার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশিরা। বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও পুলিশ হয়রানি করে।

এটা বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক নীতির ব্যর্থতাও বলেও মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী।  

মালয়েশিয়া প্রবাসী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুর রব মনে করেন, এখনই যদি এসব বন্ধ করা না যায়, তাহলে কয়েক বছরের মধ্যে মালয়েশিয়ার স্টুডেন্ট ভিসার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।

তিনি বলেন, এখানে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের বেশ সুনাম। কারণ ভারত থেকে কখনোই কোনো অছাত্র আসে না। ফলে পড়াশোনা শেষ করার পর ভারতীয়রা ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি পায়। কিন্তু বাংলাদেশিদের অবস্থান ঠিক বিপরীত। কারণ আমাদের সরকার প্রবাসীদের বিষয়ে উদাসীন।  

বাংলাদেশ সময় : ০৬৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৮
টিএম/এপি/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।