বাংলাদেশের মতো পর্তুগালেও দেখা মিলে ইফতারের বাজার। দেশটির রাজধানী লিসবনের বেনফরমসো নামে একটি এলাকায় রয়েছে বাংলাদেশি অনেক দোকান ও রেস্টুরেন্ট।
বেনফরমসো গলিটি দিয়ে হাঁটার সময় চোখে পড়বে বাংলায় লেখা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, জেনারেল স্টোর, রেস্টুরেন্টসহ রকমারি দোকান ও নানা ধরনের পসরার সমাহার।
পর্তুগালে অফিস ছুটির পর থেকেই বেনফরমসো এলাকায় দোকান-পাটগুলোয় বাঙালিদের হাট বসে। নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটায় বের হন বাঙালি নারী-পুরুষরা। যে কারণে হাঁটতে-চলতে-ফিরতে সাদা বর্ণের পর্তুগিজদের পাশাপাশি চোখে পড়বে অনেক বাঙালি।
তবে এখন যেহেতু রমজান মাস, তাই বিকেল গড়াতেই অনেকে ভিড় জমাচ্ছেন রেস্টুরেন্টগুলোয়। যার যা প্রয়োজন, কিনে নিচ্ছেন। কেউ ফলের দোকানে খেজুর, কলা, তরমুজ, আপেল, আঙুর আর কমলা কেনায় ব্যস্ত। কেউবা আবার বাংলাদেশের চিরায়ত ইফতারি আইটেম ভাজা-ভুনা কিনতে রেস্তোরাঁয়।
বাংলাদেশে রাত ৮টা মানে রীতিমতো ঘুটঘুটে অন্ধকার। বেশ রাত। কিন্তু লিসবনে ৮টা মানে সন্ধ্যা। কারণ এখানে সূর্য অস্ত যায় অনেক দেরিতে, স্থানীয় সময় রাত ৮টা নাগাদ। ইফতার স্থানীয় সময় ৮টা ০৫ মিনিটের দিকে। তাই স্থানীয় সময় বিকেল ৩টার পর থেকে শুরু হয় ইফতার কেনাবেচার ধুম।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ইফতারি ছোলা, পেঁয়াজু, আলুর চপ, সমুচা, মুরগির গ্রিল আর জিলাপি সবই মিলছে বাঙালি অধ্যুষিত বেনফরমসোর রেস্টুরেন্টগুলোয়। বাংলায় দোকান-পাটের নাম, সাইনবোর্ডও চোখে পড়বে। সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো বিষয় হচ্ছে, রেস্টুরেন্টগুলোয় ঠিক বাংলাদেশের সব হোটেল, রেস্টুরেন্টের মতো। আবার ইফতারি-সেহরির খাবার এবং ‘টেক অ্যাওয়ে’র ব্যবস্থাও আছে।
ইফতারের প্লেট এবং সেহরির ফিক্সড মেন্যু সেট করে মূল্যও দেওয়া আছে। থরে থরে সাজানো ইফতার সামগ্রীর পাশে ইংরেজিতে লেখা ‘রামাদান মোবারক’। নিচেই পরিষ্কার বাংলায় লেখা, ‘স্পেশাল ইফতার’।
আবার ‘মাতৃভাণ্ডার’ নামে রেস্টুরেন্টে চোখে পড়ল ইংরেজিতে লেখা ‘রামাদানুল কারিম’। দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ইফতারসামগ্রী। এর মধ্যে পর্তুগিজ ক্রেতাও চোখে পড়ল। তারা রেস্টুরেন্টে বসেই ছোলা ভুনা খাচ্ছেন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই আসছেন অফিস থেকে ফেরার পথে বাড়িতে ইফতারের জন্য আইটেম কিনে নিতে।
তবে বেনফরমসো এলাকা ঘুরে বিকেল থেকে ইফতারের আগের সময়ে একজন বাঙালিকেও প্রকাশ্যে পানাহার করতে দেখা গেল না। বেনফরমসোর দোকানদার জামাল, এনামুল প্রমুখদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এখানে প্রবাসী বাঙালি আর স্থায়ী বাংলাদেশিদের মূল অংশ রোজাদার। এবং তারা ১৯ ঘণ্টা প্রায় (রাত আড়াইটা থেকে পরদিন রাত ৮টার বেশি) সময় অভুক্ত থাকেন এবং নিজ নিজ কাজও করেন।
এদিকে, গত বছর দেশটিতে লকডাউনের মধ্যে বিধিনিষেধ মেনে মসজিদগুলোতে তারাবি নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ বছর করোনার লকডাউন ও বিধিনিষেধ না থাকায় প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। নামাজ শেষে মুসল্লিদের খোশগল্প করতে করতে বাসায় ফিরতেও দেখা গেছে। লকডাউন ও বিধিনিষেধ না থাকার কারণে এবার বেশ বড়সর ভাবেই রেস্টুরেন্টে ইফতার পার্টি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সবগুলো রেস্টুরেন্টে ইফতার মাহফিলের জন্য বুকিং নিচ্ছেন অনেকে। প্রতি বছরের মতো এবারও রমজান উপলক্ষে দেশটিতে বসবাসরত মুসলমানদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও কস্তা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২২
এসআরএস