ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

লেবাননের শরণার্থী শিবিরের রোজাদারদের হালচাল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১২ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৭
লেবাননের শরণার্থী শিবিরের রোজাদারদের হালচাল লেবাননের ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু শিবিরের মুসলিম শরণার্থীরা পবিত্র রমজান মাস অতিবাহিত করছেন সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশায়

লেবাননের ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু শিবিরের মুসলিম শরণার্থীরা পবিত্র রমজান মাস অতিবাহিত করছেন সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশায়।

এ সব শরণার্থী শিবিরে প্রয়োজনের তুলনায় খাদ্য সামগ্রী একেবারেই অপ্রতুল। য‍ৎসামান্য যা পাওয়া যায়, তার দাম অনেক বেশি।

আর তা কেনার সামর্থ্য নেই অনেকেরই। তাই নিরবে-নিভৃতে, অনাহারে-অর্ধাহারে অতিবাহিত হচ্ছে শরণার্থী শিবিরের মুসলিমদের রমজান।

শরণার্থীরা ইফতার-সাহরির প্রচণ্ড সংকটে অনেকেই ঘাস সিদ্ধ করে খান। চলে ডাস্টবিনের ফেলে দেওয়া খাদ্য সংগ্রহের প্রতিযোগিতা। রমজানে শরণার্থীদের এ এক করুণ বাস্তবতা।

অধিকাংশ পরিবারই চরম অর্থনৈতিক দুর্দশার শিকার। খাদ্যদ্রব্য পাওয়া গেলেও অর্থের অভাবে কিনতে পারেন না অধিকাংশ পরিবার।

এ সব শিবিরে রমজানকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী আরব মিষ্টি দোকান চালু হয়েছে। তবে দু’একটি পরিবার হয়ত অবুঝ সন্তানদের হাতে দু’একটি আরব রুটি কিংবা মিষ্টি কিনে দিতে পেরে নিজেকে বেশ সৌভাগ্যবান মনে করেন।

রমজানের সময় সারা শিবিরজুড়ে কাতায়েফ নামে এক বিশেষ খাবার পাওয়া যায়
রমজানের সময় সারা শিবিরজুড়ে কাতায়েফ নামে এক বিশেষ খাবার পাওয়া যায়। যা আসলে ছোট্ট এক ধরনের প্যানকেক বা পিঠা। নানা ধরনের মিষ্টি জাতীয় উপাদান ভরে এটি ভাজা হয়।

শরণার্থীরাই এসব রুটি বানান ও বিক্রি করেন। কারণ এই রুটিটি প্রথমত আরব ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। দ্বিতীয়ত এটি রমজান মাসে সবচেয়ে সূলভ মূল্যে পাওয়া যায়। খেতে বেশ সুস্বাদু। আর শিবিরের লোকদের মাঝেও রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা।  

কাতায়েফ তৈরি হয় নানা উপকরণ দিয়ে। ময়দা, চিনি, গুঁড়া দুধ ইত্যাদি উপকরণগুলোকে এক সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই রুটি। কাতায়েফগুলো দেখতে চন্দ্রাকার। এগুলো ভাজা হয় নরম পনির দিয়ে অথবা এর মধ্যে বাদাম, দারুচিনি এবং চিনি মিশিয়ে। এক ধরনের চিনির সসে এগুলোকে পরিবেশন করা হয়ে থাকে।  

কাতায়েফ অথবা স্থানীয় আঞ্চলিক আরবিতে যাকে আতাইফ বলে উচ্চারণ করা হয়, এমন এক খাবার যাকে পবিত্র রমজান মাসে স্বাগত জানানো হয়। যদিও এগুলো আরব দেশে নতুন কিছু নয়, তারপরও শরণার্থীদের জন্য কাতায়েফ একমাত্র সূলভ মূল্যে পাওয়া খাদ্য।

মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ এলাকায় ময়দার তৈরি এই পিঠা বা প্যানকেক পাওয়া যায়। একেবারে তৈরি করা অবস্থায় যে কোনো বেকারিতেও কিনতে পাওয়া যায়। আবার মাগরিবের সময় ফুটপাতের বিক্রেতাদের কাছ থেকেও কিনতে পাওয়া যায়।  

রমজান মাসে শিবিরের রাস্তা এবং রাস্তার ধারের চুলোগুলো সব বড় বড় দোকানে পরিণত হয়। সর্বত্রই কাতায়েফ বিক্রেতারা ছড়িযে পড়ে।  এ ছাড়াও ক্যাম্পে মুশাব্বাক হালুয়া ও আওয়্যামা হালুয়া বিক্রি হয়। যা সব সময়ে জনপ্রিয়। রমজানে এসব খাবারের পরিমাণ বাড়ে। কারণ এসবের দাম কম হওয়ার কারণে দরিদ্র পরিবারের নাগালের মধ্যে থাকে।  

সব মিলিয়ে বলা চলে, খুব একটা ভালো নেই লেবাননের শরণার্থী শিবিরের মুসলমানরা। তার পরও তারা রমজানের রোজা পালন করছেন। আর অপেক্ষার প্রহর গুনছেন, কবে তারা ফিরে যাবেন মাতৃভূমিতে।  

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।