ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘সিয়াম পাপের পথে প্রচণ্ড বাধা সৃষ্টি করে’

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
‘সিয়াম পাপের পথে প্রচণ্ড বাধা সৃষ্টি করে’ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, খতিব, বড় জামে মসজিদ, ফেনী

ফেনী: সিয়াম সাধনায় ব্যক্তির মনে আল্লাহর ভয় জন্মে। আর কারও মনে একবার আল্লাহর ভয় জন্মালে মানুষ সৎস্বভাবের অধিকারী হয়ে যায়।

সিয়াম সাধনার ফলে লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ধন-সম্পদের স্পৃহা, যশ, মিথ্যা, অন্যায়-অত্যাচার, অবিচার, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, সমাজ ও রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপসহ সব ধরনের মানবীয় দুর্বলতা দূরীভূত হয়।

সিয়ামের বদৌলতে মানুষের অন্তরে রহমতের ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়।

তখন আল্লাহতায়ালার পক্ষ হতে সিয়াম পালনকারীদের মধ্যে লজ্জাশীলতা, আত্মসংযম, সত্যবাদিতা ও মানবপ্রেমসহ অসংখ্য সৎগুণাবলী সতেজ হয়।

বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে রমজানের ফজিলত ও তাৎপর্য নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ফেনীর প্রধান মসজিদ বড় জামে মসজিদের খতিব মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামি আইনে উদারতা ও সম্প্রীতির ওপর এমফিল গবেষণারত এ আলেম মসজিদটিতে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে।  

বাংলানিউজের সঙ্গে তার আলাপচারিতায় উঠে আসে রমজানের নানা বিষয়।

খতিব মাওলানা সাইফুল্লাহ বলেন, রমজানের সিয়ামের উদ্দেশ্য হচ্ছে- মুমিনের জীবন থেকে পাপ দূরীভূত করে তাকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন করা। মুমিনের গোনাহ মাফ করার ব্যবস্থা করা। সিয়াম পাপের পথে প্রচন্ড বাধা সৃষ্টি করে। যে কোনো রোজাদার ব্যক্তি পাপের পথ থেকে সহজে দূরে থাকতে পারেন। এ জন্য রোজাকে হাদিস শরিফে ঢাল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

সিয়াম পালনের মাধ্যমে আত্মার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, যার মধ্যে সংযম অবলম্বনের শক্তি নেই, তার মধ্যে কোনো বলিষ্ঠ ব্যক্তিবোধ সৃষ্টি হতে পারে না। ব্যক্তিত্বের যথার্থ বিকাশের জন্য নিজের প্রবৃত্তি ও আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে সম্মত হতে হবে। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একজন মানুষের মধ্যে সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের গুণাবলী সৃষ্টি হয়। একজন মানুষের জীবনের সার্বিক সফলতা ও বিভিন্ন মানবিক গুণাবলী বিকাশের জন্য সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণ একান্ত প্রয়োজন। ব্যক্তিত্ব গঠনেও সংযমের গুরুত্ব অপরিসীম।

সিয়াম শারীরিক সুস্থতায় বেশ ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নৈতিক, আধ্যাত্মিক, ঈমানি গুণাবলী সৃষ্টি করা হলো- সিয়ামের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এ সব গুণাবলী অর্জনের পাশাপাশি পার্শ্ব ফায়দা হিসেবে দৈহিক কল্যাণের বিষয়টিও একেবারে উপেক্ষা করা যায় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, শরীরের পরিপাকযন্ত্রের মাঝে-মধ্যে বিশ্রাম প্রয়োজন। অব্যাহত ভোগ শরীরকে ক্লান্ত ও একঘেয়ে করে দেয়। তাই মাঝে-মধ্যে উপবাস স্বাস্থ্যের জন্য হিতকর। তা ছাড়া দেহকে ক্ষুৎপিপাসার মোকাবেলায় কার্যক্ষম ও সচল রাখারও অনুশীলন প্রয়োজন। মনের মধ্যে ক্ষুৎপিপাসা সহ্য করার শক্তি ও আত্মবিশ্বাস একজন সংগ্রামী মানুষের জীবনে একান্ত অপরিহার্য। রমজানের রোজা পালন মানুষকে এটা শিক্ষা দেয়।  

তিনি বলেন, পূণ্যময় জীবনযাপনের অনুকুল পরিবেশ তৈরি হয় রমজানে। সহানুভুতি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ সৃষ্টি করে সিয়াম। রমজানে মানুষ পুণ্যের দিকে ধাবিত হওয়ার পরিবেশ পায়। পাপ থেকে দূরে থাকার শক্তি পায়। সর্বত্র যেন এক শান্ত, পূত-পবিত্র পরিবেশ বিরাজ করে। গোটা পরিবেশ যেন পূণ্যের আবেশে আবিষ্ট হয়ে উঠে। গোটা মাসটি যেন রহমতের ফল্গুধারায় অভিষিক্ত হয়ে উঠে।

এ দিকে লক্ষ্য করেই মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় অন্য বর্ণনায় রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। ’

এ আলেম আরও বলেন, মাহে রমজানের সিয়াম একটি সমষ্টিগত ইবাদত। এ মাসটি আসা মাত্র সারা দুনিয়ার মুসলমানদের মধ্যে এক অনাবিল প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয়। এমন এক আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়- যাতে সিয়াম সাধনা সবার জন্য অনায়াসসাধ্য ও সহজবোধ হয়। মুমিনের মন আপনা থেকেই বিগলিত হয়ে ওঠে। প্রতিযোগিতা শুরু হয় ইবাদত-বন্দেগি, দান-খায়রাত, পারস্পরিক সহানুভুতি ও সহযোগিতায় কে কার অগ্রগামী হবে তার জন্য। এভাবে সিয়ামের প্রভাব আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রভাব ফেলে।

অালাপচারিতার শেষ প্রান্তে এসে তিনি বলেন, মাহে রমজানের সিয়াম বয়ে আনতে পারে আমাদের জীবনে অপরসীম কল্যাণ। সিয়ামের উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারলে আমাদের জীবন হয়ে উঠবে সুন্দর। পানাহার থেকে বিরত থাকার সঙ্গে সঙ্গে ‍যাবতীয় মিথ্যা, অন্যায়, শোষণ, জুলুম ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলে সিয়াম আমাদের জীবনে ফলপ্রসূ হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
এসএইচডি/এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।