নারায়ণগঞ্জ: জ্বালানি সংকটের ফলে নারায়ণগঞ্জের শিল্প কারখানাগুলোতে তৈরি হওয়া সংকটের খবর বছরজুড়েই গণমাধ্যমের শিরোনামে ছিল।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে তিতাস গ্যাস অ্যান্ড ট্রান্সমিশন কোম্পানির গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা গেছে বছরে মাঝামাঝি।
এ বছর নারায়ণগঞ্জের শহর ও উপজেলাগুলোতে অতিরিক্ত মাত্রায় লোডশেডিং দেখা গেছে। সহসায় এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না বলে জানান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) কর্মকর্তারা। বিভিন্ন এলাকায় এক-দুই ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং হতে দেখা গেছে। নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চল হওয়াতে বিদ্যুৎ স্বাভাবিক না থাকায় শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়। এতে বিপাকে পড়েছেন শিল্প কারখানার মালিকরা। দ্রুত এ অবস্থা স্বাভাবিক না হলে অনেক কারখানা নির্ধারিত সময়ে শিফমেন্ট পাঠাতে পারবে না বলে আশঙ্কা করেন তারা।
গ্যাস সংকটের কারণে সারাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়। জনগণের ভোগান্তি কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলাকাভিত্তিক শিডিউল মোতাবেক লোডশেডিংয়ের উদ্যোগ নেন। তবে নারায়ণগঞ্জে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সেই শিডিউল সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না দাবি করেন জনসাধারণ। একদিকে জনগণের ভোগান্তি অন্যদিকে অনিয়ন্ত্রিত লোডশেডিংয়ের কারণে নিটওয়্যার শিল্পও ঝুঁকির সম্মুখীন হয়।
তবে ডিপিডিসি কর্মকর্তারা বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, লোডশেডিং পূর্ব নির্ধারিত শিডিউল মেনেই হচ্ছে। কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে সেটা ভিন্ন বিষয়।
এদিকে জ্বালানি সংকটের কারণে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি দেশের অন্যতম রপ্তানিখাত তৈরি পোশাক শিল্প। চলমান বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের দৈন্য দশায় কারখানার মালিকরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন। দ্রুত এ সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া না গেলে যেকোনো সময় কারখানাগুলো বন্ধ করে দিতে হতে পারে বলে ধারণা করছেন মালিকরা। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জেই কর্মহীন হয়ে পড়তে পারেন কয়েক লাখ শ্রমিক। এমন আশঙ্কার কথা বলেছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের অন্যতম সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
গার্মেন্টস মালিকরা জানান, বেশিরভাগ সময়ই কারখানাগুলোয় গ্যাসের চাপ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে উৎপাদন নেমে এসেছে ৪০-৬০ শতাংশে।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বেশি দামে জ্বালানি কিনে জেনারেটরের মাধ্যমে কারখানাগুলো সচল রাখতে হচ্ছে। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে মালিকদের। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে যেকোনো মুহূর্তে ভয়াবহ সংকট দেখা দিতে পারে এ সেক্টরে। তৈরি পোশাক কারখানার ক্ষেত্রে বিদ্যুতের চেয়েও গ্যাসের সংকটের কারণে বেশি লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছে কারখানাগুলো।
এ বিষয়ে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমার প্রায় ৩৬ বছরের ক্যারিয়ারে এবারের মতো সংকটের মুখোমুখি হইনি। আমরা কতটুকু অর্ডার নেব বুঝতে পারছি না। অর্ডার নিয়ে যদি দিতে না পারি তখন উল্টো জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে। এর মধ্যে আড়াইশ শ্রমিক ছাঁটাই করেছি আমরা। কারণ কাজ নেই। তাদের বসিয়ে রেখে টাকা দেওয়া সম্ভব না। প্রায় সব ফ্যাক্টরিতেই একই অবস্থা। আবার শ্রমিকদের বেতনও আমরা সময়মতো দিতে পারছি না।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২২
এমআরপি/আরবি