ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

শিল্প-সাহিত্যে ২০১৩

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৩
শিল্প-সাহিত্যে ২০১৩

‘সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না’ এই নীতিবাক্য মুখস্থ করেননি এমন কোনো ছাত্র অথবা শিক্ষিত মানুষ অন্তত বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু কারো জন্য অপেক্ষা না করলেও আমরা কিন্তু সময়ের জন্য ঠিকই অপেক্ষা করি।

আর সেটা নিশ্চয় সুসময়ের জন্যই।

সুসময়ের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে আমরা হেঁটে চলি দুঃসময়ের ভেতর দিয়ে। আর তার অগোচরে কখন যে সুসময় এসে সুখের সিঁটি বাজিয়ে দূরে মিলিয়ে যায় আমরা বেশিরভাগ মানুষই তা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। তখনও অপেক্ষা করি আরো ভালো সুসময়ের জন্য এই অপেক্ষার পালা কোনোদিন শেষ হবে না। হবার নয়। সময় ফুরিয়ে গেলেই কেবল আমরা সময়ের হিসাব নিকাশ করি। অথচ কি আশ্চর্য ‘সময় গেলে সাধন হয় না’ বলে আমাদের লোককবিগণ তাদের গানে বহুবছর আগেই বলে গেছেন। কিন্তু এই অমূল্য নীতিবাক্যটাও আমরা কেবল গান গাইবার ক্ষেত্রেই খরচ করি। আর সময় ফুরিয়ে গেলেই শুরু হয় আমাদের অর্জন অপ্রাপ্তির হিসাব নিকাশ।

যাই হোক আমার আলোচ্য বিষয় সাহিত্যের সালতামামি। সাহিত্যের সালতামামি শুরু করার আগে এই কথাটুকু না বলে নিলে অন্যায় হবে, যে, বাংলাদেশের শিল্প সাহিত্যের সকল আয়োজন সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এখন একটি মাসকে কেন্দ্র করেই কেবল আবর্তিত হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা কেন্দ্রিক বাংলা সাহিত্যের সালতামামি, মানে শুধু মাত্র ওই একমাসের সালতামামি হাজির করলেই পুরো বছরের সালতামামি হয়ে যায়। কেননা সারা বছর যে বইগুলো চলে তা কিন্তু প্রকাশিত হয় ওই একটি মাসেই। যত যা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন কিংবা প্রকাশনা উৎসব সবই সেই বটতলাকেন্দ্রিক।

বলা যায় নজরুলমঞ্চকেন্দ্রিক বাংলা সাহিত্যের প্রকাশনা উৎসব। ফলে সারা বছর কয়টি বই বের হলো আর কয়টি প্রকাশনা উৎসব হলো তার কোনো আলাদা হিসাবের দরকার নেই। ওই মাসের লিখিত অনুষ্ঠানসূচিই এ পরিসংখ্যান নির্ণয়ে যথেষ্ট। বিশ্বাস না হলে আপনার কবি বন্ধু বা লেখকবন্ধুকে যদি জিজ্ঞাসা করুন, পরবর্তী বই কবে বের হবে? উত্তর একটাই— আগামী বইমেলায়, কিংবা তার পরের বইমেলায়। একজন রাইটারকে জিজ্ঞেস করলেই বাংলাদেশের মোটামুটি বাকি রাইটারের বইও কোনটা কোন মেলায় প্রকাশিত হবে তা জেনে যাবেন আপনি। ফলে বাংলা সাহিত্যের মোটাদাগে কোনো বাৎসরিক সালতামামি নেই। আছে মাসতামামি! এমনকি এটাকে ফেব্রুতামামিও বলা যেতে পারে।

এক্ষেত্রে অবশ্য একটা প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায়, যে, তাহলে এত এত প্রকাশনী সংস্থাগুলো সারা বছর কিভাবে চলে। এর উত্তর একটাই ফেব্রয়ারি মাসে যে বইগুলো প্রকাশিত হয় সেগুলোই সারা বছর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বই বিক্রেতাদের কাছে পাঠানো হয়। চলতি বইগুলোর পুনর্মুদ্রণও হয় কিছু কিছু। এভাবেই চলছে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প। তবে ঢালাওভাবে এমনটা বলা অন্যায় হবে, কারণ কিছু কিছু প্রকাশক এখন বছরের অন্যান্য সময়েও বই বের করার উদ্যোগ নিচ্ছেন কিন্তু সেটা এতই সামান্য যে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে শত শত কোটি টাকার প্রকাশনা শিল্পের সকল কার্যক্রম হয়ে পড়ছে একটিমাসকেন্দ্রিক যা সত্যিই দুঃখজনক।

একুশে ফেব্রুয়ারির বাইরে কিছু সাহিত্য সংগঠনের সাহিত্যচর্চা, দেশিয় ও আন্তর্জাতিক কিছু উৎসব আর সম্প্রতি কতিপয় সৃজনশীল প্রকাশক বছরের নানা সময়ে বইমেলার উদ্যোগ গ্রহণ করছেন এসব ঘটনাও প্রশংসার দাবি রাখে। যেমন শরতের বইমেলা, হেমন্তের বইমেলা, বর্ষার বইমেলা, ঢাকা বইমেলা। মেলাগুলোও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু এসব অপরাপর বইমেলাগুলোকে কেন্দ্র করে নতুন বই তেমন প্রকাশিত হয় না। এসব ক্ষেত্রেও প্রকাশকরা ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত বইগুলোই নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন। ফলে এই মেলাগুলো ফেব্রুয়ারির বইমেলার মতো তেমন সাড়া ফেলতে পারে না স্বাভাবিকভাবেই।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই শুরু হয় গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন। এ আন্দোলন বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণের খুব কাছে হওয়ায় আন্দোলনের স্ফূরণে মেলার জৌলুস ম্লান হয়ে গিয়েছিল বইমেলার একেবারে শুরুর দিক থেকেই। ফলে বইমেলা প্রাঙ্গণ মোটামুটি ফাঁকা মাঠে পরিণত হয়েছিল পুরোটা মাসজুড়েই। অনেকে আবার নানাধরনের ভয় ভীতির কারণেও বইমেলামুখি হননি। রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশের এই গণআন্দোলন আপামর জাতির জন্য সুফল বয়ে আনলেও প্রকাশকদের জন্য কোনো সুখের বার্তা নিয়ে আসতে পারেনি। তবুও জাতির স্বার্থে এই আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়ে প্রকাশকরাও শরিক হয়েছিল যার যার সাধ্যমতো। কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চের কারণে এমনিতেই যখন প্রকাশকদের চোখে হতাশার ছাপ ঠিক তখনই একুশের বইমেলার কিছু প্রকাশনা সংস্থার স্টল আগুনে পুড়ে গেল, যা ফেব্রুয়ারির বইমেলায় প্রকাশকদের সার্বিক ক্ষতির পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।

প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় লেখকদের বাইরেও রয়েছেন ভিন্নধারার সাহিত্যচর্চাকারী লিটলম্যাগ কর্মীরা। একমাত্র লিটলম্যাগাজিনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কবি-লেখকদেরই সারা বছর সাহিত্যচচার ভেতরে থাকতে দেখা যায়। যদিও বাংলাদেশের বেশিরভাগ লিটলম্যাগাজিনও বের হয় বইমেলাকে কেন্দ্র করে। ’১৩ সালের বইমেলায় সর্বমোট ৪২টি লিটলম্যাগাজিন স্টল বরাদ্দ পায়। প্রতিবারের মতো এবারও বইমেলা উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক লিটলম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রকাশিত লিটলম্যাগাজিনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, চারবাক, শালুক, নিসর্গ, সরলরেখা, প্রান্তস্বর, কবি, অর্বাক, লোক, লিটলম্যাগ প্রাঙ্গণ,  প্লাটফর্ম, দ্রষ্টব্য, অনুপ্রাণন, আড়াইসিধা, কবিতাপত্র, হালখাতা, গোলাঘর, অরনী ইত্যাদি।

এসবের বাইরেও সারাবছর ধরে গুটিকয়েক সাহিত্যিক কর্মকাণ্ড চোখে পড়েছে। ব্যক্তি ও কতিপয় সংগঠনের উদ্যোগেই এসব আয়োজনগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে।


যাদের হারিয়েছি
২০১৩ সাল আমাদের যতটুকু দিয়েছে তার চেয়ে নিয়ে গেছে বেশি। এ বছরই আমরা হারিয়েছি সাহিত্যিক আবদুশ শাকুর,  কবি দিলওয়ার ও কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেনকে।

আবদুশ শাকুর: ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখে প্রয়াত হন বাংলাসাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লেখক আবদুশ শাকুর। প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ক্ষীয়মান’ দিয়ে তিনি সাহিত্যে যাত্রা শুরু করেন। সাহিত্যের নানা শাখায় ছিলো তার বিচরণ। প্রবন্ধকার হিসেবে যেমন ছিলেন প্রবাদতুল্য, তেমনি রম্যরচনাতেও তার জুড়ি মেলা ভার, সংগীত নিয়েও ছিল তার প্রবল আগ্রহ। রবীন্দ্র চর্চাতে তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য। আর গোলাপ গবেষক হিসেবে তার খ্যাতির কোনো তুলনা নেই। গোলাপ নিয়ে তিনি এদেশের পাঠককে উপহার দিয়েছেন কিছু মূল্যবান বই। উল্লেখ্য  আবদুশ শাকুরের গল্পসমগ্র অমিয়ভূষণ পুরস্কার লাভ করে।

দিলওয়ার: ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে প্রয়াত হন নিভৃতচারী কবি দিলওয়ার হোসেন। গণমানুষের কবিখ্যাত দিলওয়ারের উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো জিজ্ঞসা (১৯৫৩), ঐকতান (১৯৬৪), পূবাল হাওয়া (১৯৬৬), উদ্ভিন্ন উল্লাস (১৯৬৯) ও বাংলা তোমার আমার।

খোন্দকার আশরাফ হোসেন: এ বছরের ১৬ জুন প্রয়াত হন কবি, শিক্ষাবিদ খোন্দকার আশরাফ হোসেন। খোন্দকার আশরাফ হোসেনের জন্ম ৪ জানুয়ারি ১৯৫০ সালে জামালপুরের সরিষাবাড়ি থানার জয়নগর গ্রামে। পেশায় তিনি ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধানের পদে ছিলেন দীর্ঘদিন, এরপর  জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তিনি ছোটকাগজ একবিংশ সম্পাদনা করতেন। কবিতা, প্রবন্ধ রচনার পাশাপাশি কিছু অসাধারণ অনুবাদও করেন খোন্দকার আশরাফ হোসেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো, তিন রমণীর ক্বাসিদা (১৯৮৪, একবিংশ), পার্থ তোমার তীব্র তীর (১৯৮৬, মুক্তধারা), জীবনের সমান চুমুক (১৯৮৯, একবিংশ), সুন্দরী ও ঘৃণার ঘুঙুর (১৯৯২, একবিংশ), নির্বাচিত কবিতা (১৯৯৫, বিশাকা), যমুনাপর্ব (১৯৯৮, প্যাপিরাস), জন্মবাউল (২০০১, প্যাপিরাস) কবিতাসংগ্রহ (২০০৫, শিখা প্রকাশনী), তোমার নামে বৃষ্টি নামে (২০০৮, চয়নপ্রকাশন), আয়(না) দেখে অন্ধ মানুষ (২০১০, নান্দনিক) ইত্যাদি।
বাংলাদেশের কবিতা: অন্তরঙ্গ অবলোকন (বাংলা একাডেমী), চিরায়ত পুরাণ ( ফ্রেন্ডস বুক কর্নার), বিশ্বকবিতার সোনালি শস্য (আগামী), রোমান্টিক ও আধুনিক কবিতার অক্ষ-দ্রাঘিমা (নিউ এজ), কবিতার অন্তর্যামী (নান্দনিক) ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধের বই।
টেরি ঈগলটন/সাহিত্যতত্ত্ব (নিউ এজ), সফোক্লিসের রাজা ঈদিপাস (বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র), ইউরিপিডিসের আলসেস্টিস (বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র), ইউরিপিডিসের মিডিআ (বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র), পাউল সেলানের কবিতা (বাংলা একাডেমী), ডেভিড অ্যাবারক্রম্বির  সাধারণ ধ্বনিতত্ত্ব (বাংলা একাডেমী), ইত্যাদি তার অনুদিত গ্রন্থ।
সাহিত্যে স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পুরস্কারও পান। তারমধ্যে আলাওল পুরস্কার ১৯৮৭, পশ্চিমবঙ্গ লিটলম্যাগাজিন পুরস্কার ১৯৯৭, ব্রহ্মপুত্র সাহিত্যপদক, লিটলম্যাগ প্রাঙ্গন পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।


বছরের আলোচিত অনুষঙ্গ
হে উৎসব: বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশে ইংরেজিতে লেখালেখি করেন এমন সাহিত্যিকদের উদ্যোগে শুরু হয় হে উৎসব। নভেম্বর মাসের ২২ তারিখে বাংলা একাডেমিতে শুরু হওয়া তিনদিনব্যাপী  অনুষ্ঠিত এ উৎসবকে ঘিরে ছিলো ব্যাপক তর্কবিতর্ক। হে উৎসবের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি নুরুল হুদাকে আন্দোলনও করতে দেখা গেছে। সাহিত্যের পাশাপাশি শিল্পসাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যান্য শাখাও এ উৎসবের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। উল্লেখ্য আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে উয়ি নদী তীরের একটি ছোট্ট শহর হে’তে শুরু হয়েছিল এ উৎসব। বর্তমানে তা রূপ নিয়েছে আন্তর্জাতিক এক সাহিত্য উৎসবে।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ উৎসবে ১১টি দেশ থেকে ৫০ জন কবি, লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক ও অভিনয়শিল্পী যোগ দিয়েছিলেন। এসেছিলেন খ্যাতিমান পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক-বুদ্ধিজীবী তারিক আলি, ভারতীয় ঔপন্যাসিক ও প্রবন্ধকার পঙ্কজ মিশ্র, ভারতীয় অভিনেতা রাহুল বোস, পাকিস্তানের কথাসাহিত্যিক আমের হুসেইন, ওক্তাবিও পাসের অনুবাদক হিসেবে খ্যাত এলিয়ট ওয়াইনবার্গার, মেহিকোর  মারিয়ো বেইয়াতিন, কথা সাহিত্যিক পশ্চিম বঙ্গের কথাসাহিত্যিক অভিজিৎ সেন ও স্বপ্নময় চক্রবর্তী।

প্রতিবাদকারীরা এ উৎসবকে  নয়া ঔপনিবেশিকতা ফলানোর একটি হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করেন বাংলা একাডেমিতে এই উসৎব হতে দেওয়া উচিত নয়।

নতুনধারা কবিতাসন্ধ্যা: এ বছরের ১৬ মে থেকে সাহিত্য পত্রিকা নতুনধারা শুরু করেছে তাদের মাসিক কবিতার আসর ‘নতুনধারা কবিতাসন্ধ্যা’। সে আয়োজনে পত্রিকাটির উদ্যোগে নিয়মিত কবিতাপাঠের অনুষ্ঠান হতে থাকার ঘোষণা দেন নতুনধারার উপদেষ্টা সম্পাদক কবি ফরিদ কবির।   এই কবিতার আসরে আমন্ত্রিত কবিরা কবিতা পাঠ করেন। নতুনধারার নির্বাহী সম্পাদক সাখাওয়াত টিপুর সঞ্চালনায় এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে অনুষ্ঠানটির আয়োজন হচ্ছে।


উল্লেখযোগ্য সাহিত্যপুরস্কারসমূহ যারা পেয়েছেন
একুশে পদক: ২০১৩ সালে ১২ ব্যক্তি এবং এক প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক দেওয়া হয়। যারা একুশে পদক পেয়েছেন তারা হলেন, এম এ ওয়াদুদ (ভাষা আন্দোলন), অধ্যাপক অজিত কুমার গুহ (ভাষা আন্দোলন),  অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান (ভাষা আন্দোলন),  তোফাজ্জল  হোসেন (ভাষা আন্দোলন) এনামুল হক মোস্তফা শহীদ (মুক্তিযুদ্ধ), নূরজাহান মুরশিদ (সমাজসেবা), স্যামসন এইচ চৌধুরী (সমাজসেবা), রফিক আজাদ (ভাষা ও সাহিত্য), আসাদ চৌধুরী (ভাষা ও সাহিত্য) কাদেরী কিবরিয়া (শিল্পকলা),  জামালউদ্দিন হোসেন (শিল্পকলা), চারণ কবি বিজয় কৃষ্ণ অধিকারী (বিজয় সরকার) (শিল্পকলা)   বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী (শিল্পকলা)।

বাংলা একাডেমী পুরস্কার:  ২০১৩ সালে যারা বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন তারা হলেন, আবিদ আনোয়ার (কবিতা), সানাউল হক খান (কবিতা), হরিশংকর জলদাস (কথাসাহিত্য), সনৎকুমার সাহা (প্রবন্ধ), খোন্দকার সিরাজুল হক (গবেষণা), ফকরুল আলম (অনুবাদ), মাহবুব আলম (মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য), তপন চক্রবর্তী (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ), মাহবুব তালুকদার (শিশুসাহিত্য)।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার: এ বছরের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার ১৪১৮ ও ১৪১৯ প্রদান করা হয়। পুরস্কার পেয়েছেন যথাক্রমে বরেণ্য সাহিত্যিক ড. হায়াৎ মামুদ ও তপন চক্রবর্তী।

জেমকন সাহিত্য পুরস্কা ও তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার: ২০১৩ সালের জেমকন সাহিত্য পুরস্কার ও জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার  পেয়েছেন যথাক্রমে কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল ও মেহেদী উল্লাহ। আহমাদ মোস্তফা কামালের উপন্যাস ‘কান্নাপর্ব’ ও  মেহেদী উল্লাহর গল্পগ্রন্থ পাণ্ডুলিপি ‘পোস্টমাস্টার ও অন্যান্য গল্প’ পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের সাহিত্যের মৌলিক সৃষ্টিকর্মকে উৎসাহ প্রদানের জন্য ২০০০ সালে এ পুরস্কার প্রবর্তন করে জেমকন গ্রুপ।

‘বগুড়া লেখকচক্র পুরস্কার ২০১৩’ :  নানা শাখায় বগুড়া লেখকচক্র পুরস্কার প্রদান করে। এবার প্রকাশনায় পুরস্কার পায় প্রকাশনা সংস্থা ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, কবিতায় পান মাকিদ হায়দার, কথাসাহিত্যে  রফিকুর রশীদ, লিটলম্যাগ সম্পাদনায় সরকার আজিজ, সাংবাদিকতায়  প্রদীপ ভট্টাচার্য শংকর এবং সংগঠনিক ব্যক্তিত্বে  জিএম সজল।

ব্র্যাক ব্যাংক সমকাল সাহিত্য পুরস্কার: সাহিত্যিক, গবেষক, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী এবং তরুণ লেখক শুভাশিস সিনহা চলতি বছরের ‘ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার’-এ ভূষিত হন। ২০১২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে তিনটি শাখায় শ্রেষ্ঠ বিবেচনায় তাদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তার ‘বাঙালি সংস্কৃতি ও অন্যান্য’ গ্রন্থের জন্য ‘প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, ভ্রমণ ও অনুবাদ’ শ্রেণীতে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মাননা পান। কবিতা ও কথাসাহিত্য শাখায় ‘এই ঘরে লক্ষ্মী থাকে’ উপন্যাসের জন্য বুলবুল চৌধুরী এবং ‘কুলিমানুর ঘুম’ উপন্যাসের জন্য হুমায়ূন আহমেদ তরুণ সাহিত্যিক পুরস্কার জয় করেন শুভাশিস সিনহা। বাংলা সাহিত্যের  মৌলিক সৃষ্টিকর্মকে উৎসাহিত করার জন্য ২০১১ সাল থেকে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্মরণে চলতি বছর থেকে পুরস্কারে হুমায়ূন আহমেদ তরুণ সাহিত্য পুরস্কার সংযোজন করা হয়েছে।

লোক সাহিত্য ও লিটলম্যাগ প্রাঙ্গণ পুরস্কার: এ বছর ২০১২ সালের লোক সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। ২০১২ সালের লোক সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন কবি মাহবুব কবির ও লিটলম্যাগ প্রাঙ্গণ পুরস্কার পায় ছোটকাগজ ‘অর্বাক’। এদিকে একই অনুষ্ঠানে ঘোষণা করা হয় ২০১৩’র পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও লিটলম্যাগের নাম। ২০১৩ সালের লোক সাহিত্য পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক ইমতিয়ার শামীম। এই পুরস্কারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নিয়ে ‘লোক’ ও ‘লিটলম্যাগ প্রাঙ্গণ’-এর দুটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে এ পুরস্কার চালু করা হয়। এছাড়া লোক দর্শনীর বিনিময়ে কবিতাসন্থ্যার আয়োজন করে প্রতিবছর। যা লেখক, পাঠক ও বোদ্ধা মহলে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে।

শুধু তাই নয় এ বছর থেকে ‘লেখালেখি’ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘লেখালেখি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৩’ প্রবর্তন করেছে। প্রবন্ধ, গল্প-উপন্যাস ও কবিতা-ছড়ায় এ পুরস্কার দেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নগদ ২০ হাজার টাকা, একটি ক্রেস্ট এবং সম্মাননা প্রদান করা হবে। এ পুরস্কার প্রদান করা হবে।

এছাড়াও বছরের একেবারে শেষের দিকে গত ২৩ ডিসেম্বর দেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতিবাদে ও এর বন্ধের দাবিতে কবি সৈয়দ শামসুল হকের নেতৃত্বে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজন করা হয় কবিবন্ধনের। ওইদিন ঢাকাসহ ঢাকার বাইরের কয়েকটি স্থানেও কবি লেখকরা এই কর্মসূচি পালন করে। এ বছর শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে এ কর্মসূচিকেও রাখা যেতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৩
সম্পাদনা: তানিম কবির

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।