ঢাকা: কোনো দণ্ড ছাড়াই বছরের পর বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে অনিশ্চিত দিন কাটতো যাদের, তাদের বিষয়ে গণমাধ্যমে তথ্য প্রকাশের পর হাইকোর্টের নজরে আনে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড।
আর এতে প্রায় দেড় যুগ ধরে কারাগারে থাকা চার ব্যক্তি জামিনে মুক্তিও পেয়েছেন।
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসেই চার নারীসহ ওই ১১ জনকে আদালতে হাজির করে জামিনের বিষয়ে শুনানি হবে।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে পুরান ঢাকার শিপন নামের এক ব্যক্তিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। যাতে বলা হয়, প্রায় দেড় যুগ ধরে বিচার ছাড়াই বন্দি রয়েছেন শিপন।
প্রতিবেদনটি বিদায়ী বছরের ৩০ অক্টোবর আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী কুমার দেবুল দে। ওইদিনই শিপনকে ০৮ নভেম্বর হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
সে অনুসারে ০৮ নভেম্বর হাজিরের পর নথিপত্র পরীক্ষা করে শিপনকে জামিন এবং ৬০ দিনের মধ্যে তার মামলার বিচার শেষ করার আদেশ দেন উচ্চ আদালত। সে পর্যন্ত জামিনে থাকবেন শিপন। যদি বিচার শেষ করতে না পারা যায়, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও কথা বলা হয়েছে।
এরপর ‘বিনা বিচারে’ দেড় যুগ ধরে কারাগারে থাকা আরও চারজনের বিষয়ে একই টিভি চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে তাদের বিষয়টি আদালতের নজের আনার পর ০৪ ডিসেম্বর হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
জামিনের অপেক্ষায় প্রায় দেড় যুগ ধরে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ওই চারজন হচ্ছেন- চাঁন মিয়া, মকবুল, সেন্টু ও বিল্লাল।
এর মধ্যে চাঁন মিয়া ছাড়া বাকিদের জামিন দেন আদালত।
পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে আরও চার নারীসহ ১১ জনের বিষয়টিও আদালতে নজরে আনা হয়। চার নারীকে ১৬ জানুয়ারি এবং বাকিদের ২৪ জানুয়ারি আদালতে হাজিরের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সাতজন হলেন- কুষ্টিয়ার রাসেল শেখ, রাজধানীর বাড্ডার সাইদুর রহমান, মতিঝিলের মাসুদ, কেরাণীগঞ্জের রাজীব হোসেন, গাজীপুরের বোর্ড বাজারের বাবু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পারভেজ ও নেত্রকোনার গারো তরুন লিটন।
চার নারী হচ্ছেন- সুমি আক্তার রেশমা, শাহনাজ বেগম, রাজিয়া সুলতানা ও রাণী ওরফে নুপুর।
তারাও সবাই বিভিন্ন মামলায় এক যুগের বেশি সময় ধরে কাশিমপুর-২ কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
এরই মধ্যে ১৬ নভেম্বর বিনা বিচারে দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক বন্দিদের তালিকা চেয়ে দেশের সকল কারাগারে চিঠি পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি।
চিঠিতে পাঁচ বছরের বেশি আটককৃত এবং দশ বছরের বেশি আটককৃতদের আলাদা দু’টি তালিকা তৈরি করে কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘রাষ্ট্র গরিব ও অসহায় মানুষদের সুপ্রিম কোর্টে বিনা পয়সায় মামলা পরিচালনার ভার বহন করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে দেশের কয়েকটি কারাগারে বিভিন্ন ধরনের ফৌজদারি অপরাধে বিনা বিচারে দীর্ঘ সময় ধরে আটক থাকার সংবাদ সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল এইড কমিটির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। নিম্ন আদালতে বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়া এসব মামলাগুলো সাক্ষ্যগ্রহণসহ নানাবিধ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। ফলে কার্যত সাজা হওয়ার আগেই আটক বন্দিরা দীর্ঘদিন ধরে কারাভোগ করছেন’।
‘সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস দীর্ঘ সময় ধরে কারাগারে আটক এসব বন্দির হালনাগাদ তথ্য জানতে ইচ্ছুক’।
‘আটককৃত এসব বন্দিদের তথ্য সম্বলিত তালিকা প্রেরণ করলে বিনা বিচারে আটক গরিব বন্দিদের আইনি সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হবে’ বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
আইনজীবী কুমার দেবুল দে জানান, এসব আসামির বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর এ মামলাগুলোর বিচার সম্পন্ন হয়নি। আবার তাদেরকে জামিনও দেওয়া হয়নি। যা আইনত অবৈধ।
**ছাড় পায়নি কেউই
**আলোচনায় ‘দ্বৈত শাসনের’ ১১৬ অনুচ্ছেদ
**ছয়জনের ফাঁসির রায়, কার্যকর তিনটি
বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
ইএস/এএসআর