ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বছর শেষ করলো বিএনপি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বছর শেষ করলো বিএনপি সালতামামি

ঢাকা: একটি স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বছর শেষ করলো বিএনপি। বছরের শেষ মাসে তাদের এমন পরাজয়ে নেতাকর্মীদের মনোবলে ভাটা পড়বে, এমনটা বলাই যায়। তবে ২০১৬ সালের তুলনায় ১৭ সালে অনেকটাই চাঙ্গা ছিল দলটি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেয়া, ১৫ সালের জানুয়ারি মাসে সরকার পতনের আন্দোলনে ব্যর্থ হবার পর দলটি একেবারেই ঝিমিয়ে পড়েছিল।

বছরের শুরুতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের লক্ষ্যে কর্মসূচি দিলেও এজন্য অনুমতি পায়নি তারা। পরে সারাদেশে বিক্ষোভ পালন করেই শেষ করে কর্মসূচি।

মূলত ওই কর্মসূচি থেকেই দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার লক্ষ্যে মাঠে নামে দলটি। কিন্তু তাতে খুব একটা সফলতা আসেনি। এরপর শুধু ঘরোয়া কর্মসূচি পালন করেই চলছিল তারা।

বছরের শেষ দিকে এসে দলীয় প্রধান বিদেশ সফর করে ঢাকায় ফেরার সময় বিশাল শোডাউনের সুবাদে আবারও চাঙ্গা হয়ে ওঠে নেতাকর্মীরা। এরপর দলীয় প্রধানের সড়কপথে কক্সবাজার সফর আর মাঝেমাঝে আদালতে হাজিরা দেয়ার সময় নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে সরকারকে নানা আল্টিমেটাম দেয়। এই ওয়ার্ম আপটুকু তাদের চাঙ্গা করলেও তাতে রাজনৈতিক ফায়দা মেলেনি কোনো। ডিসেম্বরে এসে রংপুর সিটি করপোরেশনের লজ্জাজনক পরাজয়ের মুখ দেখতে হয় তাদের। এই ভরাডুবির পরাজয় মেনে নেয়া ছাড়া উপায়ও নেই। কারণ নির্বাচনটি যে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে তা মিডিয়ার মাধ্যমে সারাদেশের মানুষ জেনে গেছে।
 
ফেব্রুয়ারিতে রকিব কমিশনের মেয়াদ শেষে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে বিএনপি এর বিরোধিতা করে। সার্চ কমিটিতে ২০ দলীয় জোটের দলগুলো আলাদা আলাদা নাম প্রস্তাব করে। বিএনপির দেয়া প্রস্তাব অনুযায়ী একজনকে কমিশনে নেয়া হলেও অভিযোগ থেকে বিরত থাকেনি দলটি। তবে তাদের ঠুনকো অভিযোগ কোথাও হালে পানি পায়নি। নতুন কমিশন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন যথারীতি।
  
বছরের তৃতীয় মাসে দলটির জন্য একটি সফলতার খবর ছিল। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাদের দলীয় প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়ে চমক দেখান। তবে সাক্কু এখন কার ছায়াতলে থেকে মেয়রের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, সে নিয়ে যথেষ্ট জল্পনা কল্পনা রয়েছে। তবুও যে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবেই তিনি জয়লাভ করেছিলেন, আপাতত এটাই তাদের স্বান্ত্বনা।

ঢাকা মহানগরীকে দুই ভাগ করার সময় বিরোধিতা করেছিল বিএনপি। তখন তারা বলেছিল, দল ক্ষমতায় গেলে পুনরায় এক করবেন তারা। পরবর্তী সময়ে তারা সেই ঘোষিত পথ থেকে সরে এসে দুই সিটির নির্বাচনে অংশ নেয় এবং পরাজিত হয়। এবছর দুই সিটিকে স্বীকৃতি দিয়ে তারাও তাদের মহানগর কমিটিকে ভেঙে দুভাগ করে ফেলে। এপ্রিল মাসে মহানগরের একক কমিটি ভেঙে দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে বিভক্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা করে দলটি। দলের দক্ষিণ অংশের সভাপতির দায়িত্ব পান কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল।  

অপর দিকে উত্তরের সভাপতি করা হয় বিতর্কিত নেতা এম এ কাইয়ুমকে। যিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে রয়েছেন।
 
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিএনপি প্রস্তুত এমন বক্তব্য দিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামার ঘোষণা দেন দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২ মে শ্রমিক দলের সঙ্গে জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৩০০ সংসদীয় আসনে ৯০০ প্রার্থী রয়েছে দলের।  

তিনি তখন এ-ও বলেন, সহায়ক সরকার এবং নির্বাচনের পরিবেশ থাকলে বিএনপি সব সময় নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত। এরপর বছরের শেষ ৬ মাসে একই ধরনের বক্তব্য দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য একটাই, সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা পেলে নির্বাচনে যাবেন তারা।
 
মহাসচিবের ওই বক্তব্যের পরপরই মে মাসেই আরো একটি চমক দেয় বিএনপি। মাসের ১০ তারিখে ভিশন ‘২০৩০’ প্রকাশ করে তারা। ওই দিন বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে মহাধুমধাম করে ৪১ পৃষ্ঠার একটি লিখিত রূপকল্প প্রকাশ করেন দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া। যা পুস্তিকা আকারে সারাদেশে বিলি করা হয় দলের পক্ষ থেকে। ৩৭টি অধ্যায়ে ২৫৬টি ধারায় বিভিন্ন নতুন পুরনো বিষয় তুলে ধরেন তিনি। দল ক্ষমতায় গেলে কী কী করবেন এতে তিনি সেসবের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। যাতে সংসদীয় ব্যবস্থার সংস্কারের অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদে উচ্চ কক্ষ প্রতিষ্ঠা করার পরীক্ষা চালাবেন বলে ঘোষণা দেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনারও কথা বলেন ওই রূপকল্পে।
 
এছাড়া দেশের গণতন্ত্র, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি, সন্ত্রাসবাদ, অর্থনীতি, মানবসম্পদ, তথ্য-প্রযুক্তি, প্রবাসীকল্যাণ, গণমাধ্যম, স্থানীয় সরকার, নগরায়ন ও আবাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, যোগাযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়েছে এতে।  
 
এই রূপকল্পের আওতায় দেশবাসীর কাছে বেশ প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার পেশ করেন খালেদা জিয়া। এসবের মধ্যে আছে কালাকানুন বাতিল করা, বিচার বিভাগ ঢেলে সাজানো, পুলিশের আধুনিকায়ন, মুক্তিযোদ্ধাদের ও শহীদদের সঠিক তালিকা করা, দেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের কাতারে তুলতে পদক্ষেপ নেওয়া, শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫ ভাগ ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি, তথ্য-প্রযুক্তিকে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত করা, বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করা, বেকারদের ভাতা দেওয়া, বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো, দ্বিতীয় পদ্মাসেতু করার প্রতিশ্রুতি, ব্রহ্মপূত্র সেতু, বুড়িগঙ্গা, গোমতী ও কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন সেতু তৈরি, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস হাইওয়ে করা, সারাদেশে বিভিন্ন মহাসড়ককে চার লেন উন্নীত করা, সার্কভুক্ত ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সাথে রেল ও সড়ক যোগাযোগের উদ্যোগ গ্রহণ এবং চীনের ‘ওয়ান বেল্ট-ওয়ান রোড’ উদ্যোগের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া।
 
জুন মাসে ঘোষিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘লুটপাটের বাজেট’ বলে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বাজেটে আওয়ামী লীগকে চুরি করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

জুন মাস জুড়ে ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে সরকারের সমালোচনায় সময় পার করেন খালেদা জিয়া। পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানির সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুইডেন সফরকে ‘আনন্দ ভ্রমণ’ বলে অভিহিত করেন খালেদা। রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।

বছরের শেষ ৬ মাস সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নেমে নেতাকর্মীদের মনে কিছুটা সাহস যোগায় দলটি। এক কোটি সদস্য সংগ্রহ করার লক্ষ্যে ১ জুলাই এ অভিযান উদ্বোধন করেন খালেদা। তিন মাসের কর্মসূচি হলেও ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় এ অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু (২৫ ডিসেম্বর রাতে) বাংলানিউজকে বলেন, সদস্য সংগ্রহ অভিযান এখনো চলছে।  

‘কতজন সদস্য সংগ্রহ হয়েছে?’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৭০ থেকে ৭৫ লাখ সংগ্রহ হয়েছে। যদিও লক্ষ্য ছিল এক কোটি। ’

বন্যার কারণ দেখিয়ে ১৫ আগস্টে কেক কাটার অনুষ্ঠান বাতিল করে শুধু দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৭২তম জন্মবার্ষিকী পালন করে বিএনপি। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকদিবসে জন্মদিন পালন নিয়ে নানা সমালোচনার মুখে অবশেষে জন্মদিন পালন থেকে বিরত থাকেন খালেদা জিয়া। এটা ছিল ওই সময়ের ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। অবশ্য নিজের জন্মদিনে দেশে না থাকাটাও জন্মদিন পালন না করার একটা কারণ হতে পারে বলে ধারণা করেন অনেকে।  

১ সেপ্টেম্বর ছিল বিএনপির ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দলীয় প্রধান দেশে না থাকায় সাদামাঠা ভাবেই দিবসটি পালন করে দলটি। অক্টোবর মাসজুড়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে নিয়ে নানা ঘটনার সময় বিএনপি অনেকটা তার পক্ষেই সাফাই গায়। প্রধান বিচারপতির পক্ষে কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদিন। ১৪ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সরকার প্রধান বিচারপতিকে জোর করে অসুস্থ  ও ক্যান্সারের রোগী বানাতে চেয়েছে। কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সরকার-প্রধান বিচারপতির ওপর অবিচার করেছেন। ’  
 
১ জুলাই সদস্য সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধনের পর ১৫ জুলাই লন্ডনের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন খালেদা। তিনি লন্ডন যাবেন বলে গুঞ্জন ছিল দু’মাস আগে থেকেই। লন্ডনে তার বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন তিনি। এই সফরকে দলীয়ভাবে ‘চিকিৎসা সফর’ বলা হলেও এ নিয়ে রাজনীতিতে গুঞ্জনের কমতি নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য সবাই খালেদা জিয়ার এই সফরকে বাঁকা চোখেই দেখেছেন। তাদের অনেকে বলেন, মামলার ভয়ে খালেদা দেশ ছেড়েছেন। আর ফিরবেন কি না সন্দেহ। তবে সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন খালেদা।

অনেকগুলো মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও তা পরোয়া না করে শাহজালাল (র.) বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী বিমানবন্দরে তাকে সংবর্ধনা দিয়ে শোভাযাত্রাসহ গুলশানের বাসায় পৌঁছে দেয় খালেদা জিয়াকে। দলীয় প্রধান দেশে ফেরায় তিন মাস ঝিমিয়ে থাকা নেতাকর্মীরা অনেকটা চাঙ্গা হয়ে ওঠেন। খালেদার ফিরে আসা তাদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। দেশে ফেরার পরদিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন তিনি। পুরান ঢাকার বকশিবাজার এলাকায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর সমাগম ঘটে।

১৮ অক্টোবর দেশে ফেরার পরপরই ২২ অক্টোবর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকটিও দলীয় নেতাকর্মীদের মনে আশার সঞ্চার করে। খালেদা জিয়া আদৌ সুষমার দেখা পাবেন কি না তা নিয়ে সংশয় থাকলেও সুষমার পক্ষ থেকে বৈঠকের আগ্রহ থাকায় বিএনপিতে স্বস্তি ফেরে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয় হলেও সুষমার কাছে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি তোলে বিএনপি। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানেও ভারতের সাহায্য চান খালেদা জিয়া।
 
দেশে ফেরার দশ দিনের মাথায় ২৮ অক্টোবর রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজার যান খালেদা। মানবিক সফর হলেও এ ছিল অনেকটা রাজনৈতিক শোডাউনের মতোই ছিল। সরকারি দল তার এই সফরকে সমালোচনা করতে ছাড়েনি।  

অপরদিকে যাওয়া-আসার পথে দু’বার হামলার শিকার হয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। এই হামলায় খালেদা অক্ষত থাকলেও দলের অনেকে আহত হন। খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী সাংবাদিকরাও অনেকে আহত হয়েছিলেন। এতে সরকার বেশ সমালোচনার মুখে পড়ে। তবে মাস খানেকের মধ্যে ইস্যুটি যথারীতি হাওয়ায় উবে যায়।

দীর্ঘদিন পর বছরের শেষ মাসের আগের মাস নভেম্বরে এসে আবারও সমাবেশ করার সুযোগ পায় বিএনপি। অনুমতি পেতে দেরি হওয়ায় ৭ নভেম্বরের সমাবেশটি তারা করে ১২ নভেম্বর। রাজধানীতে বড় একটি শোডাউন চোখে পড়ে দীর্ঘদিন পর। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ওই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়া নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানান।
 
বছরব্যাপী বিএনপি কোনো হরতালের ডাক না দিলেও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ও অবিলম্বে বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের দাবিতে সারা দেশে বাম দলগুলোর ডাকা হরতালে পূর্ণ সমর্থন দেয় বিএনপি। সিপিবি, বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা ৩০ নভেম্বর ওই হরতালের ডাক দেয়। তবে হরতালে পূর্ণ সমর্থন দিলেও দেশের কোথাও হরতালের পক্ষে বিএনপির মাঠে নামার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
 
বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় ছিল অনেকটা লজ্জাজনক। তিন প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির প্রার্থীর ভোটের পরিমাণ ছিল অনেক কম। রংপুর এরশাদের ঘাঁটি হলেও দলীয় প্রার্থী এতো কম ভোট পাওয়ায় নতুন করে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে দলটির নেতাদের কপালে। মুখরক্ষার জন্য তারা অবশ্য বলার চেষ্টা করছেন এই ফলাফল জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না। তারপরও দলের ভেতরে এনিয়ে চলছে নানা হিসাব নিকাশ।

চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বছরের শেষ সমাবেশে যোগ দেন গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে। এদিন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে নেতা কর্মীদের নির্বাচন ও আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন তিনি।

নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে নতুন বছর ২০১৮ সালের প্রথম দিকেই বিভাগীয় ও জেলা সফরের চিন্তা করছেন খালেদা জিয়া। সড়কপথে বিভিন্ন জেলা বা বিভাগ সফরের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আরও উজ্জীবিত করতে চান তিনি।  মূল নজর অবশ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
 
গত বছরের মতো এ বছরও দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে হারায় বিএনপি। বছরের শুরুতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী নুরুল হুদা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মারা যান। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রী হারুন অর রশীদ খান মুন্নু মারা যান ০১ আগস্ট।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার মারা যান ২৩ অক্টোবর। তিনি খালেদা জিয়ার সরকারে দুই দফা মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. আখতার হামিদ সিদ্দিকী মারা যান ১৯ নভেম্বর।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
এমএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।