ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

‘হটলাইন’ চালু আর হাওর মামলা আলোচনায় দুদক

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
‘হটলাইন’ চালু আর হাওর মামলা আলোচনায় দুদক বিদায়ী বছরজুড়ে সংবাদমাধ্যমের এ ছবিগুলোর ব্যবহার দেখা গেছে বেশি

ঢাকা: বিদায় হচ্ছে আরেকটি বছর, ২০১৭। বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা এবং নানামুখী কর্মকাণ্ডে এ বছর কেটেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। বছরের প্রথম থেকেই দুদকের হটলাইন আসছে বলে প্রচারণায় নামে কমিশন। কিন্তু মাঝামাঝি সময়ে সে হটলাইন চালু হলেও তেমন বড় চমক দেখা যায়নি। বিদায়ী বছরে কমেছে মামলা ও চার্জশিটেরও সংখ্যা। এছাড়া বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ, বনানী ধর্ষণকাণ্ডের পর আপন জুয়েলার্সের মালিকদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান প্রভৃতি কর্মকাণ্ডে আলোচনায় থেকেছে দুদক।

হটলাইন ১০৬
বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে গত ২৭ জুলাই ‘১০৬’ নম্বর হটলাইন চালু করে দুদক। সূত্র মতে, এরপর থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ লাখের বেশি ফোনকল আসে কমিশনে।

যার মধ্য থেকে অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেওয়া হয় ৩শ’টির মতো অভিযোগ, আর মামলা হয় মাত্র ১২টি। বলা হচ্ছে, অভিযোগ জানিয়েও তেমন সাড়া না মেলায় জনগণের মধ্যে এই হটলাইনের ব্যাপারে অনীহা তৈরি হয়েছে।

কমেছে মামলা ও চার্জশিটের সংখ্যা, বেড়েছে সাজার হার
বিদায়ী বছরে দুর্নীতির অভিযোগে দুদক ২২২টি মামলা করে। অথচ গত বছর মামলার সংখ্যা ছিল ৩৩৯টি। বিদায়ী বছরে মামলার চার্জশিট দেওয়া হয় ৩৫৪টি, যেখানে গত বছর চার্জশিটের সংখ্যা ছিল ৫২৮টি। বিদায়ী বছরের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কমিশন ও বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোর আমলের মামলা মিলিয়ে সাজা হয় ৫৮.৬৮ শতাংশের। আর কমিশনের দায়ের করা মামলায় সাজা হয় ৬৪.৯৭ শতাংশের এবং ব্যুরোর দায়ের করা মামলার সাজা হয় ৩৬.৪৩ শতাংশের। যেখানে ২০১৬ সালে সাজার হার ছিল প্রায় ৫২ শতাংশ। বিদায়ী বছরে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার মধ্যে ১৬৯টি মামলায় সাজা হয় এবং ১১৯টি মামলায় আসামিরা খালাস পায়। এ বছর দুদকে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দেখা যায় ৩ হাজার ৪১৮টি, আগের বছরে ছিল ৩ হাজার ৩৫৯টি। আর উচ্চ আদালতের আদেশে নিম্ন আদালতে বিচারাধীন ৫৮৭টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয় এ বছর।

‘ফাঁদ মামলায়’ ফিরেছে গতি
বিগত ২০১৪ সালে ‘ফাঁদ মামলা’ চালানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে সে কার্যক্রম দীর্ঘদিন কচ্ছপ গতিতে চলছিল। কমিশনের কঠোর নির্দেশে বিদায়ী বছরে এ ধরনের মামলার কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে দুদক চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলন করে সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের ঘুষ না নিতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানান। ‘তা না হলে কঠিন পরিণতির জন্য অপেক্ষা করুন’- বলে হুঁশিয়ারি দেন। যেখানে ২০১৪ সালে ফাঁদ মামলা হয় ৫টি, ২০১৫ সালে ৩টি, ২০১৬ সালে ১৩টি, সেখানে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ধরনের মামলা হয় ২৬টি। বিদায়ী বছরটিতে এ ধরনের মামলায় গ্রেফতার হয় ৩০ জন। যার মধ্যে নৌপরিবহনের প্রধান প্রকৌশলী, শিক্ষা অফিসার, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও বেশ কয়েকজন ভূমি কর্মকর্তাও রয়েছেন।
 
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি ও সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চুর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান
বেসিক ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির বিষয়ে বিদায়ী বছরেই বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, সিএজি কার্যালয় প্রতিবেদন দিয়ে জানায়, এ জালিয়াতিতে সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু জড়িত। এ নিয়ে প্রথমে কোনো পদক্ষেপ দেখা না গেলেও বছরের শেষ দিকে এসে আদালতের নির্দেশনায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চুকে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদে বাচ্চু নিজেই অর্থ জালিয়াতিতে জড়িত বলে স্বীকার করেন। এরপর এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে কমিশন। দুদক থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে বাচ্চু ও তার পরিবারের ১০ সদস্যের লেনদেনের তথ্যও চাওয়া হয়।
 
কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন
বিদায়ী এ বছরের শুরুতেই প্রথমবারের মত পাঁচ বছর মেয়াদী ‘কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা’ হাতে নেয় দুদক। এই কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে চলতি বছর কমিশনে যুক্ত হয়েছে নিজস্ব হাজতখানা, সশস্ত্র পুলিশ ইউনিট, গোয়েন্দা ইউনিট। যা দুদকের কাজে এনেছে নতুন গতি।

শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধে দুদকের সুপারিশ ও অনুসন্ধান
এ বছর দুদক অনুসন্ধানের পর জানায়, রাজধানী ঢাকার ২৪টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫২২ জন শিক্ষক কোচিং ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যার কারণে এসব শিক্ষককে বদলি করার সুপারিশ করা হয়। আর আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৯৭ শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকায় শাস্তির সুপারিশও করে কমিশন। সবশেষে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির উৎস তুলে ধরে সেগুলো বন্ধে মন্ত্রিপরিষদের কাছে ৩৯টি সুপারিশ পাঠায় দুদক।

আলোচিত হাওর মামলা
নিম্নমানের কাজ ও সময়মতো সংস্কারের অভাবে চলতি বছরের এপ্রিলে ফসল রক্ষা বাঁধের ভাঙনে আকস্মিক বন্যায় আক্রান্ত হয় উত্তর-পূর্বাঞ্চল। আর এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। যার ‍কারণে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের পেছনের দুর্নীতি অনুসন্ধানে মাঠে নামে কমিশন। ২ মাস অনুসন্ধান শেষে ২ জুলাই হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে সুনামগঞ্জ জেলা পাউবোর ১৫ কর্মকর্তা, ৪৬ ঠিকাদার এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মীসহ ৬১ জনকে আসামি করে মামলা করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে তারা। এ কার্যক্রমের ফলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় দুদক।

এসপি সুভাস ও স্ত্রী রীণা চৌধুরী’র বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বেসরকারি ওয়ান ব্যাংকের যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (সাবেক) সুভাস চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী রীণা চৌধুরীর ১৯টি এফডিআর হিসাবে ৮ কোটি ৩৬ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৭ টাকার খোঁজ পায় দুদক। অবৈধভাবে এই অর্থ আয়ের অভিযোগ এনে বিদায়ী বছরের ২৪ অক্টোবর দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল ওয়াদুদ বাদী হয়ে রাজধানীর বংশাল থানায় মামলা করেন। এরপর ১১ ডিসেম্বর তাদের চিঠি দিয়ে ১৩ ডিসেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। তবে এ দিন তারা দুদকে হাজির না হয়ে এক মাস সময় আবেদন করেন।

এছাড়া বনানীর একটি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় আপন জুয়েলার্সের মালিকদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান, বছরের শেষ দিকে এসে এবি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তাদের তলব, অবৈধ কোচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে সংবাদের শিরোনামে এসেছে দুর্নীতি দমনের এ কমিশন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
এসজে/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।