দুই ঘূর্ণিঝড়ে দেশের প্রায় ১০ জনের প্রাণহানি হলেও ভারতের অর্ধ শতাধিক মানুষ নিহত হয়। তবে বঙ্গোপসারের পাশে বাংলাদেশের উপকূলে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে সুন্দরবন বাঁচিয়ে দিয়েছে জান-মালসহ ফসলাদি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কতা এবং নানামুখী পদক্ষেপে ঘূর্ণিঝড় দু’টিতে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।
৯৩ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে ‘বুলবুল’
গত ৪ নভেম্বর উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ ওইদিনই সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। এরপর এটি পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে ৫ নভেম্বর পূর্ব-মধ্যবঙ্গোপসাগর এলাকায় নিম্নচাপে এবং আরও পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে ৬ নভেম্বর গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। পরবর্তী সময়ে এটি আরও সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ৭ নভেম্বর ভোর ৩টায় একই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ’বুলবুল’-এ পরিণত হয়।
ঘূর্ণিঝড় ’বুলবুল’ পরবর্তীকালে আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ৭ নভেম্বর পূর্ব-মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্যবঙ্গোপসাগর এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় ’বুলবুল’-এ পরিণত হয়। এরপর এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ৮ নভেম্বর উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্যবঙ্গোপসাগর এলাকায় অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ’বুলবুল’-এ পরিণত হয়।
এরপর কিছুটা দুর্বল হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে ৯ নভেম্বর রাত ৯টা থেকে ১০ নভেম্বর ভোর ৫টার মধ্যে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল অতিক্রম করে এবং খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় অবস্থান নেয়। এরপর আরো দুর্বল হয়ে ১০ নভেম্বর সকাল ৬টায় গভীর নিম্নচাপ আকারে বাগেরহাট, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলে অবস্থান গ্রহণ করে এবং আরও পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে ১০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় নিম্নচাপ আকারে বাগেরহাট, বরিশাল ও ভোলা অঞ্চলে অবস্থান নেয়। পরবর্তীকালে আরও পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।
ঘূর্ণিঝড় ’বুলবুল’ এর প্রভাবে খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক স্থানে ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়।
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ বাংলাদেশে খুলনায় সর্বোচ্চ ৯৩ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে। আর সিডর বা আইলায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ২২০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এই ঘূর্ণিঝড়ে ছয়জন নিহত হয় বলে জানায় সরকার।
ফেনা তুলে আঘাত করে ‘ফণী’
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ভারতের উড়িষ্যায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানলেও ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে সাধারণ ঘূর্ণিঝড় রূপে ৫ মে বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চল দিয়ে আঘাত হানে। এসময় বাতাসের গতিবেগ ছিল বরিশালে সর্বোচ্চ ৭৪ কিলোমিটার।
সবশেষ হিসেবে, ঘূর্ণিঝড়টির আঘাতে পাঁচজনের মৃত্যু ও ৬৩ জন আহতসহ মোট ৫৩৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে জানিয়েছে সরকার।
ফণীর আঘাত হানার আশঙ্কায় প্রথমে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর এবং কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করা হয়েছিল।
বন্যা কেড়ে নেয় ৭৫ জনের প্রাণ
মধ্য জুলাইয়ে অতিবৃষ্টির কারণে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ফেনী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, লালমনিরহাট, নীলফামারীতে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল। আর সেপ্টেম্বর শেষে আরেকটি বন্যা তৈরি হয় দেশের মধ্যাঞ্চলয়ে।
বন্যায় দেশের ২৮ জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৬০ লাখ ৭৪ হাজার ৪১৫ জন এবং ১৪ জেলায় ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ছয় লাখ ৩০ হাজার ৩৮৩ জন এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ৩২ জন।
বছর শেষে শীতে কাবু
শীত মৌসুম শুরু পরে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ দেশের উত্তরাঞ্চল এবং ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলেও শীতের প্রকোপ বেড়ে যায়। মৃদু শৈত্যপ্রবাহে তাপমাত্রা নেমে আসে ৫-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসে।
জানুয়ারির শুরুতে একটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে, তখন তাপমাত্রা ৪-৬ ডিগ্রির মধ্যে নেমে যাবে বলে আগাম পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯
এমআইএইচ/এএ