বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু ছিল বছরের উল্লেখযোগ্য অর্জন। এছাড়াও ফাইভ-জি চালুর কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ, বিটিসিএলের এক রেট, গ্রামীণফোনের এসএমপি ঘোষণা এবং ফেসবুকের প্রতিনিধির সফর ছিল আলোচিত।
রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ
কয়েক দফা আলোচনার পরেও অডিট আপত্তিতে পাওনা রাজস্ব বকেয়া পরিশোধ না করে উল্টো সালিশের জন্য গ্রামীণফোন সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ পাঠায় বছরের শেষ মাসে। গত ১৯ ডিসেম্বর ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ তথ্য জানান।
গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি বিটিআরসির।
পাওনা আদায়ে সেবা দিতে এনওসি বন্ধ ও লাইসেন্স বাতিলের নোটিশের পর গ্রামীণফোন ও রবিতে প্রশাসক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে অর্থমন্ত্রীর মধ্যস্থতার পরও অপারেটর দু’টি আদালতের শরণাপন্ন হয়। আদালত গ্রামীণফোনকে টাকা পরিশোধ করতে বললেও মূল প্রতিষ্ঠান টেলিনর রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ পাঠায়। সরকারও আইনিপথে এগিয়ে যাচ্ছে।
বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট
দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের বর্ষপূতি ও সেবা বিপণন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয় ১৯ মে। একই দিনে কয়েকটি বেসরকরি টিভি চ্যানেল সেবা নিতে চুক্তিবদ্ধ হয়। স্যাটেলাইট থেকে সেবা নিতে কয়েকটি দেশও সেবা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানায় স্যাটেলাইট কর্তৃপক্ষ। শুরু হয়েছে দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের প্রস্তুতি প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশে ফেসবুকের প্রতিনিধি
বাংলাদেশে স্থানীয় প্রতিনিধি নিয়োগসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মেনে চলতে ফেসবুক পূর্ণ সম্মতি দিয়েছে এবছর। মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফেসবুকের উচ্চপর্যায়ের আট সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সমন্বয় সভায় এ সম্মতি মেলে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বাংলাদেশের প্রচলিত আইন মেনে চলা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানে পূর্ণ সম্মতি দিয়েছে।
সিম ছাড়াই কল
দুর্যোগের সময় জরুরি সহায়তা পেতে মোবাইল সিম ছাড়াই কল করার সফল পরীক্ষা চালিয়েছে বিটিআরসি, মোবাইল অপারেটর ও সরকারের কয়েকটি সেবা সংস্থা। গত ৩০ অক্টোবর চালানো পরীক্ষায় জানানো হয়, যেকোনো হ্যান্ডসেটে এই কল করার সুবিধা পাওয়া যাবে।
টেকনাফ-উখিয়ায় থ্রিজি-ফোরজি বন্ধ
রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা অধ্যুসিত টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় থ্রিজি ও ফোরজি সেবা বন্ধ করে সেপ্টেম্বরে। অবৈধভাবে সিম গ্রহণ করে মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা নানা অপকর্ম করে আসছে বলে অভিযোগ চলে আসছিল।
ফাইভ-জি চালুর পরিকল্পনা
নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ২০২১-২৩ সালের মধ্যে ফাইভ-জি সেবার জন্য পরিকল্পনা ও একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সেপ্টেম্বরের শুরুতে কমিটি গঠন করে বিটিআরসি। এই কমিটি ফাইভ-জি প্রযুক্তি প্রবর্তনের লক্ষ্যে ২০২০ সালের জানুয়ারি নাগাদ পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা ও পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করবে।
বিটিসিএলে ১৫০ টাকায় যতখুশি কথা
টেলিফোন সেবা আরও জনবান্ধব করতে মাসিক ১৫০ টাকায় বিটিসিএল-বিটিসিএল যতখুশি কল এবং বিটিসিএল থেকে অন্য যেকোনো অপারেটরে ৫২ পয়সা মিনিট কলচার্জ নির্ধারণ করা হয়। ১৬ আগস্ট থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।
বিটিআরসি পেলো নিজস্ব ভবন
আগারগাঁওয়ে এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ১৩ মার্চ। এক একর জমির উপর ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ ভবনের নির্মাণ কার্যক্রম শেষ হবে বলে আশা করছে বিটিআরসি। দু’টি পূর্ণ ও একটি সেমি বেজমেন্টসহ ১২ তলা ভবনে মোট ফ্লোর স্পেস ৩৯ হাজার ৫২০.৬২ বর্গমিটার।
প্যাকেজের মেয়াদ তিন দিন
মোবাইল ফোনের সব ধরনের প্যাকেজের মেয়াদ ন্যূনতম তিন দিন নির্ধারণ করে দেয় বিটিআরসি। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়।
মোবাইল হ্যান্ডসেটের বৈধতা
অবৈধ ও চোরাই পথে মোবাইল ফোন আমদানি বন্ধ করে বৈধ আমদানিকারক ও দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে ‘এনওসি অটোমেশন অ্যান্ড আইএমইআই ডাটাবেজ’ (এনএআইডি) চালু করা হয়েছে। বিটিআরসির তত্ত্বাবধানে বিএমপিআইএ এর আর্থিক সহায়তায় এনএআইডি চালু করা হয় ২২ জানুয়ারি।
মোবাইল ইন্টারনেটের লুকোচুরি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে কয়েক দফা মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখার পর টুজি, থ্রিজি ও ফোরজি সেবা খুলে দেওয়া হয় ১ জানুয়ারি। আর দীর্ঘ আট মাস বন্ধ থাকার পর গত অক্টোবরে বিশ্বের প্রথম কমিউনিটি বাংলা ব্লগ 'সামহোয়্যারইন ব্লগ' খুলে দেওয়া হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের অংশ হিসেবে ২২ হাজার পর্ন সাইট ও দুই হাজার জুয়ার সাইট এবছর বন্ধ করেছে সরকার।
গত এক বছর টেলিযোগাযোগ খাতের জন্য কেমন ছিল- এ ব্যাপারে এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব.) বলেন, বিগত ২০১৯ সালকে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের জন্য একটি হতাশার বছর বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। এই সময়ে মোবাইল খাতে পর পর এমন অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে যা আগে কখনই ঘটেনি। বছরের প্রথম দশ মাসে নতুন ৭০ লাখ ভয়েস ও ৮০ লাখ ইন্টারনেট (ডাটা) গ্রাহক যুক্ত হলেও শিল্পের আর্থিক অবস্থা বরং আরো দুর্বল হয়েছে।
‘বছরের মাঝামাঝি জাতীয় বাজেটে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর কর বাড়ানো হয়; উপরন্তু লাভের মুখ দেখেনি এমন কোম্পানির সর্বনিম্ন করপোরেট কর অন্তত আড়াই গুণ বাড়ানো হয়- এটা ছিল মোবাইল খাতের জন্য একটি বড় ধাক্কা। অপরদিকে দুই অপারেটরের কাছে বিটিআরসির অডিট দাবি সংক্রান্ত জটিলতা পুরো শিল্পখাতকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়। এই জটিলতা টেলিযোগাযোগ যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী (ভেন্ডর) ও স্থানীয় সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহকেও (ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ) ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ কারণে নেটওয়ার্ক উন্নয়ন কার্যক্রম এবং বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে আসে। ’
‘এছাড়াও টাওয়ারকো লাইসেন্সধারীরা যেহেতু এখন পর্যন্ত তাদের কাজ শুরু করতে পারেনি তাই গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অপারেটররা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করতে পারেনি। এর প্রভাব এই খাতের সেবার সার্বিক মানের ওপর গিয়ে পড়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯
এমআইএইচ/এএ