ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

এভিয়েশন সেক্টর

শাহ আমানতে আলোচিত ‘ময়ূরপঙ্খী’ ছিনতাইচেষ্টা

তামিম মজিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯
শাহ আমানতে আলোচিত ‘ময়ূরপঙ্খী’ ছিনতাইচেষ্টা

ঢাকা: ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে চিরকালের জন্য বিদায় নিচ্ছে ২০১৯ সাল। আলোচিত অনেক ঘটনার জন্ম দেওয়া বছরটি নানা কারণেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে বিশ্ববাসীর কাছে। 

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বছরব্যাপী আলোচনায় উঠে এসেছে নানা ঘটনা। বাংলাদেশের এভিয়েশন সেক্টরও তা থেকে বাদ পড়েনি।

এ সেক্টরের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল, অস্ত্রের মুখে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ‘ময়ূরপঙ্খী’ উড়োজাহাজ ছিনতাইচেষ্টা।  

বাংলাদেশের মানুষের কাছে দেশের মাটিতেই বিমান ছিনতাইচেষ্টার এমন ঘটনা ছিল রীতিমত পিলে চমকে ওঠার মতো। সেদিন ওই বিমান ছিনতাইচেষ্টা ও তা উদ্ধারে কমান্ডো দলের রুদ্ধশ্বাস অভিযান দেশের মানুষের কাছে ছিল বাস্তবের এক ‘জেমস বন্ড সিরিজ’।  

প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল সেদিন? কেমন ছিল দমবন্ধ করা সেই মুহূর্তগুলো? চলুন ফিরে দেখা যাক চাঞ্চল্যকর সেই ঘটনার ইতিবৃত্ত।    

দিনটি ছিল এ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ১৪২ যাত্রী ও ৫ ক্রু নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য রওনা দেয় বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খী। বিজি-১৪৭ ফ্লাইট হিসেবে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের ওই উড়োজাহাজটি মূলত চট্টগ্রাম হয়ে চলে যাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাইয়ে।

ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫ হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল বিমানটি। এমন সময় যাত্রীর আসন ছেড়ে ককপিটের দিকে এগিয়ে যান এক ব্যক্তি। বিমানের এক ক্রুর কাছে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন তাকে এবং সঙ্গে সঙ্গে পিস্তল ও বোমাসদৃশ দুটি বস্তু বের করে বলেন, ‘আমি বিমানটি ছিনতাই করব। আমার কাছে পিস্তল ও বোমা আছে। ককপিট না খুললে আমি বিমান উড়িয়ে দেব। ’ এর মধ্যে অন্য কেবিন ক্রুরা ককপিটে থাকা পাইলট ও সহকারী পাইলটকে গোপনে সাংকেতিক বার্তা দেন যে, উড়োজাহাজে অস্ত্রধারী আছে, এটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা হচ্ছে।  ঠিক এসময় ময়ূরপঙ্খী চট্টগ্রাম ও ঢাকার মাঝামাঝি অবস্থান করছিল।  

সাংকেতিক বার্তা পেয়ে পাইলট মো. শফি ও সহকারী পাইলট মো. জাহাঙ্গীর উড়োজাহাজটির ককপিটের দরজা বন্ধ করে দেন ও জরুরি অবতরণের জন্য চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে বার্তা পাঠান। ওদিকে ককপিটের দরজা না খোলায় অস্ত্রধারী ওই ব্যক্তি চিৎকার করছিলেন। ততক্ষণে উড়োজাহাজ শাহ আমানতে বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর কৌশলে চারটি ইমারজেন্সি গেট দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের।  

এদিকে ময়ূরপঙ্খী ছিনতাই চেষ্টার খবরে তাৎক্ষণিক বিমানটি ঘিরে ফেলে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, আর্মড পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।  

প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাত সোয়া ৭টার দিকে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই অস্ত্রধারীকে আটক করা হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি মারা যান।  

সে সময় চট্টগ্রাম সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল মতিউর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বিমানের ভেতরে অভিযান চালানোর সময় ওই ব্যক্তিকে নিবৃত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানালে গুলি চালানো হয়। পরে তার মৃত্যু হয়েছে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরুলের নেতৃত্বে একটি সেনা কমান্ডো দল মাত্র ৮ মিনিটে ওই অভিযান শেষ করে। ওই একই দল ঢাকায় হলি আর্টিজান সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলায় অভিযান পরিচালনা করেছিল বলেও জানান তিনি।

মতিউর রহমান আরো জানান, নিহত ওই ব্যক্তি বলেছিলেন, তার নাম মাহাদি। তিনি বিমান ছিনতাই চেষ্টাকালে  প্রধানমন্ত্রী ও তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন।

বিমান সূত্রে জানায়, ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজটি ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বহরে যুক্ত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০০, ২০১৯
টিএম/এইচজে/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।