ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

রেলওয়ে: উন্নয়ন পরিকল্পনায় শুরু, দুর্ঘটনায় শেষ

জমির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯
রেলওয়ে: উন্নয়ন পরিকল্পনায় শুরু, দুর্ঘটনায় শেষ ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম: বছরের শুরুতে রেলওয়ের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ইন্দোনেশিয়া থেকে ২৫০টি কোচ ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৪০টি ইঞ্জিন আমদানি করার চুক্তিও সম্পন্ন  হয়। এসব কোচ ও ইঞ্জিন দিয়ে ১৫টি নতুন ট্রেন যুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে বছর শুরু হলেও, বছর শেষে তূর্ণা নিশীথা ও উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের কারণে এসব অর্জন ম্লান হয়ে যায়।

রেলওয়ে সূত্রমতে, দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮৯ সালে টঙ্গিতে। ওই ঘটনায় প্রাণ হারান ১৭০ জন।

তারপর ১৯৮৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের কাছাকাছি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ১৩ জন নিহত ও ২০১০ সালে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেন ‘মহানগর গোধূলি’ এবং ঢাকাগামী মেইল ‘চট্টলা’র মুখোমুখি সংঘর্ষ চালকসহ ১২ জন নিহত হন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আরও কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে। তবে গত ৫ বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মতো ভয়াবহ আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।

রেল কর্মকর্তারা বলছেন, রেলওয়ের ইতিহাসে ভয়াবহ যে দুর্ঘটনাগুলো ছিল, তার সবগুলো দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের কারণে। তারা বলছেন, সিগন্যালের সমস্যা, চালকের অবহেলা ও ট্রেন পরিচালনায় দুর্বলতার কারণে প্রাণহানি চাইলেই  এড়ানো সম্ভব ছিল।

চলতি বছরের ১১ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৬জন নিহত ও অর্ধ-শতাধিক যাত্রী আহত হওয়ার পর সারাদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। দুর্ঘটনার পরপরই রেলপথ মন্ত্রণালয়ের গঠিত তিনটি তদন্ত কমিটি চালক, সহকারী চালক ও ট্রেন পরিচালকের অবহেলাকে দায়ী করেন। তূর্ণার চালক ও সহকারী চালক ঘুমে থাকার কারণে ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনা ঘটে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে।

চালকদের নজরদারিতে সিসি ক্যামেরা

দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি বেশ কিছু সুপারিশও করে। সেগুলো হলো- লোকোমোটিভে ও ট্র্যাকে ডিভাইস বসানো, বেশি সতর্কতার সঙ্গে সিগন্যাল পর্যবেক্ষণ, সব ট্রেনে চালক ও গার্ডদের রেলওয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মোবাইল সিম ব্যবহার ও ট্রেনে ওয়াকিটকি সব সময় সচল এবং কার্যকর রাখা।

পরে ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রেলের দুর্ঘটনা রোধে ট্রেন চালকদের পর্যবেক্ষণে রাখতে প্রতিটি ট্রেনের ইঞ্জিনে সিসি ক্যামেরা বসানোর সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি রেললাইনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি করতে সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি।

নতুন বছরে যুক্ত হচ্ছে ১৫টি ট্রেন

বছরের শুরুতে রেলওয়ের উন্নয়নে বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ইন্দোনেশিয়া থেকে ২৫০টি কোচ ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৪০টি ইঞ্জিন আমদানি। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে ২৬টি নতুন কোচ চলে এসেছে দেশে।

এর মধ্যে রয়েছে মিটারগেজের ৫৫ আসনের পাঁচটি এসি চেয়ার কোচ, ৬৬ আসনের ১৬টি শোভন চেয়ার কোচ, ১৭ বার্থে ৩৪ আসনের দুটি এসি স্লিপার কোচ, একটি পাওয়ার কার ও দুটি ডাইনিং কার। বাকি কোচগুলোও নতুন বছরে চলে আসবে।

এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া থেকে নতুন বছরে পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের জন্য ৪০টি ইঞ্জিন আনা হচ্ছে। এরমধ্যে ১০টি ইঞ্জিন পূর্বাঞ্চলের জন্য, বাকিগুলো পশ্চিমাঞ্চলের। এসব কোচ ও ইঞ্জিন দিয়ে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে ১৫টি নতুন ট্রেন চালু করা হবে বলে ঘোষণা দেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।

রেলসচিব মোফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দুর্ঘটনার পর আমরা সবকিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। রেলওয়েকে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে ট্রেনে কালোবাজারি রোধে বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নামে টিকিট সংরক্ষণ পদ্ধতি বাতিল করা।

তিনি বলেন, নতুন বছরে নতুন ট্রেনগুলো যুক্ত হলে যাত্রীদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যাবে। এছাড়া রেলের উন্নয়নে আরও কিছু পরিকল্পনা আসছে। সবমিলিয়ে ২০২০ সালে রেলওয়ের সেবায় আমূল পরিবর্তন আসবে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, পূর্বাঞ্চলে অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও ভোগান্তি দূর করতে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯
জেইউ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।