ট্রাম্প-কিম দ্বিতীয় বৈঠক
পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে চলতি বছরের শুরুতে বৈঠকে মিলিত হন উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভিয়েতনামের হ্যানয়ে হয় এ বৈঠক।
কিমের সঙ্গে ট্রাম্পের হ্যান্ডশেক
পর পর দুটি বৈঠক বিফলে যাওয়ার পর কিম জং উন লাগাতার হুমকি দিয়ে আসছিলেন যুক্তরাষ্ট্রকে। এরমধ্যেই চলতি বছরের জুনে হঠাৎ ট্রাম্প টুইটারে জানান, তিনি কিম জং উনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতে ইচ্ছুক।
ট্রাম্পের এই ইচ্ছেকে তখন অনেকে আকাশ কুসুম কল্পনা বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। অনেকে এরকম কোনো ঘটনা ঘটতে পারে তা বিশ্বাস করতে চাননি। কিন্তু ট্রাম্প ঠিকই কিমের সঙ্গে দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে বেসামরিক এলাকায় হ্যান্ডশেক করে এসেছেন। একইসঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে পা রেখেছেন উত্তর কোরিয়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন ভূপাতিত করলো ইরান
হরমুজ প্রণালী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা তখন তুঙ্গে। ওমান উপসাগরে তেলবাহী জাহাজে রহস্যপূর্ণ হামলা এর প্রধান কারণ। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন গ্লোবাল হক আরকিউ-৪ ভূপাতিত করে ইরান। দেশটির দাবি, তাদের আকাশসীমা অতিক্রম করেছে বলেই ভূপাতিত করা হয়েছে ড্রোনটি। যদিও ইরানের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাম্প ইরানে সামরিক হামলার নির্দেশ দিয়েও শেষ মুহূর্তে বাতিল করেছিলেন।
সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার বিচার
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটে নিজের কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করার জন্য গিয়েছিলেন স্বেচ্ছায় নির্বাসনে থাকা সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি। সেখানেই ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর হত্যা করা হয়। হত্যা শুধু নয় নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছিল তার মরদেহও।
নিজেদের মাটিতে এমন ঘটনা তুরস্ক স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। তারা তদন্তের মাধ্যমে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। প্রথমদিকে সৌদি আরব বিষয়টি উড়িয়ে দিলেও পরে তা মেনে নিতে বাধ্য হয়। হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধেই ছিল অভিযোগ।
সম্প্রতি এ ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনকে ২৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন সৌদি আরবের একটি আদালত। যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসিত জামাল খাশোগি ছিলেন বাদশাহ-যুবরাজসহ সৌদি রাজপরিবারের কট্টর সমালোচক।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের ‘বলি’ হুয়াওয়ে
অর্থনৈতিক, সামরিক শক্তি, প্রযুক্তি খাত, কৃষিসহ প্রায় সবক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিচ্ছে চীন। আর তা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে অসাম্যের কথা বলে চীনা পণ্যে শুল্কারোপের মাধ্যমে শুরু করা ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এখনো থামেনি। বৈঠকের পর বৈঠক আয়োজিত হলেও কোনো কূল কিনারা বের করতে পারছেন না দুই দেশের কর্মকর্তারা। এরমধ্যে দুই দেশের নানা খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলেও চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘হুয়াওয়ের’ বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বড় ধরনের বিপদে ফেলেছে চীনা এ টেক জায়ান্টকে। স্মার্টফোনের বাজারে যেভাবে হুয়াওয়ে জোয়ার শুরু হয়েছিল থমকে গেছে তা হঠাৎ করেই।
বাতিল হলো ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা
ভারতীয় সংবিধানে ৩৭০ ধারার কারণে জম্মু ও কাশ্মীর অন্য যেকোনো ভারতীয় রাজ্যের চেয়ে বেশি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতো। এছাড়া এই ধারাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এর ভিত্তিতেই কাশ্মীর রাজ্য ভারতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
বিরোধীদের তুমুল বাধা ও বাক-বিতণ্ডার মধ্যে চলতি বছরের আগস্টে সংসদে এই ধারা রহিত করার ঘোষণা দেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এরপর থেকে ভারতীয় সেনা-আধা সামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েনের কারণে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে আছে পৃথিবীর ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মীর।
ব্রেক্সিট ইস্যু
ব্রেক্সিট প্রশ্নে বছরজুড়ে উত্তাল ছিল যুক্তরাজ্যের রাজনীতি। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে টেরিজা মের পদত্যাগের পর এলেন বরিস জনসন। এরপর দেশটিতে আলোচনায় আসে ‘নো ডিল ব্রেক্সিট’ অর্থাৎ কোনো চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি। কিন্তু এ পরিকল্পনাও কাজে এলো না। ফের আয়োজিত হলো নির্বাচন। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আসন জিতে ক্ষমতায় আসে বরিসের কনজারভেটিভ পার্টি। এবার দেখার পালা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়া যাওয়ার প্রক্রিয়াটা কেমন হয়।
বাগদাদী ‘নিহত’
ইসলামিক স্টেট গ্রুপ বা আইএসের স্বঘোষিত ও পলাতক ‘খলিফা’ আবু বকর আল-বাগদাদীকে হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে হত্যা করা হয় বলে চলতি বছরের অক্টোবরে ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগেও আইএসের এ নেতা নিহত হয়েছিলেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।
দেশ ছাড়তে হলো বলিভিয়ার ইভো মোরালেসকে
চলতি বছরের অক্টোবরে বলিভিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এতে পুনরায় নির্বাচিত হন ইভো মোরালেস। কিন্তু তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কার্লোস মেসা এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেন। ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ এনে দাবি করেন নতুন নির্বাচনের। তার পক্ষে দাঁড়ায় অরগানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস (ওএএস)। মেসার দাবিতে সমর্থন জানায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশকিছু দেশও। এরপর থেকেই দেশটিতে তীব্র বিক্ষোভ এবং সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৬ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা এ নেতাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এমনকি তাকে ছাড়তে হয় দেশও।
মোরালেস এ ঘটনাকে ‘ক্যু’ হিসেবে অভিহিত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই তার অভিযোগ। তিনি বলেন, বলিভিয়ার লিথিয়ামের ভাণ্ডার লুট করার জন্য এই সামরিক ক্যু’ ঘটানো হয়েছে। লিথিয়াম হচ্ছে ল্যাপটপ এবং ইলেকট্রনিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু সামগ্রীর ব্যাটারির জন্য মৌলিক উপাদান। বিশ্বে লিথিয়ামের ৭০ ভাগ বলিভিয়ায় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
সাদ হারিরি পদত্যাগ
লোবাননে নিজেদের সমর্থিত সরকারকে বসাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তারা কোনোভাবেই ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর সদস্যদের সরকারে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে নয়। এটা চায় না সৌদি আরবও। ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার মধ্যেই দুর্নীতির প্রতিবাদে লেবাননে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চাঙ্গা হয় এ বছরের শেষের দিকে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু শতচেষ্টা করেও ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেনি সরকার। পদত্যাগ করতে হয়েছে সাদ হারিরিকে।
সৌদি আরবে ‘হালাল নাইট ক্লাব’
তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরব আয়ের ভিন্ন ভিন্ন পথ খুলতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরে। একইসঙ্গে দেশটি ধর্মীয় লেবাস খুলে উদার রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠায়ও নিয়েছে বেশ কিছু উদ্যোগ। হালাল নাইটক্লাব এ উদ্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। জেদ্দার এ নাইট ক্লাবের মধ্যে অন্য নাইট ক্লাবের পার্থক্য রয়েছে। এখানকার সব খাবার হবে হালাল। এর আগে নারীরা দেশটিতে গাড়ি চালানো, মাঠে বসে খেলা দেখার অনুমতি পেয়েছিলেন। চালু করা হয়েছে সিনেমা হলও।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯
এইচএডি/এজে