এছাড়া ঋণ কেলেঙ্কারি মামলার ভুল আসামি পাটকল শ্রমিক জাহালমকে মুক্ত করার বিষয়টি আদালতের নজরে এনেছিলেন এক আইনজীবী। পরে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে এ ব্যাপারে রুলসহ আদেশ দেন।
রাজীব
২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে হাতকাটা পড়ে তিতুমীর কলেজছাত্র রাজীবের। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
ওই ঘটনায় হাইকোর্ট কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুল জারিসহ রাজীবের চিকিৎসার খরচ দুই বাস মালিক বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে বহনের জন্য স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্দেশ দেন।
এ রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত বছরের ১৬ এপ্রিল রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় রাজীবের।
এদিকে বাস মালিকদের আপিলের পর গত বছরের ২২ মে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ ওই ঘটনায় দুই বাস কর্তৃপক্ষের মধ্যে কারা দায়ী ও ক্ষতিপূরণ নিরূপণ করতে একটি ‘স্বাধীন কমিটি’ গঠনে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেন।
পরে ওই কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে হাইকোর্ট রাজীবের দুই ভাইয়ের কাছে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেন অভিযুক্তদের। এরপর হাইকোর্ট বিভাগ কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটির প্রতিবেদনের পর ২০ জুন রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
রায়ে হাইকোর্ট বিভাগ রাজীবের পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা করে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে স্বজন পরিবহন। সেটি এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
রাসেল সরকার
গত বছরের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিনলাইন পরিবহনের এক বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে আরেক প্রাইভেটকার চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট আবেদনটি দায়ের করেন সংরক্ষিত আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ও বর্তমানে কৃষকলীগের নব নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী উম্মে কুলসুম স্মৃতি। এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৪ মে রাসেলকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
এর মধ্যে রাসেলের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়, বাস কর্তৃপক্ষ তার কোনো খোঁজখবর নেয়নি। পরে গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপুরণ ও তার চিকিৎসার খরচ বহন করতে নির্দেশ দেন গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে। এর বিরুদ্ধে আপিলে গিয়ে বিফল হয় গ্রিনলাইন।
পরবর্তী সময়ে তারা ক্ষতিপূরণবাবদ ১০ লাখ টাকা ও চিকিৎসার জন্য আরও কিছু খরচ দেন রাসেল সরকারকে। ওই সময় আদালত তাদের কিস্তিতে ক্ষতিপূরণ পরিশোধের নির্দেশ দেন। পরে তারা ফের আপিল বিভাগে গেলে আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। পরে হাইকোর্টে বিষয়টি রুল শুনানির জন্য ওঠে। এখন এটি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
জাহালম
চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘’৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে, ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না...’’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘স্যার, আমি জাহালম। আমি আবু সালেক না… আমি নির্দোষ। ’ আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটির বয়স ৩০-৩২ বছরের বেশি না। পরনে লুঙ্গি আর শার্ট। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ বিচারকের উদ্দেশে তাকে বারবার বলতে দেখা যায়, ‘আমি আবু সালেক না। ’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন ও আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন এই জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক।
ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। এর পরিপ্রক্ষিতে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা, মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এছাড়া রুলও জারি করেন আদালত।
পরে ৩ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টরা হাজিরের পর হাইকোর্ট জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন এবং দুদকের কাছে ঘটনার বিষয়ে হলফনামা আকারে জানতে চেয়েছেন। সে আদেশ অনুসারে দুদক হলফনামা আকারে তা উপস্থাপন করেন।
পরে জাহালম প্রশ্নে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ৩৩ মামলার এফ আই আর, চার্জশিট, সম্পূরক চার্জশিট এবং এ সংক্রান্ত সব ব্যাংকের নথিপত্র দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দেন।
এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল হাইকোর্ট জাহালমকাণ্ডে কে বা কারা দায়ী তা দেখার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদন চেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে এসব মামলায় দুদক, ব্র্যাক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। এ ঘটনায় কারা দায়ী এবং জাহালমকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে হাইকোর্টে সব পক্ষের শুনানি অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
ইএস/এইচজে