ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

২০১৯-এ বিশ্বের আলোচিত নির্বাচন!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
২০১৯-এ বিশ্বের আলোচিত নির্বাচন! ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: শেষ প্রান্তে ২০১৯। নানা ঘটনা বছরটিকে আলোচিত করে রেখেছে। এ বছর বদলেছে বহু দেশের পরিস্থিতি, অর্থনীতি, জীবনের মান। এ বছরেই পরিবর্তন ঘটেছে বিশ্বের বহু দেশের নেতৃত্বও। নির্বাচনের মাধ্যমে ওইসব দেশের জনগণ বেছে নিয়েছেন তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিনিধিদের। তবে কোথায়ও ঘটেছে এর ব্যতিক্রমও। 

২০১৯ সালে বিশ্বের বহু দেশে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনের মধ্যে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বেশ কিছু দেশের নির্বাচন। এমন কিছু নির্বাচনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য।

ভারতের সাধারণ নির্বাচন
বাংলাদেশের প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র হওয়ায় এবার আলোচনার শীর্ষে ছিল ভারতের লোকসভা নির্বাচন। গত ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ১৯ মে পর্যন্ত ৭ ধাপে অনুষ্ঠিত হয় দেশটির সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন।

এবারের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি। একইভাবে দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন নরেন্দ্র মোদী। দেশটির ৫৪৫টি আসনের মধ্যে ৩০৩টিই পায় বিজেপি। অন্যদিকে এবারও ‘ভরাডুবি’ হয় প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের। তারা পায় ৫২টি আসন।

ভারতে সরকার গঠনের জন্য ২৭২ আসন প্রয়োজন হলেও বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) পেয়েছে ৩৩৮টি আসন। তবে জোট ছাড়াই সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় আসন পেয়ে গেছে মোদীর বিজেপি। তারা একাই জয় পেয়েছে ৩০৩টি আসনে। এছাড়া প্রধান বিরোদীদল কংগ্রেস পেয়েছে ৫২টি, তৃণমূল পেয়েছে ২২টি। এছাড়া অন্যান্য দলগুলো বাকি ১৬৬টি আসন পায়। আর দুটি আসন সংরক্ষিত ছিল অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের জন্য।

ব্রিটিশ নির্বাচন
ব্রেক্সিট ইস্যুতে দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে। এরপর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আসেন তারই দল কনজারভেটিভ পার্টির বরিস জনসন। তবে তিনিও ব্রেক্সিট ইস্যুর কোনো সুরাহা করতে না পেরে ডাক দেন আগাম নির্বাচনের।

এরপর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১২ ডিসেম্বর ব্রিটেনের ইতিহাসে যোগ হয় আরেকটি সাধারণ নির্বাচন। প্রতিদ্বন্দ্বী জেরমি করবিনের লেবার পার্টিকে হারিয়ে এ নির্বাচনে জয় হয় বরিসের কনজারভেটিভ পার্টির।

নির্বাচনে ৬৫০টি আসনের মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টি পায় ৩৬৫টি। আর লেবার পার্টি ২০৩ আসন পায়। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) পায় ৪৮টি। বাকি ৩৪টি আসন পায় অন্যান্য দলগুলো।

সরকার গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ৩২৬টি আসনে জয় প্রয়োজন ছিল। প্রয়োজনের চেয়েও বেশি আসনে জয়ী হয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি।

এখন যুক্তরাজ্যসহ বিশ্ববাসীর অপেক্ষা, জনসনের নেতৃত্বে কোন দিকে মোড় নেবে ব্রেক্সিট!

কানাডার নির্বাচন
টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে পারেনি জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টি। গত ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় কানাডার ৪৩ তম সাধারণ নির্বাচন।  

দেশটির হাউস অব কমন্সের ৩৩৮ আসনের মধ্যে লিবারেল পার্টি পেয়েছে ১৫৭টি। অন্যদিকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু শেয়ারের কনজারভেটিভ পেয়েছে ১২১টি আসন। এছাড়া ব্লক কুবেকুয়া, নিউ ডেমোক্রেটিক ও গ্রিন পার্টি অব কানাডা পেয়েছে যথাক্রমে ৩২, ২৪ ও ৩টি আসন।

৩৩৮ আসনের এই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে প্রয়োজন ১৭২ টি আসনের। কিন্তু ১৭২ আসন না পাওয়ায় সংখ্যালঘু সরকার গঠন করেছেন জাস্টিন ট্রুডো।

শুধু নিজ দেশ কানাডাই নয়, বিশ্বে সুনাম কুড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন ট্রুডো। কিন্তু নির্বাচনের আগে হঠাৎই ‘বর্ণবাদ’ ইস্যুতে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। বিশ্লেষকদের মতে, সেই কারণেই হয়তো সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে হয়েছে জাস্টিন ট্রুডোকে।

শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবে রাজাপাকসে, প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।  ছবি: সংগৃহীত

শ্রীলংকা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
ইস্টার সানডে উদযাপনের সময় শ্রীলংকার বিভিন্ন গির্জা ও হোটেলে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারায় বিদেশিসহ তিন শতাধিক মানুষ। দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের মধ্যকার ‘দ্বন্দ্ব’র কারণেই দেশটিরতে এত বড় হামলা চালানো সম্ভব হয়েছে বলে ধারণা সাধারণ মানুষের। এরপর এ ইস্যুতেই প্রশ্ন উঠে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় থাকা নিয়ে।

অন্যদিকে ২০১৫ সালের নির্বাচনে হেরে ক্ষমতা হারানোর আগে একটানা ১০ বছর দেশ শাসন করেন শ্রীলংকার সাবেক দুইবারের প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে। এরপর ফের নিজের ক্ষমতা ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন মাহিন্দা।  

এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহকে বরখাস্ত করে ‘বিতর্কিত’ এক পদ্ধতিকে (প্রেসিডেন্ট ক্যু) ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর মাহিন্দাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। সিরিসেনার এ পদক্ষেপ নিয়ে শ্রীলংকায় নজিরবিহীন সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হয়।

পরে সুপ্রিম কোর্ট সিরিসেনার পদক্ষেপ বেআইনি বলে রায় দিলে ২০১৮ সালের ১৫ ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন ‘বিতর্কিত’ প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। এরপর ফের প্রধানমন্ত্রী হন রনিল বিক্রমাসিংহে।

পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় শ্রীলংকার অষ্টম প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশন। এবারের নির্বাচনে মাহিন্দা রাজাপাকসে আর প্রার্থী হননি। দাঁড় করিয়েছন ছোটভাই গোতাবে রাজাপাকসেকে।  

নির্বাচনে ৫২ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয় লাভ করেন গোতাবে রাজাপাকসে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসা পান ৪২ শতাংশের কাছাকাছি ভোট।

সবশেষ নিজদলীয় প্রার্থী সাজিথ প্রেমাদাসা প্রেসিডেন্ট পদে হেরে যাওয়ায় নিয়মানুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে রানিল বিক্রমাসিংহের পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এরপর গত ২০ নভেম্বর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের বড়ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসের নাম ঘোষণা করেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট গোতাবে রাজাপাকসে।

অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচন
গত ১৮ মে অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়ার ৪৬তম জাতীয় নির্বাচন। এতে জয় পেয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন লিবারেল ও ন্যাশনাল পার্টির জোট। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো জয়লাভ করলো জোটটি। আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন লিবারেলের স্কট জন মরিসন।

দেশটির ১৫১টি নির্বাচনী আসনে ভোটগ্রহণ করা হয়, যার মধ্যে সরকার গঠন করতে ৭৬টি আসনে জয় প্রয়োজন হয় একটি দলের। ৭৭টি আসনে জয় লাভ করে সরকার গঠন করেছে লিবারেল ও ন্যাশনাল পার্টি জোট দল। অন্যদিকে প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টি পেয়েছে ৬৮টি আসন। এছাড়া অন্যান্য দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছে ৬টি আসনে।

ইউক্রেনে নির্বাচন
২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর হঠাৎই প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন কৌতুক অভিনেতা ভলোদিমির জেলেনস্কি। তখন খুব কম লোকই তা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয় তাকে নিয়ে।

পরে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ ইউক্রেনে প্রথম ধাপে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু প্রথম ধাপে প্রার্থীদের কেউ-ই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি।  

তবে সেই সময় কেউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও অবাক করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কোর থেকেও এগিয়ে ছিলেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। এরপরই তাকে নিয়ে কৌতূহল শুরু হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।

পরে গত ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কোকে হারিয়ে নির্বাচনে জয়ী হন ৪১ বছর বয়সী কৌতুকাভিনেতা ভলোদিমের জিলেনস্কি। নির্বাচনে ৭৩ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন জেলেনস্কি। অন্যদিকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পোরোশেঙ্কো পেয়েছেন মাত্র ২৪ শতাংশ ভোট।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
এসএ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।