ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

টাইগার যুবাদের বিশ্বজয়ই বছরের সেরা প্রাপ্তি

রিফাত আনজুম, স্টাফ করেসপন্ডন্ট, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২০
টাইগার যুবাদের বিশ্বজয়ই বছরের সেরা প্রাপ্তি

দেখতে দেখতে ২০২০ সালের শেষ সপ্তাহ চলে এলো। সময়ে অতল গর্ভে হারিয়ে যাবে আরও একটি বছর।

দেশের ক্রিকেটাঙ্গনের অন্যতম একটি ব্যস্ত সময় পার করার কথা ছিল এই বছরটি। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে মার্চের পর থেকে পুরো বছরটি মাঠের বাইরে পার করতে হয়েছে। তার আগ পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকটি সিরিজ খেলেছে জাতীয় দল।

প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ২০২০ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেট কেমন ছিল সেটাই দেখে নেওয়া যাক।

বছরের শুরুতেই জানুয়ারিতে পাকিস্তান সফরে যায় টাইগাররা। নিরাপত্তাজনিত কারণে তিন ধাপে পাকিস্তান সফরের প্রথম ধাপের সফর শুরু হয় জানুয়ারিতে। ২৪, ২৫ ও ২৭ জানুয়ারি তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। একটি ম্যাচ বৃষ্টি কারণে পরিত্যক্ত হয়। বাকি দুটি ম্যাচ শোচনীয়ভাবে হেরে দেশে ফিরে আসে মাহমুদউল্লাহর দল।

ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়েকে আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে একটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও দুটি টি-টোয়েন্টি খেলতে সফরে আসে জিম্বাবুইয়ানরা। একমাত্র টেস্টে টাইগারদের কাছে পাত্তা পায়নি সফরকারীরা। ইনিংস ও ১০৬ রানের বড় ব্যবধানে হারে জিম্বাবুয়ে।

ওয়ানডে সিরিজেও টাইগারদের কাছে পাত্তা পায়নি জিম্বাবুয়ে। তবে ওয়ানডে সিরিজ আলোচিত ছিল মশরাফির ‘অধিনায়কত্বকে’ বিদায় বলার কারণে। শেষ ওয়ানডের আগে ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দেন অধিনায়ক হিসেবে শেষ ওয়ানডে সিরিজ নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। তাই তো মাশরাফির এমন ঘোষণায় আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।

টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজেও দাপট দেখায় টাইগাররা। দুই ম্যাচ জিতে পুরো সিরিজটাই জিম্বাবুয়েকে হোয়াটওয়াশ করে রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা।

ফেব্রুয়ারি মাসেই দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় অর্জন আসে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হাত ধরে। যেই অর্জনটা দেশের ক্রিকেটের জন্য প্রথমবার তারা বয়ে নিয়ে আসে। আকবর আলীর হাত ধরে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। প্রথমবার কোনো সংস্করণে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মর্যাদা পায় বাংলাদেশ।

দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে ভারতকে ৩ উইকেটে হারায় জুনিয়র টাইগাররা। প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনো ইভেন্টে শিরোপা জেতে আকবর আলীর দল, তাও আবার বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে। শুধু এই বছর নয় দেশের ক্রিকেটেরই সেরা প্রাপ্তি টাইগার যুবাদের বিশ্বজয়।

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দেশে শুরু হতে থাকে করোনার প্রভাব। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ১৫ মার্চ ১২টি দল নিয়ে মাঠে গড়ায় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) ২০১৯-২০ মৌসুমের খেলা। কিন্তু সেসময়ই দেশের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সব ধরনের খেলাধুলা বন্ধ ঘোষণা করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ মার্চ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সব ধরনের ক্রিকেট স্থগিত ঘোষণা করেন।

শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয় পুরো ক্রিকেট বিশ্বেই এর প্রভাব পড়ে। যার ফলে একে একে বাংলাদেশের আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা সিরিজ স্থগিত হয়ে যায়। ক্রিকেটাররা হয়ে পড়েন ঘর বন্দি। জুলাই পর্যন্ত ক্রিকেটারার মাঠেই ফিরতে পারেনি।

তবে ক্রিকেটাররা একেবারেই বসে ছিলেন না। সবাই সবার জায়গা থেকে ফিটনেস নিয়ে কাজ করে গেছেন। তবে এর বাইরেও তারা বিভিন্ন ধরনের সামজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। করোনায় কষ্ট পাওয়া মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান সহ প্রায় সব ক্রিকেটার। এমনকি নিষেধাজ্ঞায় থাকা সাকিব আল হাসানও এই কর্মকাণ্ডে অংশ নেন।

সংসদ সদস্য হওয়ায় মাশরাফি নিজ এলাকা নড়াইলে মানুষের পাশে গিয়ে দাড়ান। সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাড়াতে ১৬ বছর ধরে ব্যবহার করা নিজের প্রিয় ব্রেসলেটটা নিলামে তোলেন। দেশীয় এক সংগঠন ৪২ লাখ টাকায় সেটি কিনে নেয়।

মুশফিকুর রহিম টেস্ট ক্যারিয়াররে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি যে ব্যাটটি দিয়ে করেন সেই স্মারক ব্যাটটি নিলামে তোলেন করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে এসে দাঁড়াতে। ব্যাটটি ১৮ লাখ টাকায় কিনে নেন ক্রিকেট বিশ্বের আরেক নন্দিত তারকা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি। সাকিব আল হাসান ২০১৯ সালের যে ব্যাট দিয়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স করেছিলেন সেই ব্যাটটি নিলামে তোলেন। ২০ লাখ টাকায় সেই ব্যাটটি কিনে নেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশি। ছাড়াও তামিম, তাসকিনসহ অন্যান্য ক্রিকেটাররা ব্যক্তিগত ও দলীয়ভাবে করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে এসে দাঁড়ান।

করোনা মহামারি বিরতির পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) তত্বাবধানে ১৯ জুলাই থেকে নয় জন ক্রিকেটার ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সামাজিক দূরত্ব বজায় ব্যক্তিগত অনুশীলন শুরু করেন। পরে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য ক্রিকেটাররটাও অনুশীলন শুরু করেন।

অক্টোবর মাসে দেশের ক্রিকেটের অন্য কোনো কার্যক্রম না থাকলেও দেশের ক্রিকেটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা ঘটে। মার্চের ক্রিকেট স্থগিত হওয়ার পর অক্টোবর মাসে তিন দল নিয়ে বিসিবি আয়োজন করে বিসিবি প্রেসিডেন্ট কাপ। করোনা থেকে রক্ষা পেতে পুরো টুর্নামেন্টটি বিসিবি ক্রিকেটারদের জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে রেখে আয়োজন করে। নাজমুল একাদশকে হারিয়ে এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতে মাহমুদউল্লাহ একাদশ।

২৯ অক্টোবর দেশের ক্রিকেটের আরও গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল। সব ধরনের ক্রিকেটে থেকে আইসিসির এক বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবার মুক্ত হন সাকিব আল হাসান। জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করার অপরাধে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর সবধরনের ক্রিকেট থেকে সাকিবকে আইসিসি এক বছর নিষিদ্ধ করেছিল।

করোনার পরে নভেম্বরে বিসিবি এবার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আয়োজন করে। দেশীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে আয়োজন করা হয় ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ। পাঁচ দলের অংশগ্রহণে এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে ৫ রানে হারিয়ে শিরোপা জেতে জেমকন খুলনা।

এই টুর্নামেন্ট দিয়ে শেষ হয় করোনাময় ২০২০ সালের বাংলাদেশের ক্রিকেট। জাতীয় পর্যায়ে শীর্ষ স্থানীয় থাকা ক্রিকেটাররাই ক্রিকেটে ফিরতে পেরেছেন করোনার পর। তবে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগে খেলা ক্রিকেটার ও নারী ক্রিকেটাররা এখনো ক্রিকেটে ফিরতে পারেনি। বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন করোনার ভ্যাকসিন আসলে অথবা করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে দেশের ক্রিকেট আবার আগের মতো প্রাণ ফিরে পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২০
আরএআর/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।