ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

ফিরে দেখা ২০২১: নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক রায়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২১
ফিরে দেখা ২০২১: নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক রায়

ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার নিষ্ঠুর ও মর্মান্তিক ঘটনার রায়কে ঘিরে ঢাকার আদালতপাড়ার দিকে দৃষ্টি ছিল সমগ্র জাতির।

এই মামলার ২৫ আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছিল সমগ্র দেশে এক আলোচিত ঘটনা।

বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ দণ্ডিত ২৫ আসামিই সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ছিলেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খুনের ঘটনায় অতীতে এমন বড় শাস্তির ঘটনা ঘটেনি। তাই এই রায়কে অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আদালতের পর্যবেক্ষণেও তাই বলা হয়েছে।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। মাত্র ৩৭ দিনে তদন্ত শেষ করে একই বছরের ১৩ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। চার্জশিটে ২৫ জনকে আসামি এবং রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী করা হয় ৬০ জনকে।

চার্জশিট দাখিলের পর ২০২০ সালের ১৫ মার্চ মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ স্থানান্তরের আদেশ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়। একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।

করোনা পরিস্থিতির কারণে বিচারকাজে বিঘ্ন ঘটে। শেষ পর্যন্ত বিচার শুরুর এক বছর দুই মাসের মধ্যে পুরো কার্যক্রম শেষে গত ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের মাধ্যমে বিচারকাজ শেষ হয়। ওইদিনই বিচারক রায়ের জন্য ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। বিচার চলাকালে আবরারের বাবাসহ মোট ৪৬ সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দেন।

এই মামলায় চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে ২১ জনকে তদন্ত চলাকালে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু। পরে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে তাদের বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।

বিচার শুরুর প্রাক্কালে মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামে পলাতক এক আসামি পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। এই মামলায় পলাতক রয়েছেন তিন আসামি। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ।  

আসামিদের মধ্যে অমিত সাহা, ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, মোহাম্মদ আকাশ হোসেন, মুহতাসিম ফুয়াদ ও মোয়াজ ওরফে আবু হোরায়রা মোয়াজ ছাড়া বাকি সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। আর এই পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
 
আদালতের রায়ে এই হত্যাকাণ্ডকে নিষ্ঠুর এবং এই শাস্তিকে ভবিষ্যত অপরাধ পুনরাবৃত্তি রোধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক বলে উল্লেখ করা হয়। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, নিঃসন্দেহে সব আসামি পরস্পরের যোগসাজসে একে অপরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদ রাব্বীর বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মম এবং নিষ্ঠুরভাবে তাকে হত্যা করেছে। যা বাংলাদেশের সব মানুষকে ব্যথিত করেছে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মত ঘটনার  পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনও না ঘটে তা রোধকল্পে অত্র ট্রাইব্যুনালে সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২১
কেআই/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।