ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

বছর জুড়েই গতিশীল ছিল পুঁজিবাজার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২১
বছর জুড়েই গতিশীল ছিল পুঁজিবাজার

ঢাকা: পুঁজিবাজারের গুণগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বিদায় নেয় ২০২১ সাল৷ দীর্ঘ এক দশক পর ২০২১ সাল পুরোটা জুড়েই দেশের পুঁজিবাজার ছিল গতিশীল৷ বিদায়ী বছরে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কঠোরতম লকডাউনের মধ্যেও ব্যাংকিং কার্যক্রমের সঙ্গে সংগতি রেখে দেশের পুঁজিবাজার চালু থাকে৷ বাজার মূলধন ও লেনদেনে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেশের শেয়ারবাজার।

নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেও অভাবনীয় ভালো অবস্থান ধরে রাখে দেশের পুঁজিবাজার।

বিদায়ী বছরের অর্জন সম্পর্কে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়া বলেন, দীর্ঘ এক দশক পর নতুন এক রেকর্ড সৃষ্টি করেছে দেশের শেয়ারবাজার৷ ডিএসই’র ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন৷ লেনদেনের পাশাপাশি অনেকগুলো কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে৷ আর বেশ কিছু কার্যক্রম বিশেষ করে নতুন প্রোডাক্ট ইটিএফ চালু নতুন বছরের শুরুর দিকেই বাস্তবায়িত হবে বলে আমি আশাবাদি৷ আমরা ভাল মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির জন্য দেশের শীর্ষস্থানীয় গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছি৷ বিশেষ করে আইটি স্টাটআপ কোম্পানিগুলোর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে এসএমই মার্কেটকে আরও গতিশীল করা হবে৷ এছাড়াও প্রযুক্তিগত ও আইনগত সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নতুন বছরের প্রথমার্ধেই আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আনার চেষ্টা করবো৷ এর জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের মধ্যেই শুরু হয়েছে৷ আশা করি এসব অর্জন নতুন বছরে পুঁজিবাজারের এক নতুন মাত্রা যোগ করবে৷

টেকসই উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ডিএসই’র ৫৪টি নতুন ট্রেক হস্তান্তর দেশের পুঁজিবাজার প্রসারে এক অনন্য উপহার৷ এরই ধারাবাহিকতায় নতুন এবং পুরাতনদের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় রচিত হবে আগামীদিনের পুঁজিবাজারের শক্তিশালী ভীত৷ তারল্য সংকটে শেয়ারবাজারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিনিয়োগ কার্যক্রমের মাধ্যমে বাজারকে স্বাভাবিক করার লক্ষে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিতরণ না হওয়া লভ্যাংশ নিয়ে শেয়ারবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিল গঠন করা হয়েছে৷

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আনুপাতিক হারে শেয়ার বরাদ্দের জন্য এক্সচেঞ্জে ইলেক্ট্রনিক সাবস্ক্রিপশন সিস্টেম-এর উদ্বোধন করা হয়৷ এর ফলে ইস্যুয়ার কোম্পানির আইপিও ইস্যু খরচ কমার পাশাপাশি, চাঁদা গ্রহণ থেকে লেনদেন শুরুর মধ্যবর্তী সময় কমে আসে৷ একই সাথে আইপিও আবেদন, পরীক্ষণ এবং শেয়ার বরাদ্দের ক্ষেত্রে আরও বেশী সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয় এবং একই প্লাটফর্মের মাধ্যমে সব ধরনের স্টেক হোল্ডারদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে৷

অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতির চিত্র ও পরিবেশ বিনিয়োগের অনুকূল৷ যার ফলে বাংলাদেশ আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রবাসী বংলাদেশি বিনিয়োগকারী এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় পুঁজিবাজার বিষয়ে রোড-শো’র শুরু করে৷ ইতোমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চারটি অঙ্গরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, লন্ডনে রোড-শো সম্পন্ন করেছে এবং আরও বেশ কয়েকটি দেশে রোড-শো’র আয়োজন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে৷

২০২১ সালের বাজারচিত্র

আইপিও

শিল্প উদ্যোক্তারা ২০২১ সালে প্রথমবারের ১টি সুকুক বন্ড ও ১৪টি কোম্পানিসহ মোট ১৫টি কোম্পানি বাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে ১৬৫৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে৷ এর মধ্যে ৩টি কোম্পানি প্রিমিয়াম বাবদ ২৯৭ কোটি ৭৩ টাকা মূলধন উত্তোলন করে৷ এছাড়াও ৪টি প্রতিষ্ঠান বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করে৷ অপরদিকে ২০২০ সালে ৮টি কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও’র মাধ্যমে মোট ৯৮৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করা হয়৷ এর মধ্যে ৩টি কোম্পানি প্রিমিয়াম বাবদ ৩১১ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করে৷

লেনদেন টাকা

কোভিড ১৯ মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী স্টক মার্কেটের গতি মন্থর থাকলেও বাংলাদেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সকল ক্ষেত্রে সাফল্যের মাইলফলক সৃষ্টি করে৷ ২০২১ সালে ডিএসইতে ২৪০ কার্যদিবস লেনদেন হয়৷ এতে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫৪,০৫২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা৷ যা ডিএসই’র ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন এবং গতবছরের চেয়ে ২১৯,০৭১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বা ১৬২.৩০ শতাংশ বেশী৷ যার গড় লেনদেন ১৪৭৫ কোটি ২২ লাখ টাকা৷

অপরদিকে ২০২০ সালে ২০৮ কার্যদিবসে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৩৪,৯৮১ কোটি ২২ লাখ টাকা এবং গড়ে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬৪৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা৷ 

ডিএসইর মূল্য সূচক সমূহ

ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স)

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্য সূচক ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) আগের বছরের চেয়ে ১৩৫৪.৫৯ পয়েন্ট বা ২৫.০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬,৭৫৬.৬৬ পয়েন্টে উন্নীত হয়৷ ২০২১ সালে ডিএসইএক্স মূল্য সূচক সর্বোচ্চ ৭৩৬৮.০০ পয়েন্টে উন্নীত হয় এবং সর্বনিম্ন ছিল ৫০৪৪.৯৯ পয়েন্ট৷ ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি ৪,০৯০.৪৭ পয়েন্ট নিয়ে এ সূচকের যাত্রা শুরু হয়৷

ডিএসই ৩০ সূচক (ডিএস ৩০)

ডিএসই ৩০ সূচক (ডিএস৩০) ৫৬৮ পয়েন্ট বা ২৮.৯৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৫৩২.৫৮ পয়েন্টে দাঁড়ায়৷ ২০২১ সালে ডিএস৩০ মূল্য সূচক সর্বোচ্চ ২৭৮৭.৮২ পয়েন্টে উন্নীত হয় এবং সর্বনিম্ন ছিল ১৯০১.১৩ পয়েন্ট৷ ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি ১,৪৭৩.০১ পয়েন্ট নিয়ে এ সূচকের যাএা শুরু হয়৷

ডিএসইএক্স শরীয়াহ্ সূচক (ডিএসইএস)

একই বছর ডিএসইএক্স শরীয়াহ্ সূচক (ডিএসইএস) ১৮৯.০১ পয়েন্ট বা ১৫.২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৪৩১.১২ পয়েন্টে উন্নীত হয়৷ ২০২১ সালে ডিএসইএস মূল্য সূচক সর্বোচ্চ ১৬০০.২৬ পয়েন্টে উন্নীত হয় এবং সর্বনিম্ন ছিল ১১৬৬.১৭ পয়েন্ট৷ ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি ৯৪১.২৮ পয়েন্ট নিয়ে এ সূচকের যাত্রা শুরু হয়৷

বাজার মূলধন

২০২১ সালে বাজার মূলধন ডিএসই’র ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে৷ ডিএসই বাজার মূলধন আগের বছরের তুলনায় ৯৩ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা বা ২০.৯৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়৷ ২০২১ সালে বাজার মূলধন সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয় এবং সর্বনিম্ন ছিল ৪ লাখ ৪৩ হাজার কোটি৷

মার্কেট পিই

২০২১ সালের শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিঃ এ তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ সমূহের মূল্য আয় অনুপাত বা মার্কেট পিই দাঁড়ায় ১৭.৫৮৷ খাতওয়ারী সর্বনিম্ন অবস্থানের দিক থেকে মূল্য আয় অনুপাত বা মার্কেট পিই ছিল মিউচ্যুয়াল ফান্ডের, যার মার্কেট পিই ৩.৯১, ব্যাংকিং খাতের মার্কেট পিই ৯.৭২, ফুয়েল এন্ড পাওয়ার খাতের ১৩.১৯, টেলিকমিউনিকেশন খাতের মার্কেট পিই ১৬.৯২, ফার্মাসিউটিক্যালস এন্ড কেমিক্যালস খাতের মার্কেট পিই ২০.৭৭, টেক্সটাইল খাতের মার্কেট পিই ২১.৬৫, ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের মার্কেট পিই ২৩.৭০, আর্থিক খাতের পিই ২৪.৯৭, সিমেন্ট খাতের মার্কেট পিই ২৬.৪৭, সার্ভিসেস এন্ড রিয়েল এস্টেট খাতের মার্কেট পিই ২৬.৯২, ইনস্যুরেন্স খাতের মার্কেট পিই ২৮.১৩, ফুড এন্ড এ্যালাইড প্রোডাক্ট খাতের মার্কেট পিই ৩১.২১, আইটি-খাতের মার্কেট পিই ৩৩.০৫, বিবিধ খাতের মার্কেট পিই ৫৫.৯৩, ট্রাভেল এন্ড লেইজার ৬০.৫৮, সিরামিক খাতের মার্কেট পিই ৬৭.৩৪,  জুট খাতের মার্কেট পিই ৭১.২২, পেপার এন্ড প্রিন্টিং খাতের মার্কেট পিই ৮০.৭২ এবং ট্যানারি খাতের মার্কেট পিই ৮৮.১৯৷ অপরদিকে ২০২০ সালের শেষে সামগ্রিক বাজার মূল্য আয় অনুপাত বা মার্কেট পিই ছিল ১৬.৫১৷

মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন টু জিডিপির অনুপাত

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিঃ এ ২০২১ সালে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ সমূহের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন টু জিডিপির অনুপাত দাঁড়ায় ১৮.০১ শতাংশ।

মোবাইল লেনদেন

বিশ্বায়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও বিকাশের ফলে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য মডেল এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের প্রেক্ষাপট ও গতিপ্রকৃতি প্রতিনিয়ত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে৷ পুঁজিবাজারের সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের সাথে তাল মিলিয়ে কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোবাইলের মাধ্যমে লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে৷ যা ২০২১ সালে ৭৭ হাজার ৬৪ জনে উন্নীত হয়৷ এবছর মোবাইলের মাধ্যমে মোট ১ কোটি ৬৯ লাখ ৮৫ হাজার ৫২টি আদেশ প্রেরণ করে৷ এর মধ্যে ১ কোটি ৩৩ লাখ ৯২ হাজার ১২৬টি আদেশ কার্যকর হয়৷ ২০২১ সালে মোবাইলের মাধ্যমে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাড়ায় ৪২,৬৮১ কোটি ৫৯ লাখ ৩ হাজার ২২৮ টাকা৷ এর মধ্যে ক্রয়ের পরিমাণ ২১,৭৮২ কোটি ৬৬ লাখ ৯৬ হাজার ৩৬৬ টাকা এবং বিক্রয়ের পরিমাণ ২০,৮৯৮ কোটি ৯২ লাখ ৬ হাজার ৮৬২ টাকা৷

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২১
এসএমএকে/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।