ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

ডিএসই-ফার্মা এইড দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্ত শেয়ারহোল্ডাররা

শেখ নাসির হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৪
ডিএসই-ফার্মা এইড দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্ত শেয়ারহোল্ডাররা

ঢাকা: দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফার্মা এইডের দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা। তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে ডিএসই এবং কোম্পানি কর্তৃপক্ষের মধ্যে এ দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।


 
ফলে গত আড়াই মাস ধরে এ কোম্পানির লেনদেন বন্ধ থাকলেও এখনও তা চালু করার কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করেনি ডিএসই। এমনকি কবে নগাদ লেনদেন চালু হতে পারে সে বিষয়েও কোনো নির্দেশনা দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।
 
এ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারী সৈয়দ সাজিদ হাসান বলেন, আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে কোম্পানির লেনদেন বন্ধ রয়েছে। মোট শেয়ারের ৬৫ শতাংশই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে থাকায় আমাদের পুঁজির বড় অংশই আটকে আছে। ফলে অনেক কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগযোগ্য থাকলেও আমরা তা করতে পারছি না। তাই চূড়ান্তভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্তহচ্ছি। আশা করি, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ও ডিএসই তাদের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে লেনদেন চালুর ব্যবস্থা করবে।
 
কোম্পানির বিরুদ্ধে ডিএসই’র প্রধান অভিযোগ, গত ৪ ফেব্রুয়ারি ডিএসই’র প্রতিনিধিদলকে কারখানা পরিদর্শন করতে না দেওয়া হয়নি। ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয় এ কোম্পানি শেয়ার লেনদেন। কারণ, যেকোনো কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রম পরিদর্শনের অধিকার ডিএসই’র রয়েছে। আর সেটা যখন করতে দেওয়া হয়নি তখন বুঝে নিতে হবে কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রমে কোনো সমস্যা রয়েছে। তাই বিনিয়োগকারীদের বৃহৎ স্বার্থে কোম্পানির লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে।
 
ডিএসই’র ডিজিএম (লিস্টিং) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সাধারণত কোনো কোম্পানি হঠাৎ পরিদর্শন করি। হঠাৎ না করলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাদের দোষ লুকানোর সুযোগ পায়। বিশেষ করে তারা নিজস্ব মেশিনে নিজস্ব পণ্য উৎপাদন করছে না অন্য কোনো কোম্পানির পণ্য উৎপাদন করছে, তা দেখা জরুরি। আর এটা করতে অবশ্যই হঠাৎ পরিদর্শনে যেতে হয় আমাদের।
 
তিনি আরও বলেন, আমরা আগে থেকে কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে পরিদর্শন সম্পর্কে অবহিত করি না। কারণ, যদি কোনো কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ থাকে তবে পরিবদর্শনের দিনে মেশিন ও লোক ভাড়া করে কিছু মেশিন চালুর ব্যবস্থা করে অনেক কোম্পানি। আবার অন্য কোনো কোম্পানির পণ্য উৎপাদন করলে দ্রুত তা সরিয়ে সাময়িকভাবে নিজ কোম্পানির পণ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে পারে। এসব কারণে কোম্পানির উৎপাদন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া কঠিন। তাই আমরা কোম্পানিগুলোতে হঠাৎ পরিদর্শন করে থাকি।
 
বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে ডিএসই’র প্রতিনিধিদল ফার্মা এইড কোম্পানি পরিদর্শনে যায়। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাদের পরিদর্শনে বাধা দেয়। পরবর্তীতে কোম্পানির লেনদেন বন্ধ করে রাখা হয় বলে জানান নিজাম উদ্দিন।
 
তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোম্পানি পরিদর্শনে ডিএসই’র প্রতিনিধিদলকে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। তবে কারখানা প্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য কিছুটা সময় চাওয়া হয়েছিল। কারণ, কোনো ওষুধ কোম্পানিতে প্রবেশের জন্য কিছু নিয়ম মানা দরকার। বিশেষ করে একটি বিশেষ পোশাক পরিধান করা বাধ্যতামূলক। এটার জন্য আমাদের কিছু সময় প্রয়োজন ছিল।
 
কোম্পানি সচিব  খন্দকার হাসান রেজা বলেন, সাধারণত রুটিন মাফিক কাজ করার জন্য যারা কারখানায় আসা-যাওয়া করেন, তারা ছাড়া কারও কারখানার ভেতরে প্রবেশ করার প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে পরিদর্শন করানো হয়। কারখানার ভেতরে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাঙ্ক, গ্যাস ম্যানিফোল্ড ও সিলিন্ডার, বিদ্যুৎ পরিবাহী যন্ত্রপাতি ইত্যাদি আছে। ১৬৫টি অক্সিজেন, গ্যাস, বায়ুর সংমিশ্রণের বার্নার দিয়ে কম্বিনেশন করে ১৫০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে গ্লাস গলিয়ে অ্যাম্পুল তৈরি করে ৫টি লাইনের প্রতিটিতে ৫৭০-৬০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে এনিলিং করা হয়। সেখানে কোনো অসতর্কতার ফল কতো ভয়ানক হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
 
তিনি আরও বলেন, ডিএসই’র প্রতিনিধিরা পথে আছেন জেনে আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিকেল সাড়ে তিনটার কারখানা পরিদর্শনের অনুরোধ জানাই। কিন্তু তারা ততোক্ষণে কারখানা প্রাঙ্গণ ছেড়ে চলে যান এবং পরের দিন লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
 
পরবর্তীতে কোম্পানির অনুরোধ সত্ত্বেও কেন কারখানা পরিবদর্শনে যায়নি ডিএসই? এমন এক প্রশ্নের জবাবে নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিএসই’র প্রতিনিধি দল ফ্যাক্টরি প্রাঙ্গণ ছেড়ে আসার প্রায় এক ঘণ্টা পর তাদের ফোনে ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের জন্য বলা হয়। কিন্তু ততোক্ষণে প্রতিনিধি দল চলে আসায় আমরা আর পরিদর্শনে যাইনি।
 
তিনি আরও বলেন, কোম্পানি পরিদর্শনের সময় আমাদের কিছু মৌলিক তথ্য বিবেচনায় আনতে হয়। যেমন: কারখানাটি চালু রয়েছে কি-না, সেখানে কোনো মানুষ কাজ করেন কি-না, ঠিক মতো ভ্যাট ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয় কি-না ইত্যাদি। আর এসব তথ্য বিবেচনার জন্য হঠাৎ পরিদর্শনে না গেলে কেউ কেউ মেশিন ভাড়া করে কারখানা চালু করে কিংবা প্রয়োজনীয় কাগজ যোগাড় করে আনে। তাই এ ধরনের সুযোগ না দিতেই পরবর্তীতে আর পরিবদর্শনে যায়নি ডিএসই।
 
এদিকে, কোম্পানির লেনদেন বন্ধ হওয়ার পর এক লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, লিস্টিং রেগুলেশনের ৬(২১) ধারা মতে ডিএসই কোনো প্রাসঙ্গিক পেপার বা ডকুমেন্ট চাইলে তালিকাভূক্ত কোম্পানি তা দিতে বাধ্য থাকবে। কিন্ত হঠাৎ কারখানা পরিদর্শনের ব্যাপারে ডিএসই’র রুলস ও রেগুলেশনের কোথাও উল্লেখ নেই। সময়ের তারতম্যের কারণে কারখানা পরিদর্শন করতে না পেরে কৈফিয়ৎ তলবের (যদিও একটি লিমিটেড কোম্পানির অন্য একটি লিমিটেড কোম্পানিকে কৈফিয়ৎ তলব করা সৌজন্যমূলক নয়) চিঠি লিখে পরের দিন কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে পৌঁছে দিয়ে বিনা নোটিশে ট্রেড বন্ধ করা কতোটা যৌক্তিক বা বিধিসম্মত তা আমাদের বোধগম্য নয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।