ঢাকা : কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধিতে শোকজেই সীমাবদ্ধ রয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)!
কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্বাভাবিক শেয়ার দর বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে সব কোম্পানির গৎবাধা উত্তর ‘আমাদের কাছে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। ’
আর কোম্পানির এ ধরনেই জবাবে সন্তুষ্ট থাকে ডিএসই।
জানা যায়, গত ছয় মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন) ডিএসইর সার্ভিলেন্স বিভাগ মোট ২৬ কোম্পানিকে অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির জন্য শোকজ করে। তবে তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি ডিএসই। এমনকি শোকজ করার পর এ বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) স্বপন কুমার বালা বাংলানিউজকে বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমরা যে শুধু শোকজে সীমাবদ্ধ তা নয়। পাশাপাশি শেয়ার দর অস্বাভিক বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন তৈরি করি। তবে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করার ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে প্রতিবেদন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) পাঠানো হয়। ’
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও কমিশন মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে বিভিন্ন কোম্পানির অসঙ্গতির রিপোর্ট দেওয়া হলেও একই সঙ্গে দেখা সম্ভব হয় না। তবে প্রতি কমিশন সভায় ধারাববাহিকভাবে অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সম্প্রতি বেশ কযেকজন বিনিয়োগকারী, কোম্পানি ও ব্রোকারেজ হাউজকে জরিমানাও করেছে বিএসইসি।
জানা যায়, মূলত একাধিক চক্র বাজারে কোম্পানি সম্পর্কে গুজব ছড়িয়ে শেয়ার দর বাড়ানো চেষ্ট করে। পরবর্তীতে কোনো তদন্ত না হওয়ায় তারা বার বার এ সুযোগ নিয়ে আসছে। চক্রটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা, কোম্পানি এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে বা সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোম্পানির অগ্রিম তথ্য সংগ্রহ করে। বিশেষ করে কোম্পানিটি কতটুকু লভ্যাংশ দেবে, মুনাফার পরিমাণ, শেয়ার প্রতি আয়, শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য, রাইট শেয়ারের অনুমোদন দেওয়া হবে কি-না ইত্যাদি তথ্য।
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) স্বপন কুমার বালা বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করতেই বিভিন্ন কোম্পানিকে শোকজ করি। জবাবে কোম্পানি বলে তাদের কাছে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। এর মাধ্যমে আমরা বিনিয়োগকারীদের পরোক্ষভাবে বুঝানোর চেষ্টা করি এ কোম্পানির শেয়ার দর কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হচ্ছে। তাদের ওই কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিত। ’
ডিএসইর এমডি আরও বলেন, এরপরও বিনিয়োগকারীরা বেশি দামে শেয়ার ক্রয় করে। সেক্ষেত্রে পুঁজি হারানো বা মুনাফা করা সম্পূর্ণ দায়িত্ব তাদের। কারণ যেসব কোম্পানির কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ে সেটা যে কৃত্রিমবাবে বাড়ানো হয় সেটা বিনিয়োগকারীদের বুঝতে হবে।
ডিএসইর তথ্য মতে, গত ৬ মাসে শোকজ করা ২৬ কোম্পানির মধ্যে মুন্নু স্ট্যাফলার্স কোম্পানিকে দুই মাসের ব্যবধানে দুইবার শোকজ করা হয়।
এছাড়া অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- জানুয়ারি মাসে সমতা লেদার, মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, মেঘনা পেট, এপেক্স এডেলকি ফুটওয়্যার, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ ও দুলামিয়া কটন কোম্পানিকে।
ফেব্রুয়ারি মাসে শোকজ করা হয় আলহাজ টেক্সটাইল কোম্পানিকে এবং মার্চ মাসে রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, ইস্টার্ন ক্যাবলস, এপেক্স স্পিনিং অ্যান্ড নিটিং মিলস, ন্যাশনাল টিউবস, দেশ গার্মেন্টস, সমতা লেদার, নর্দার্ন জুট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, রহিম টেক্সটাইল মিলস, জিলবাংলা সুগার মিলস, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, মুন্নু জুট স্ট্যাফলার্স, শ্যামপুর সুগার কোম্পানি।
এপ্রিল ও মে মাসে কোনো কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য শোকজ করা হয়নি। তবে জুন মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত আরও তিন কোম্পানিকে শোকজ করা হয়। কোম্পানিগুলো হলো লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, বিকন ফার্মা এবং মুন্নু স্টাফলার্স।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, কোনো কোম্পানির অস্বাভাবিক দর শুধু শোকজেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। ডিএসইকে মূল কারণ খুঁজে বের করে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে এ চক্রটি বারবার এমন সুযোগ নিতে থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৪