ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটে (ডিএসই) স্থনান্তরিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ২৫ টি কোম্পানির কোনো লেনদেনই হয়নি। বর্তমানে ওটিসি মার্কেটে মোট ৬৬টি কোম্পানি রয়েছে।
সম্প্রতি ডিএসইর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই চিত্র ওঠে এসেছে।
মূলত উৎপাদ বন্ধ থাকা, অব্যাহতভাবে লোকসানে থাকা, লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ, বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করার কারণে বিভিন্ন সময় এই ৬৬ কোম্পানিকে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়েছিল।
ওটিসি মার্কেটের উৎপাদন বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) স্বপন কুমার বালা বাংলানিউজকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারের ওটিসি মার্কেট বলতে মূলত যেটা বুঝায় আমাদের দেশে সেটা নেই। এখানে ওটিসি মার্কেটের সঠিক কার্যক্রম হয় না। ’
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় যেসব কোম্পানিকে ওটিসিতে পাঠানো হয়েছে তাদের ফের মূল মর্কেটে ফেরাতে আমরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেহ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে বিভিন্ন সুপারিশ করেছি। তবে কোম্পানির বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। তাই বিএসইসি এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
লেনদেন না হওয়া কোম্পানিগুলো হলো- আমান সি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আজাদী প্রিন্টার্স, বাংলা প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজ, বিডি হোটেল, বিডি প্লান্ট, বাংলাদেশ ইলেকট্রিসিটি মিটার কোম্পানি (বেমকো), বাংলাদেশ লিফ টোবাকো কোম্পানি, চিক টেক্সটাইল, ডায়নামিক টেক্সটাইল, ঈগল স্টার টেক্সটাইল মিল, জার্মান-বাংলা জে ভি ফুড কোম্পানি।
এছাড়া হিল প্লান্টেশন লিমিটেড, ম্যাক এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, মেটালেক্স কর্পোরেশন লিমিটেড, এম. হোসেন গার্মেন্টস ওয়াশিং অ্যান্ড ডায়িং কোম্পানি, মডার্ন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, পেট্রো সিনথেটিক প্রডাক্টস লিমিটেড, ফার্মাকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ফিনিক্স লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেড, রাঙামাটি ফুড প্রডাক্টস, রাসপিট, রাসপিট ডাটা ম্যানেকজমেন্ট, সালেহ কার্পেট মিল, থেরাপিউটিক বাংলাদেশ লিমিটেড এবং টিউলিপ ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রডাক্টস কোম্পানির আজ পর্যন্ত কোনো লেনদেন হয়নি।
ডিএসইর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে লেনদেন না হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে সরেজমিনে গিয়ে ৭টি কোম্পানির কোনো অস্থিত্বই পাওয়া যায়নি। এমনকি ঢাকায় তাদের যে অফিসের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে সেটা বর্তমানে আবাসিক হিসেবে অথবার ক্লিনিক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
অস্থিত্ব না থাকা কোম্পানিগুলো হলো- বাংলাদেশ ইলেকট্রিসিটি মিটার কোম্পানি (বেমকো, চিক টেক্সটাইল, রাসপিট ডাটা, রাসপিট ইনকরপোরেশন, এম হোসেন গার্মেন্টস, ফার্মাকো এবং সালেহ কার্পেট।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, ওটিসি মার্কেটের প্রায় ৬ হাজার বিনিয়োগকারীর হাতে কাগুজে শেয়ার রয়েছে। অস্তিত্বহীন এসব কোম্পানির ব্যবসাও বন্ধ থাকায় বিনিয়োগকারীরা কোনো লভ্যাংশ পায় না। আবার ক্রেতার অভাবে শেয়ার বিক্রিও করতে পারছেন না অনেক বিনিয়োগকারী। ফলে আটকে আছে তাদের বিনিয়োগের টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসইতে) বর্তমানে ওটিসি বাজারভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৬৬ এবং সিএসইতে ৫৪টি। বছরের পর বছর যেসব কোম্পানি এজিএম করছে না এমন কোম্পানিকে মূল বাজার থেকে তালিকাচ্যুত করে ওটিসি বাজারে স্থানান্তর করা হয়। পরে বিএসইসির সাবেক এসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী কাগুজে শেয়ার থেকে ডিমেট শেয়ারে রূপান্তর না করতে পারায় ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোম্পানিকে এ বাজারে স্থানান্তর করা হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও কমিশন মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, কোম্পানি অবলুপ্তির দায়িত্ব আমাদের নয়। বিনিয়োগকারীদের দেখে শুনে বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। যদি কোম্পানি মুনাফা না করতে পারে তবে কোম্পানি আইন অনুযায়ী শেয়ারহোল্ডারাই কোম্পানি অবলুপ্ত করবে। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই।
তিনি আরও বলেন, ওটিসি মার্কেটের কোম্পানিগুলোর বিষয়ে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ বিভিন্ন সময় আমাদের কাছে সুপারিশ করেছে। তবে লোকবলের অভাবে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারছি না। তবে ধীরে ধীরে আমরা এসব কোম্পানির সমস্যা নিষ্পত্তি করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৪