ঢাকা: পুঁজিবাজারের তালিকাভূক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেলে তার কারণ কখনো উদঘাটন করতে পারে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিভিন্ন সময় যেসব কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে তার কারণ উদঘাটন করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি।
পরে বছরের পর বছর কেটে গেলেও সেসব কোম্পানিগুলোর বা শেয়ার দর বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে বার বার একাধিক কারসাজি চক্র বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দর কারসাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে কমপক্ষে ১৯টি কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির কারণ উদঘাটন করতে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। যার মধ্যে মাত্র ২টি কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের লঘু শাস্তি দিয়েছে বিএসইসি।
গত এক বছরে যেসব কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে বিএসইসি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সেগুলো হলো- লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, দেশ গার্মেন্টস, বিডি অটোকার, রহিমা ফুড, ইনফরমেশন সার্ভিস, মুন্নু স্টাফলারস, মডার্ন ডায়িং, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, জেএমআই সিরিঞ্জ, হাক্কানি পাল্প, ইনটেক অনলাইন, আলহাজ টেক্সটাইল, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, মিথুন নিটিং, তাল্লু স্পিনিং, ওয়াটা কেমিক্যাল, বঙ্গজ, ফার কেমিক্যাল এবং শাহাজিবাজার পাওয়ার লিমিটেড।
এগুলোর মধ্যে গত রোববার ফার কেমিক্যাল এবং শাহাজিবাজার পাওয়ার লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি।
এছাড়া সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল এবং জেএমআই সিরিঞ্জ কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করে কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে লঘু শাস্তি দিয়েছে বিএসইসি।
বাকি ১৫টি কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি হলেও আজও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে বার বার একাধিক কারসাজি চক্র বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দর কারসাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও কমিশন মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, তদন্তনাধীন কোনো বিষয়ে আমরা মন্তব্য করতে পারি না। তবে শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে থাকি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই সেটি কমিশন সভায় তোলা হয়। পরবর্তীতে কারসাজি প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েকটি কমিশন সভায় আমরা কোম্পানির শেয়ার দর কারসাজিতে জড়িত থাকায় কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। ভবিষ্যতেও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, ফার কেমিক্যাল কোম্পানির শেয়ার গত ১০ কার্যদিবসে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কোম্পানির শেয়ার ৪৩ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৮ টাকায়, শাহাজিবাজার পাওয়ার কোম্পানির শেয়ার ৩৪ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭১ টাকায়, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ার ১৯ টাকা থেকে ৪৭ টাকা, দেশ গার্মেন্টসের শেয়ার ৪৭ থেকে ৯৭ টাকায়, বিডি অটোকারের শেয়ার ২৬ টাকা থেকে ৫৪ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
এছাড়া ডিএসইতে ওয়াটা কেমিক্যালের শেয়ার ৫৯ টাকায় লেনদেন শুরু হলেও গত ৩ জুন তা লেনদেন হয় ৪৮৭ টাকায়।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সাধারণত কোনো কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে কারসাজি চক্র সক্রিয় থাকে। বিশেষ করে তারা বাজারে গুজব ছড়িয়ে শেয়ার দর বাড়ায়। বিএসইসি’র উচিত, এগুলোর তদন্ত করে কারসাজি করে ব্যবস্থা নেওয়া। তা না হলে বাজারে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোনো কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলে অনুষ্ঠানিকতা শেষ করতেই বিএসইসি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু পরবর্তীতে কারসাজি চক্র বা কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বারবার এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। বিএসইসি এসব ঘটনায় যেসব ব্যবস্থা নিয়ে থাকে তা অপ্রতুল।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৪