ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজার গত দেড় থেকে দুই বছর ধরে স্থিতিশীল রয়েছে বলে দাবি করেছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল হোসেন।
বুধবার রাজধানীর ইন্সস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশে (আইডিইবি) আয়োজিত এক মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ‘সিএসই ইন্টারনেট ট্রেড ফেয়ার-২০১৪’ শিরোনামে এই মেলার আয়োজন করেছে।
বুধবার সকাল ১০টা থেকে এ মেলা শুরু হয়েছে। মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে বিনিয়োগকারীরা কীভাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন করা যায় সেসব বিষয়ে সব তথ্য জানতে পারবেন।
বিএসইসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. খায়রুল হোসেন বলেন, অর্থনীতির এক সন্ধিক্ষণে সিএসই এ মেলার আয়োজন করেছে। যার মাধ্যমে তারা নেক্সট জেনারেশন সার্ভিস দেবে। ২০১০ সালে এ ব্যবস্থা চালু করা হলেও তা জনপ্রিয়তা পায়নি। তখন বাজার পরিস্থিতি অনেক খারাপ ছিল। তবে এখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইন্টারনেট ট্রেডিংয়ে আগ্রহ বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, গত দেড় থেকে দুই বছর পুঁজিবাজার অনেক স্থিতিশীল। কারণ এ সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। ফলে পুঁজিবাজার বেগবান হয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা এ অবস্থা থেকে আরও বের হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি। একটি দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের যে ভূমিকা থাকা প্রয়োজন আগামীতে আমাদের তা থাকবে।
খায়রুল হোসেন বলেন, আমরা মেরিটের ভিত্তিতে আইপিও অনুমোদন দিয়ে থাকি। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে অতীতে আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছি এখনও করছি।
তিনি বলেন, দেশের শিল্পায়নের জন্য পুঁজিবাজারের ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। কারণ ব্যাংক থেকে ১৭/১৮ শতাংশ হারে ঋণ নিয়ে দেশের শিল্পায়ন সম্ভব না।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সিএসই’র এ ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি নতুন ধারা শুরু হতে যাচ্ছে। যা থেকে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন।
তিনি আরও বলেন, দেশে এখন সার্বিক পরিবর্তন হয়েছে। যেখানে যাচ্ছি শুধু জয়জয়কার। দেশের মানুষও এমন স্থিতিশীল পরিবেশ দেখতে চায়। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমরা এখন উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বহুবছর পর আমরা দেশ হাতে পেয়েছি। এখন আমাদের দেশকে আমাদের মতো করে গড়তে হবে। আসুন সবাই একইসঙ্গে দেশ গড়ি।
সিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ সাজিদ হোসেন বলেন, আমরা ইন্টানেট ট্রেডিং চালু করেছিলাম ১৯৯৭ সালে। ২০১০ সালে এটাকে আরও আপডেট করা হয়। তবে সে সময় ইন্টারনেটের এত প্রসার না থাকায় এ ব্যবস্থাটি বিস্তার লাভ করেনি। বর্তমান সরকারের আমলে ইন্টারনেটের প্রসার হওয়ায় আমরা এ মেলার আয়োজন করেছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। ফলে মানুষ উপস্থিত হয়ে লেনদেন করতে পারে না। এ সমস্যাকে মাথায় রেখে আমরা ইন্টারনেট লেনদেনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। তবে মনে রাখতে হবে ইন্টারনেট লেনদেনের একটি মাধ্যম মাত্র। ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে লেনদেনে যেসব আইন মেনে চলা হয় এখানেও সে আইন মানা হবে। ফলে বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন।
সাজিদ হোসেন বলেন, আমরা লেনেদেনে ইন্টারনেট ব্যবহার ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছি। কারণ আমরা লক্ষ্য করেছি এখন অধিকাংশ মানুষের কাছে মোবাইল ফোন, আইপ্যাড, ট্যাব, ল্যাপটপ রয়েছে। আর মানুষ এখন শুনে, বুঝে, দেখে বিনিয়োগ করতে পারবে। ফলে বাজারে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি বাড়বে। বাজারে শেয়ারের চাহিদ বাড়বে এবং চাহিদা পূরণের জন্য নতুন নতুন আইপিও অনুমোদ দিতে হবে।
সিএসই’র চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মজিদ বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ব্যবহার করে লেনদেন পরিচালনার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতে পুঁজির যে অভাব তা পূরণে শেয়ারবাজার ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, মেলা থেকে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে যে ফিডব্যাক পাওয়া যাবে তা আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরবো। প্রয়োজন হলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিভিন্ন আইনেরও সংস্কার করা হবে। তবে এ মেলায় আমরা বিনিয়োগকারীদের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। যাতে করে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার সম্পর্কে ছোট ছোট বিষয় জানতে পারেন।
এ মেলায় অংশগ্রহণকারী ব্রোকারেজ হাউজগুলো হলো- লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ, বি রিচ লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, আইসিবি সিকিউরিটিজ, আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ, সালতা ক্যাপিটাল, রয়েল ক্যাপিটাল, আইডিএলসি সিকিউরিটিজ, অ্যাসোসিয়েটেড ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ, ব্রাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ, বিডিবিএল সিকিউরিটিজ, ব্রিটিশ বাংলা সিকিউরিটিজ, প্রুডেনশিয়াল ক্যাপিটাল, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটিজ, পিএফআই সিকিউরিটিজ, মাল্টি সিকিউরিটিজ এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৪