ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

হরতাল-অবরোধের প্রভাব-৪

লাইফ সাপোর্টে খুলনার ১৮টি সিকিউরিটিজ হাউজ

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫
লাইফ সাপোর্টে খুলনার ১৮টি সিকিউরিটিজ হাউজ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: বিনিয়োগকারী শূন্য হয়ে পড়েছে খুলনার ১৮টি সিকিউরিটিজ হাউজ। হরতাল-অবরোধে রাজপথে সহিংসতার ভয়ে এখানকার সিকিউরিটিজ হাউজগুলোতে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা আগের মতো আর আসছেন না।

বিনিয়োগকারীরা না আসায় হাউজে লেনদেন কমে গেছে। এতে হাউজের আয় তলানীতে নেমেছে। এ অবস্থায় মালিকপক্ষ লাইফ সাপোর্ট(কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস)দিয়ে হাউজ গুলোকে ধরে রাখছেন।

খুলনার সিকিউরিটিজ হাউজগুলোতে হরতাল-অবরোধের প্রভাব নিয়ে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে হাউজগুলোর এ চিত্র ধরা পড়ে।   

হাউজ কর্মকর্তারা জানান, পুঁজিবাজারে মহাধ্বস পরবর্তী সময়ে অনেকটা ঘাত- প্রতিঘাতের মধ্যেও টিকে ছিলেন তারা। আশায় ছিলেন বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে আসার পর বাজার ভালো হবে। তারাও ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন।

কিন্তু দফায় দফায় রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগকারীদের মত চরম আর্থিক সঙ্কটে সময় পার করতে হচ্ছে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোকে।

তারা আরও জানান, প্রতিনিয়ত বাজার স্থিতিশীলতার আশায় নিভু নিভু এসব হাউজগুলোকে কোনোভাবে ধরে রেখেছেন মালিক পক্ষ। কিন্তু টানা হরতাল-অবরোধের কারণে তারাও এখন অসহায় অবস্থায দিন পার করছেন। এ কারণে হাউজগুলোর অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাইও করতে হয়েছে।

খুলনা ইনভেস্টরস ফোরাম সূত্রে জানা যায়, শিল্পনগরী খুলনাতে ১৮টি সিকিউরিটিজ হাউজ রয়েছে। যেখানে প্রায় এক লাখের বেশি বিনিয়োগকারী ও সাড়ে তিনশ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। বাজার ভালো থাকা অবস্থায় এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিনিয়োগকারীদের সেবা দিতে গিয়ে দম ছাড়ার সময় পেতেন না।

কিন্তু একের পর এক দর পতন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগকরীরা হাউজে আসছেন না। এ কারণে হাউজের আয় কমে যাচ্ছে। এতে সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব।

সরেজমিন দেখা গেছে, বিনিয়োগকারী শূন্য হাউজগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিনের অধিকাংশ সময় পার করছেন অলসতার মধ্যে অথবা টিভি দেখে।

এ প্রসঙ্গে সিনহা সিকিউরিটিজ হাউজের কর্মকর্তা এস এম ইজাজুল হক ইজাজ বাংলানিউজকে বলেন, এমনিতেই তো বাজার ভালো না। তার ওপর হরতাল-অবরোধ।

তিনি জানান, হরতাল-অবরোধে আয় কম হওয়ায় মালিক পক্ষের পকেটের টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিতে হচ্ছে।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, জানিনা আর কতদিন এভাবে আমাদের সময় পার করতে হবে। আর লাইফ সাপোর্ট দিয়ে কয়দিন চলবে হাউজ।

জয়তুন সিকিউরিটিজ হাউজের খুলনা শাখা ব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, হরতাল-অবরোধে রাজপথে সহিংসতার ভয়ে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারী আসছেন না। এ কারণে বিনিয়োগকারী শূন্য হয়ে পড়েছে অনেক হাউজ।

এতে অধিকাংশ  হাউজে এখন ব্যাপক আর্থিক সংকট চলছে। এ কারণে কর্তৃপক্ষ লোকসান দিয়ে হাউজ খরচ চালাচ্ছেন।

আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ হাউজের খুলনা শাখা ব্যবস্থাপক তাপস কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, একদিকে বাজার খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। অন্যদিকে নাশকতার ভয়ে বিনিয়োগকারীরা হাউজে আসছেন না। হাউজে বিনিয়োগকারীদের লেনদেন না থাকলে আমাদের আয়ের কোনো উৎস থাকে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি হাউজের মালিক পক্ষের একজন জানান, হরতাল-অবরোধে আয় কম থাকায় তারা কোনো বিনিয়োগকারীকে ঋণ দিতে পারছেন না। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, কিন্তু তা রক্ষা করতে পারছেন না। এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন তারা।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশংকায় বিনিয়োগকারীরা লেনদেন থেকে দূরে রয়েছেন। আর এ কারণেই হাউজের আয়ও কমে গেছে।

খুলনা ইনভেস্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ ডাকুয়া বাংলানিউজকে বলেন, এমনিতেই পুঁজিবাজারের করুণ দশা। তার উপর আবার হরতাল-অবরোধে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারী ও হাউজ কর্তৃপক্ষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।