ঢাকা: শেয়ারবাজারে মুনাফার কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারে। এক মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়েছে এ খাতের কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে ব্যাংক খাতের কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২১১ কোটি ৬২ লাখ টাকার। যা ডিএসই’র মোট লেনদেনের ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। খাতভিত্তিক লেনদেনের হিসাবে মাসটিতে ব্যাংক খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে পঞ্চম স্থানে।
জুলাই মাসে ব্যাংকের শেয়ারের মোট লেনদেন ছিলো ৫১৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। যা ডিএসই’র মোট লেনদেনের মাত্র ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, শেয়ারবাজারের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত ব্যাংক খাতের অবদান ২০১১ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমেছে। তবে আগস্টে এসে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্যাংক খাত।
এক সময় শেয়ারবাজারে লেনদেনে ব্যাংক খাতের অবদান ৩০ শতাংশের ওপরে ছিলো। আগস্টে এসে তা সাড়ে ৯ শতাংশের মতো হয়েছে। সে হিসেবে আগের অবস্থানের তুলনায় লেনদেনে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে ব্যাংক খাতের অবদান।
শেয়ারবাজারে ২০১১ সালে মোট লেনদেনের ৩০ শতাংশই ছিলো ব্যাংক খাতের দখলে। ব্যাংক কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ায় এর পর থেকেই কমতে থাকে ব্যাংকের লেনদেন। ২০১২ সাল ব্যাংক খাতের অবদান দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশে। আর ২০১৪ সালে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৯ শতাংশে।
শেয়ারবাজার বিশেজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংক খাতের শেয়ার যতো বেশি লেনদেন হবে শেয়ারবাজার ততো বেশি শক্ত অবস্থানে পৌঁছাবে। কারণ, এ খাতের কোম্পানিগুলো বড় অঙ্কের মুলধনি কোম্পানি হওয়ায় এর শেয়ার নিয়ে কারসাজি করার সুযোগ খুবই কম।
তারা বলছেন, ২০১০ ও ২০১১ সালে ব্যাংক যে পরিমাণ মুনাফা করেছিলো এবং বিনিয়োগকারীদের যে লভ্যাংশ দিয়েছিলো তা পরবর্তী সময়ে দিতে পারেনি। যে কারণে ব্যাংক খাতের শেয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে ব্যাংক খাতের শেয়ারগুলোর দাম যে পর্যায়ে নেমেছে তার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। বর্তমানে শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের প্রায় প্রতিটি কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগের উপযুক্ত।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়া ও ব্যাংক ঋণের চাহিদা কমায় ২০১১ সালের পরে ব্যাংকের মুনাফা কমছে। আর মুনাফা কমায় ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি মানুষের আস্থাও কমেছে। তবে শেয়ারবাজারে অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ারের দাম যে পর্যায়ে নেমেছে তার কোনো যুক্তি সঙ্গত কারণ নেই।
তিনি বলেন, চলতি বছরের অর্ধ বছরে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রায় সবক’টি ব্যাংক মুনাফা করেছে। এ মুনাফার প্রবৃদ্ধি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ভালো। সে কারণেই হয়তো ব্যাংক খাতের শেয়ারে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক রিসার্চ কর্মকর্তা মো. বখতিয়ার হাসান বলেন, তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে ২০১১ সালের পর থেকেই শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের অবদান কমেছে। অথচ এক সময় শেয়রবাজারের উত্থান-পতন নির্ভর করতো ব্যাংকের শেয়ারের দামের ওপরে।
তার মতে, ব্যাংকের শেয়ারে ইতিবাচক প্রভাব দেখা দিলে শেয়ারবাজারের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলো ভালো মুনাফা করলে শেয়ারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক।
এদিকে তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, আগস্টে শেয়ারবাজারে লেনদেনে শীর্ষ স্থান দখল করেছে প্রকৌশল খাত। মোট লেনদেনের ১৭ দশমিক ৪১ শতাংশই এ খাতের দখলে। এরপরেই রয়েছে জ্বালানি খাত। মোট লেনদেনে এ খাতের অবদান ১৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে থাকা ওষুধ খাতের অবদান ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর বস্ত্র খাতের অবদান ১১ দশমিক ১০ শতাংশ।
এছাড়া বাকি সবক’টি খাতের অবদান ১০ শতাংশের নীচে। এর মধ্যে ৫ শতাংশের ওপরে আছে মাত্র একটি খাত। বাকিগুলোর অবদান ৩ শতাংশ বা তার নিচে। ৫ শতাংশের ওপরে থাকা খাদ্য খাতের অবদান ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
অন্য খাতগুলোর মধ্যে বিবিধ খাতের অবদান ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ, সিমেন্ট খাতের অবদান ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। আর্থিক খাতের ৩ দশমিক ২১ শতাংশ, সেবা ও আবাসন ২ দশমিক ০৩ শতাংশ, টেলিযোগাযোগ ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ, ভ্রমণ ২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ, পাটের দশমিক ১৮ শতাংশ, কাগজ ও মুদ্রণ দশমিক ৩১ শতাংশ, আইটি দশমিক ৭৯ শতাংশ, বিমা ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ, চামড়া ১ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং সিরামিক খাতের অবদান ১ দশমিক ০২ শতাংশ।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৫
এএসএস/এএসআর