ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জর (ডিএসই) প্রস্তাবনার আলোকে এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কমিশন। বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেনহীন অবস্থায় আটকে আছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বিও অ্যাকাউন্ট গুলো লেনদেনের আওতায় আনলে বাজারে লেনদেন বাড়বে। পাশাপাশি বিনিয়োগেকারীদের লোকসান কমে আসবে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার কমিশন সভা রয়েছে। কমিশন বেশ কিছু বিষয় রয়েছে। তার সঙ্গে এ বিষয়টিও আলোচনা হতে পারে।
সূত্র জানায়, গত ৫ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর পক্ষ থেকে ২০১০ সালের ধসের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ঋণাত্মক মূলধনধারী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনা-বেচা করার সুযোগ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। একটি স্থিতিশীল ও শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনের স্বার্থে ডিএসইর এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়শন (ডিবিএ)। ডিএসইর প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে এ প্রস্তাব দিয়েছে।
মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ এর ৩(৫) ধারা অনুসারে ঋণাত্মক মূলধনধারী হিসাবে গ্রাহক নিজে শেয়ার কেনা-বেচা করতে পারেন না। কেবল ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এ ধরনের হিসাবের শেয়ার বিক্রি করে তার ঋণ সমন্বয় করে নিতে পারে। ২০১০ সালের ধসের পর বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিএসইসি আলোচিত আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাটির কার্যকারিতা কয়েক দফা স্থগিত করে।
সর্বশেষ স্থগিতাদেশের মেয়াদ গত ৩১ জানুয়ারি শেষ হয়ে গেছে।
স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ঋণাত্মক মূলধনধারী বিনিয়োগ হিসাবে শেয়ার কেনা-বেচা করা নিয়ে চিন্তিত ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা।
মার্জিন ঋণ হচ্ছে বিশেষ ধরনের ঋণ সুবিধা। শেয়ার কেনার জন্য ব্রোকারহাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক গ্রাহককে এ ঋণ দিয়ে থাকে। বিএসইসি প্রণীত মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ এর আওতায় এ ঋণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
২০১০ সালের পর থেকে টানা দরপতনে অসংখ্য মার্জিন একাউন্টে বিনিয়োগকারীর মূলধন ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। ওই সব একাউন্টে থাকা শেয়ার এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম এমন জায়গায় নেমে এসেছে যে, বিনিয়োগকারীর নিজস্ব মূলধন বলতে কিছু নেই। উল্টো গ্রাহকের কাছে টাকা পাবে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান। আইন অনুসারে এমন একাউন্টে লেনদেন নিষিদ্ধ।
ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো বিনিয়োগকারীর ডেবিট ব্যালেন্স ১৫০ শতাংশের নিচে নেমে গেলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান তার কাছে নতুন করে মার্জিন চাইবে। এই মার্জিনের পরিমাণ এমন হবে যাতে তার ডেবিট ব্যালেন্স ১৫০ শতাংশের উপরে থাকে। নোটিশ দেওয়ার তিন কার্যদিবসের মধ্যে পর্যাপ্ত মার্জিন জমা দেওয়া না হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে নতুন কোনো লেনদেনের অনুমতি দিতে পারবে না ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান।
ঋণ নিয়ে টাকা খাটিয়ে লোকসানে পড়া বিনিয়োগকারীদের দাবি ও স্টক এক্সচেঞ্জের অনুরোধে ২০১৩ সালের এপ্রিলে মার্জিন রুলসের সংশ্লিষ্ট ধারাটির কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। এরপর দু’বার স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রতিবারই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি আইন শিথিলের ওই নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু গত বছর এ বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো অনুরোধ না জানানোয় বিএসইসি এই বিষয়ে নতুন কোনো নির্দেশনা জারি করেনি। ফলে স্থগিতাদেশের মেয়াদ গত ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যায়।
বিএমবিএ সভাপতি সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নেগেটিভ ইক্যুইটির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনা-বেচা করতে পারলে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রথম বাজারে লেনদেন বাড়াবে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন লোকসানে থাকা এই বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করে লোকসান কিছুটা কমাতে পারবেন। এতে ব্রোকারেজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর লাভ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৭
এমএফআই/এসএইচ