প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের যোগসাজশে প্রতিনিয়তই অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য বের হয়ে এসেছে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন থেকেও। প্রতিষ্ঠানের মালিক ও চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান।
বিমা বিধিমালা ১৯৫৮ এর ৩৯ বিধি অনুসারে, বিমা কোম্পানি প্রথম বর্ষে ব্যবসার জন্য ব্যস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে। কিন্তু কোম্পানিটি ২০১৬ সালে এ আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ১৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা বেশি খরচ দেখিয়েছে।
অথচ এ টাকার ৯০ শতাংশের পাওনাদার কষ্টে উপার্জন করা পলিসি হোল্ডাররা। আর বাকি ১০ শতাংশের পাওনাদার শেয়ার হোল্ডাররা।
কোম্পানির তথ্য মতে, আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে ২০১৬ সালে ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করেছে ৬৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আইনি সীমা অনুসারে ব্যয় করতে পারতো ৫২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কিন্তু তার চেয়ে ১৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা বেশি খরচ দেখিয়েছে। এর আগের বছরও অর্থাৎ ২০১৫ সালে অবৈধ খরচ দেখিয়েছিলো ১৯ কোটি ৬ লাখ টাকা।
এদিকে বিমা কোম্পানিটির মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে পলিসি হোল্ডার এবং শেয়ার হোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গত বছরের মতোই এবারও গত মাসে কোম্পানিটির এমডিকে তলব করেছে আইডিআরএ। শুনানিতে ভবিষ্যতে ব্যবস্থাপনা খাতে অতিরিক্ত ব্যয় করা হলে আইন অনুসারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে কোম্পানিটিকে হুঁশিয়ার করা হয়।
গত বছরও একই কারণে হুঁশিয়ার করেছিলো আইডিআরএ। সেই সঙ্গে অতীতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করা হয়েছে তা ক্রমান্বয়ে সমন্বয় করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আইডিআরএ’র কাছে তথ্য রয়েছে, কোম্পানি ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আইন লঙ্ঘন করে ব্যবস্থাপনার নামে অতিরিক্ত ৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করেছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে করা অতিরিক্ত ব্যয়ের পিছনে কি ধরনের দুর্নীতি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয় দুদক। গত বছরের জুনে দুদকের উপ-পরিচালক মো. জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের অনুসন্ধানী টিম গঠন করা হয়। টিমের অন্য সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন। এখনো দুদকের অনুসন্ধান চলমান।
দুদক ও আইডিআরএ’র এমন উদ্যোগের পরও ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরেনি কোম্পানিটি। অতীতের অতিরিক্ত ব্যয় সমন্বয় করা তো দূরের কথা, ২০১৬ সালে ব্যয়ের লাগাম নির্ধারিত সীমায়ও ধরে রাখতে পারেনি।
অন্যদিকে কোম্পানিটির ২০১২, ২০২৩ এবং ২০১৪ সালের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনগুলোতে ব্যবস্থাপনা ব্যয়সহ অন্যান্য বিষয়ে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে বিশেষ নিরীক্ষণ প্রতিষ্ঠান। আইডিআরএ নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানটি অনিয়মগুলোর মধ্যে মালিকদের পছন্দসই কোম্পানিতে বিনিয়োগের টাকা কোম্পানির লাইফ ফান্ডে দেখানোর পাশাপাশি নামে-বেনামে নিজেদের ইচ্ছেমতো ভুয়া এজেন্টের নামে কমিশন, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় ও বছরের পর বছর অনাদায়ী টাকা কালেকশন ইন হ্যান্ড খাতে দেখানো, এ কোম্পানির টাকা বিনিয়োগের নামে অন্য কোম্পানিতে স্থানান্তর করেও লাইফ ইন্স্যুরেন্স ফান্ডে দেখানো, টাকা জমা না দিয়ে ব্যাংকের হিসাবে টাকা দেখানো এবং নিষিদ্ধ কোম্পানিতে আমানত বিনিয়োগসহ ২৬ ধরনের অনিয়মে খুঁজে পেয়েছে।
যা বিমা আইন ২০১০ এর ২৯ ধারা ও প্রবিধানের লঙ্ঘন। বিমা আইন ও প্রবিধান লঙ্ঘনে বিমা আইন ২০১০ এর ধারা ১০, ৫০, ৯৫ এবং ১৩৪ ধারার বিধান অনুসারে এর বিচার করবে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে কোম্পনির এমডি সামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, আগের আইনের কারণে ব্যয় বেড়েছে। নতুন বিমা আইন হচ্ছে, সেখানে কমে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৭
এমএফআই/এএসআর