সম্প্রতি বিনিয়োগকারী, ব্রোকারজে হাউজ মালিক, স্টক এক্সেচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ, অর্থনীতিবিদ এমনকি অর্থমন্ত্রীও পুঁজিবাজার ভাল থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তার কারণ ইপিএস ও পিই রেশিও তুলনায় ভাল কোম্পানির শেয়ারের দাম এখনো যৌক্তিক পর্যায়ে রয়েছে।
তবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ধার-দেনা কিংবা স্ত্রী’র গহনা বিক্রি না করে, সারপ্লাস মানি (উদ্বৃত্ত টাকা) থাকলে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এদিকে এ আশ্বাসের ফলে সর্বশেষ সপ্তাহের টানা চার দিন সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন হয়েছে। এতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিনিয়োগকারীদের পুঁজি যোগ হয়েছে ৩৪৮৮ কোটি ২২ লাখ ৯৮ হাজার ৫২৯ টাকা। সূচক বেড়েছে ৮৪ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট। এ ছাড়াও লেনদেন ১২ কোটি টাকা বেড়ে ৫ হাজার ৩৭০ কোটি ৬০ লাখ ৫১ হাজার ২৭৪ টাকা হয়েছে।
ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, বাজারের প্রতি দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। ফলে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ফান্ড যোগ হচ্ছে। লেনদেন বাড়ায় ব্রোকারেজ হাউজ এবং বিনিয়োগকারীদের মনও চাঙ্গা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আশা করছি ‘পুঁজিবাজার ভাল থাকবে’।
ডিএসইর আরেক সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বাংলানিউজ বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীও এখন শেয়ার বিক্রি না করে বরং শেয়ার কিনছেন। সুতারাং বুঝতেই পারছেন বাজার ভাল থাকবে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংর্কাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ধসের পর থেকে লেনদেনহীন হয়ে থাকা নেগেটিভ ইক্যুয়েটিভ বিও হিসাব গুলোতে লেনদেনের সুযোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা এখন লোকসান কাভার করতে শুরু করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এখনো মার্চেন্ট ব্যাংক গুলোতে ৪-৫ হাজার কোটি টাকার ফান্ড দরকার। সরকারের অর্থমন্ত্রণালয় এই ফান্ডের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। সব মিলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রয়েছে। আগামীতে আরো গতিশীল ও স্থিতিশীল থাকবে।
এদিকে, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে দ্রুততম সময়ে ডিএসইতে বন্ডের লেনদেন চালুর পাশাপাশি পুঁজিবাজার উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন বাংলাদেশ বাংকের গর্ভনর ফজলে কবির। মঙ্গলবার (০৭ মার্চ) ডিএসই’র পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শিগগিরই চালু করে বাজারের গতিশীলতাকে তরান্বিত করতে অনুরোধ জানানো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গর্ভনর ফজলে কবির এই আশ্বাস দেন।
তার আগের দিন সোমবার (০৬ মার্চ) রাজধানীর হোটেলে বিএমবিএ আয়োজিত অনুষ্ঠানে আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, দেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগের একটি বড় অংশ পুঁজিবাজার থেকে আসা উচিত। আর এটা অবশ্যই আসবে। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে আমাদের পুঁজিবাজার শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড়াবে। যেখান থেকে আমরা বিভিন্ন বিনিয়োগে আগ্রহ নিতে পারবো। মাত্র ৩ বছর বাকি, এর মধ্যেই পুঁজিবাজার শক্তিশালী হবে বলে আমার বিশ্বাস।
একই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল হোসেন বলেন, অসংখ্য সংস্কারের ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। পুঁজিবাজারে ফিরেছে স্থিতিশীলতা ও গতিশীলতা। এর আগে তিনি বলেছিলেন, পুঁজিবাজারের সূচক ১০ হাজার পয়েন্টে দাঁড়ালেও কোনো সমস্যা নেই। তার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিভিন্ন সংস্কারের কারণে বর্তমানে সেই অবস্থায় অবস্থান করছে বাজার।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৭
এমএফআই/এসআরএস/এসএইচ