বিগত মাসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধন যোগ হয়েছে ২১ হাজার ৬২৪ কোটি ৪০ লাখ ৭ হাজার টাকা। পাশাপাশি সূচক বেড়েছে ৪০০ পয়েন্ট।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে নেতিবাচক কোনো পদক্ষেপ না থাকার পাশাপাশি ব্যাংক ডিপোজিট (আমানতের) ও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর ঘোষণায় নতুন করে বাজারের প্রতি বিনিযোগকারীদের আস্থা বেড়েছে। এতে একদিকে প্রাতিষ্ঠানিক, ব্যক্তি পর্যায়ে বড় ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হচ্ছেন।
অন্যদিকে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধিতে নতুন করে বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগ করছেন। ফলে বাজার থেকে আস্থা ও তারল্য সংকট ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের ধারণা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত পুঁজিবাজারের এই উত্থানের ধারা অব্যাহত থাকবে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১০ সালের ভয়াবহ ধসের অর্ধযুগ পর সরকারের বেশ কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কারণে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পুঁজিবাজারের লেনদেনে তেজীভাব দেখা যায়। কিন্তু চলতি বছরের ৪ এপ্রিল থেকে হঠাৎ করে শুরু হওয়া দরপতন অব্যাহত ছিলো মে পর্যন্ত।
এরপর ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফেরে পুঁজিবাজার। কিন্তু ঈদুল ফিতরের কারণে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বেশি থাকায় মিশ্র প্রবণতায় লেনদেন চলতে থাকে। তবে ঈদের পর থেকে আবারো সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে দেশের উভয় বাজারে।
এর ফলে নতুন অর্থ বছরের তৃতীয় কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২২৩ কোটি টাকা। ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৭৬০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে শিগগিরই সূচকের অবস্থান উন্নতির রেকর্ড সৃষ্টি হবে।
এ বিষয়ে ফাস্ট সিকিউরিটিজের কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পুঁজিবাজার এখন স্থিতিশীল রয়েছে। এ কারণে ইতিবাচক ধারায় লেনদেন হচ্ছে। তাতে বিনিয়োগকারীদের আনাগোনাও বেড়েছে।
তিনি বলেন, এখন দুই শতাধিক কোম্পানির আর্থিক বছর শেষ হয়েছে। আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে ব্যাংকিং খাতসহ বেশিভাগ খাতের মুনাফা বেড়েছে। এ কারণে নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা বেড়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে।
এ ছাড়াও নতুন অর্থবছরে আইসিবি সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে এমন খবরের বাজার চাঙা হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন মাসুদুর রহমান।
ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, দরপতনের ফলে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম যৌক্তিকমূল্যের চেয়ে কম ছিলো। এরপর রমজান মাস থাকার কারণে ঈদ উদযাপন উপলক্ষ্যে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বেশি ছিলো। কিন্তু এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।
শেয়ারের দাম কম থাকার পাশাপাশি সেল প্রেসার কমে যাওয়ায় পুঁজিবাজারে লেনদেন ও সূচক বাড়ছে। আর তাই দেখে বিদেশিরা এখন শেয়ার কিনছেন এটা পুঁজিবাজারের জন্য গুড সাইন।
এদিকে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত দুলামিয়া কটন, বঙ্গজ বিস্কুট, বিচ হ্যাচারি, আজিজ পাইপস, সিনোবাংলাসহ বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ছে বলে ডিএসই‘র ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে।
কারসাজির অভিযোগ থাকা এসব কোম্পানির লেনদেনে গতিবিধি সন্দেহের চোখে দেখছে বিএসইসি, ডিএসই, সিএসইসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে পুঁজিবাজার চাঙা হলেও বিনিয়োগকারীদের মনে এক ধরনের শঙ্কাও কাজ করছে।
তারা বলছেন, প্রত্যাশা একটি দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার। সেজন্য হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে তারা উচ্ছ্বসিত নন। বরং এই ঝলকানির কারণে বাজারে কারসাজি চক্র আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৭
এমএফআই/এমজেএফ