আমরা নেটওয়ার্স লিমিটেড কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন এমডি সৈয়দ ফারহাদ আহমেদের ভাই সৈয়দ ফারুক আহমেদ। কোম্পানির বাকি দুই পরিচালক সৈয়দা মুন্নি আহমেদ ও ফাহমিদা আহমেদ তাদের দুই ভাইয়ের স্ত্রী।
পরিচালকরা সবাই একাধিক কোম্পানির এমডি, ভাইস-চেয়ারম্যান এবং পরিচালক পদে রয়েছেন। যা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির নিয়ম এবং কোম্পানির করপোরেট গর্ভরন্যান্স নীতিমালার লঙ্ঘন।
ফলে পারিবারিকভাবে পরিচালিত কোম্পানিটি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। প্রতিবছর ক্রমাগতভাবে কোম্পানির মুনাফা কমছে। পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে কমেছে কোম্পানির ব্যবসার হারও। এতে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাদের স্বার্থ সুরক্ষার পরিবর্তে ক্ষুন্ন হচ্ছে। এতে কোম্পানির ভবিষৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, একই ব্যক্তি একাধিক কোম্পানির এমডি ও চেয়ারম্যান থাকলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার পরিবর্তে স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে। পারিবারিক শেয়ার হোল্ডারদের বাহিরে থাকা শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কোম্পানির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন আসবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, একা একটি কোম্পানির দায়িত্ব পালন করতেই হিমশিম খেতে হয়। সেখানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একাধিক কোম্পানিসহ ১৩ কোম্পানির এমডির দায়িত্ব পালন কীভাবে সম্ভব!
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলানিউজকে বলেন, একা ১৩ কোম্পানির এমডি পদে দায়িত্ব পালন করা অনেক কঠিন।
প্রিমিয়ামসহ বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার আসতে যাওয়া আমরা নেটওয়ার্স লিমিটেড কোম্পানির এমডি সৈয়দ ফারহাদ আহমেদ একাধারে পুঁজিবাজারে তালিভুক্ত আমরা টেকনোলজি লিমিটেড, অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানি আমরা রিসোর্স, ইনফোটেইনমেন্ট, ফ্যাশন, স্লোলোশন, ফিটন্যাস, আউটসোসিং, এমব্রডায়েরিং এমারাল্ড অয়েল, হোল্ডিং সাপোর্ট সার্ভিস এবং বলরো বাংলাদেশের এমডি। কোম্পানির প্রসপেক্টাস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০৯ ধারা এবং পুঁজিবাজারে তালিকভুক্তির আইন অনুসারে, একজন এমডি একাধিক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে থাকতে পারবেন না। তবে কেম্পানি আইনের উপ-ধারায় বলা হয়েছে, সরকার যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, যথাযথ ভাবে কাজ করিবার জন্য কোম্পানিগুলো একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হওয়া এবং উহাদের একজন সাধারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকা উচিৎ।
কোম্পানির পরিচালনা পরিষদ নিয়ে বিনিয়োকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্ট সবাই প্রশ্ন তুলছেন। তদের মতে, একজন এমডির পক্ষে একটি কোম্পানি পরিচালনা করা কঠিন। অথচ এই কোম্পানির এমডি ও চেয়ারম্যান এই রকম আরো বেশ কিছু কোম্পানির একই পদে রয়েছেন। ফলে তার পক্ষে এই কোম্পানি সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।
প্রসপেক্টাসে দেখা গেছে, আমরা নেটওয়াকর্সের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারুক আহমেদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ফারহাদ আহমেদ এই কোম্পানির পাশাপাশি আমারা রিসোর্স, টেকনোজি, হোডিল্ডংসসহ মোট ১৩টি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করছেন।
এ ছাড়াও কোম্পানির মনোনীত পরিচালক সৈয়দা মুন্নি আহমেদ আরো দুটি কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান এবং ফাহমিদা আহমেদ যথাক্রমে একটির এমডি ও অরেক কোম্পানির পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। ফলে কোম্পানিটির ভবিষৎ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে বিনিয়োগকারীরা।
তাদের দায়িত্বে থাকা একই গ্রুপের আমরা টেকনোলজি কোম্পানি বাজারে রয়েছে। যার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ২০১২ সালে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে এখনো ঋণে আক্রান্ত রয়েছে কোম্পানিটি। গড়তে পারেনি কোম্পানির রির্জাভ ফান্ড। তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে কোম্পানির ইপিএস ও এনএভি কমে আসছে।
কোম্পানির বানানো প্রতিবেদন দেখে যে সব বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেছেন তারা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২০১২ সালে আইপিওতে যে টাকা দামে বাজারে এসেছিলো দীর্ঘদিন সেইদামের নিচে অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়াও এই কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে ব্যাপক অনিয়ম পেয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
এ বিষয়ে কোম্পানির সিএফও এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, একা ১৩ কোম্পানির দায়িত্ব পালন কঠিন। তবে আমাদের গ্রুপে দায়িত্ব পালন সহজ। তার কারণ একই গ্রুপের সব কোম্পানি। একাই সব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যা করা হচ্ছে তা নিয়মের মধ্য থেকেই করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
ইপিএস কারসাজিতে ৫৬ কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে আমরা নেটওয়ার্ক
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
এমএফআই/এমজেএফ