কোম্পানি ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং(আইপিও) অর্থাৎ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে এই টাকা তুলে নেবে। কোম্পানিরই একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের(ডিএসই)তথ্যমতে, ১০টাকা মূল্যে দেড় কোটি শেয়ারের বিনিময়ে ১৫ কোটি টাকা নিয়ে কোম্পানিটি মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ক্রয় এবং আইপিও খাতে খরচ করবে। এই লক্ষ্যে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি)থেকে অনুমোদন নিয়েছে। টাকা সংগ্রহের জন্য ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর আইপিওতে আবেদনের জন্য দিন ধার্য করেছে কোম্পানিটি।
কোম্পানির সেই তথ্য দিয়ে একটি প্রসপেক্টাস তৈরি করেছে যা দৈনিক সমকাল, ফাইনেন্সিয়াল এক্সপ্রেস, সকালের খবর এবং নিউএইজ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রসপেক্টাসটি কোম্পানি, বিএসইসি এবং ডিএসই’র ওয়েসবাইটে রয়েছে।
সেই প্রসপেক্টাসের ১২৫ পৃষ্ঠা ও নোট ২৮-এতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বেসিক ইপিএস হিসাবে ২ দশমিক ৪৪ টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু ১৫৭ ও ১৫৮ পৃষ্ঠায় বেসিক ইপিএস হিসাবে ২ দশমিক ১৯ টাকা দেখানো হয়েছে। এই ২ পৃষ্ঠায়, ভুল ওয়েটেড শেয়ার দিয়ে ইপিএস দেখানো হয়েছে। যাতে একই বিষয়ে পৃষ্ঠাভেদে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেখানো হয়েছে।
শুধু তাই নয়, প্রসপেক্টাসের ১৫৭ ও ১৫৮ পৃষ্ঠায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরেও ভুল ইপিএস দেখানো হয়েছে। এ বছর শেয়ার ওয়েটেড না করেই ইপিএস ১৬৫ দশমিক ৬৮ টাকার পরিবর্তে ১১৮ দশমিক ৭৪ টাকা দেখানো হয়েছে।
কোম্পানির ২০১৪-১৫ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে কর বাবদ ৪১ দশমিক ৭৩ লাখ টাকা অগ্রিমের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে বলে দেখানো হয়। যার ফলে একই পরিমাণ অগ্রিম করপ্রদান বাবদ সম্পদ ও সঞ্চিতি বাবদ দায় কমেছে। কিন্তু নগদ প্রবাহ অনুযায়ী এই বছর ৪১ দশমিক ৭৩ লাখ টাকার কর প্রদান করা হলেও শুধু অগ্রিম কর হিসাবে ১৩ দশমিক ৫৩ লাখ টাকা প্রদান দেখানো হয়েছে। বাকি ২৮ দশমিক ২০ লাখ টাকার কোনো হিসাব দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে নোট ৭ দশমিক ০২ এ অগ্রিম করের সঙ্গে ৪১ দশমিক ৭৩ লাখ টাকা সমন্বয় করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও নোট ১৭ দশমিক ০১ এ ৩৬ দশমিক ৭৩ লাখ টাকা সমন্বয় হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর বাকি ৫ লাখ টাকা নগদ প্রদান করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ হিসাবে অগ্রিম কর সমন্বয় ও কর বাবদ নগদ প্রদান নিয়ে দুই রকম তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এছাড়াও কোম্পানির ভুল রিটার্ন অন ইক্যুইটি দেখিয়ে আসছে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস। বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস অনুসারে, মুনাফাকে গড় ইক্যুইটি দিয়ে ভাগ করে রিটার্ন-অন-ইক্যুইটি দেখাতে হয়। কিন্তু ওয়াইম্যাক্স কর্তৃপক্ষ বছরশেষের ইক্যুইটি দিয়ে রিটার্ন অন ইক্যুইটি নির্ণয় করেন। যা প্রকৃত চিত্র দেখায় না।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কোম্পানির সিএফও ইকরামুল ইসলামের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রসপেক্টাসে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তাতে কোনো ভুল নেই। এর চেয়ে বেশি বলতে পারবো না।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ.বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের লক্ষ্যে অনেক কোম্পানি আইপিওতে এক-দুই বছর আগে থেকে কৃত্রিমভাবে মুনাফা বাড়িয়ে দেখায়। এই ধরনের প্রবণতা বন্ধে ৫ থেকে ১০ বছরের আর্থিক হিসাব পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়:২২০৯ ঘণ্টা, ১৬ আগস্ট, ২০১৭
এমএফআই/জেএম