ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

পুঁজিবাজারে চলছে কারসাজি, হচ্ছে না বিচার

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৮
পুঁজিবাজারে চলছে কারসাজি, হচ্ছে না বিচার

ঢাকা: পুঁজিবাজারে চলছে আইটেম ওয়াইজ কারসাজি। কারসাজি এ চক্রটি বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের বোকা বানিয়েছে শতশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের ধসের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। অথচ এ অবস্থায়ও নিরব ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ লিব্রা ইনফিউশন, এমবি ফার্মা এবং ফার্মা এইড, মুন্ন‍ু সিরামিক, মুন্নু স্টাফলার, কে অ্যান্ড কিউ,ডরিন পাওয়ারসহ ২৫-৩০টি কোম্পানির শেয়ারের কারসাজিতে বিনিয়োগকারীদের ব্রোকারেজ হাউজের পাশাপাশি সঙ্গে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার লোকজনই জড়িত। এ কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের কারসাজি হওয়ার পরও কোনো ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেনা কমিশন।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, যেসব কোম্পানির শেয়ার কারসাজি হচ্ছে বলে মনে হয়। সেগুলোকে তদন্তের মাধ্যমে আইনিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।

নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসইর এক পরিচালক বাংলানিউজকে বলেন, এসব কোম্পানির অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে কে বা কারা জড়িত, সার্ভেইলেন্স সফটওয়ার দেখে তাদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে। অথচ কমিশন এসব কোম্পানির বিষয়ে কোনো তদন্ত করছে না।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, চলতি বছরের ২৮ এপিল ওষুধ খাতের কোম্পানি লিব্রা ইনফিউশন লিমিটেডের শেয়ারের দাম ছিলো ৪৯৩ টাকা ৪০ পয়সা। এরপর থেকে কোনো কারণ ছাড়াই কেবল কারসাজি চক্রের দাপটে শেয়ারের দাম ৭৬৮ টাকা বেড়ে ২ জুলাই দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬১ টাকা ২০ পয়সায়।

এক নাগাড়ে শেয়ারটি দাম বাড়ার পেছনে কে বা কারা জড়িত সার্ভেইলেন্স দেখে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা অভিহিত করে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করতে কোম্পানিকে কয়েক দফা অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে কোনো সংবদেনশীল তথ্য আছে কিনা জানতে চেয়ে নোটিশ দিয়েছে। কোম্পানি জানায়, অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো কারণ জানা নেই। কিন্তু  স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিবেদন দেওয়ার পর কমিশনের নিজস্ব সার্ভেইলেন্সে দেখেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। গঠন করেনি তদন্ত টিমও। এ সুযোগে কয়েকগুণ বেশি দাম বৃদ্ধি করে শেয়ার বিক্রি করে দেয় কারসাজি চক্র।

তারপর থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত শেয়ারে দাম ৫৮১ দশমকি ১০ টাকা কমে ৬৮০ দশমিক ১০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে যারা অতিলোভে পড়ে শেয়ার কিনেছিলেন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।     

একই কায়দায় এমবি ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪৩৬ দশমিক ২০ টাকা বাড়িয়ে শেয়ার বিক্রি করে টা‍কা তুলে নেয় কারসাজি চক্র। ডিএসইর তথ্য মতে, ২৯ মার্চ শেয়ারটির দাম ছিল ৩৭৮ দশমিক ১০ টাকা। সেই শেয়ার ২২ জুলাই বিক্রি হয়েছে ৮১৪ দশমিক ৩০ টাকা। যা গত ৩০ আগস্ট বিক্রি হয়েছে ৫৮৯ দশমিক ২০ পয়সায়। অর্থাৎ দাম কমেছে ৩২৫ টাকার বেশি।

একইভাবে ফার্মা এইড লিমিটেডের শেয়ার ২৮৪ দশমিক ৫০ টাকা থেকে ৬৮৮ দশমিক ৬০ টাকা প্রতিটি শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে কারসাজি চক্র। ৩০ আগস্ট সেই শেয়ারের দাম ১৪৭দশমকি ৫০ পয়সা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৪১ টাকায়। এ সময়ে শেয়ার বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

শুধু লিব্রা ইনফিউশন, এমবি ফার্মা এবং ফার্মা এইড কোম্পানিই নয়, বিডি অটোকার, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, মুন্নু স্টাফলার্স, মুন্নু সিরামিক, কে অ্যান্ড কিউ, আজিজ পাইপস, স্টাইল ক্রাফট এবং  ড্রাগন সোয়েটার কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। কারসাজিও হয়েছে, কিন্তু কমিশনের নিরব রয়েছে।

বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যেসব কোম্পানির শেয়ার কারসাজি হচ্ছে বলে মনে হয়, সার্ভেইলেন্সে দেখে সেগুলোকে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।

বিনিয়োগাকরীদের উদ্দেশ্যে মির্জা আজিজ বলেন, বিশ্বব্যাপী প্র্যাকটিস হচ্ছে শেয়ারের দাম বাড়লে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে কিনেন। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো, যখন শেয়ারের দাম বাড়ে তখন বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এটা উচিৎ নয়, বিনিয়োগকারীদের এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

একই কথা বলেছেন, বিএসইসির আরেক সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কোনো কোম্পানির শেয়ারের ম্যানুপুলেশন হলে স্টক এক্সচেঞ্জর উচিত কমিশনকে তার প্রতিবেদন দেওয়া। এরপর কমিশনের উচিততদন্ত টিম গঠন করা। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৮
এমএফআই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।