এ দুই দিন কেবল ডিএসইতে ৫০ ও ৭৯ পয়েন্ট করে সূচক পতন হয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, সামনের দিনগুলোতে আরো বড় ধরনের দরপতন হবে।
তারা বলছেন, গত ১৩ অক্টোবর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশের পর থেকে পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। এরপর উভয় বাজারে মোট সাত কার্যদিবস (চার কার্যদিবস দরপতন আর তিনদিন সূচক সামান্য বেড়েছে) লেনদেন হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা।
সাতদিনে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচঞ্জের (ডিএসইর) বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছেন ১০ হাজার ৭০৩ কোটি ৯৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) থেকে হারিয়েছে ১১ হাজার ৩১৯ কোটি ৬৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
অন্যদিকে ব্যাক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব খাতের শেয়ারের দাম কমায় ডিএসইতে সূচক কমেছে ১৮৩ পয়েন্ট। এর মধ্যে রবি ও সোমবার সূচক কমেছে ১২৯ পয়েন্ট। অপর বাজার সিএসইতে কমেছে ২২১ পয়েন্ট। এছাড়াও লেনদেন কমে অর্ধেক হয়েছে। তাতে বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউজগুলোও লোকসানে পড়ছে।
বাজারে এই অবস্থায় দরকার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মার্কেট সাপোর্ট। কিন্তু তারা হাত গুটিয়ে বসে আছে বলে মনে করেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট মোস্তাক আহমেদ সাদিক।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভয় ঢুকেছে। অথচ এই সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মার্কেট সার্পোট না থাকায় আরামে দরপতন হচ্ছে!
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, সবকিছু পজেটিভ থাকলেও হঠাৎ করে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় এখন পুঁজিবাজারে দরপতন হচ্ছে। বিনিয়োগাকীদের মধ্যে এখন একটাই শঙ্কা, সূষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তো? এই ভয়ে তারা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।
জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, তারল্য ও আস্থা সংকটের কারণে পুঁজিবাজারে দরপতন হচ্ছে।
তারল্য সংকটের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, পুঁজিবাজরে এখন দরপতন হচ্ছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায়। এ কারণে ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ থেকে বিরত রয়েছেন। তারা হাত গুটিয়ে নিয়েছেন।
তাদের দেখা-দেখি সাধারণ বিনিয়োগকারীও হতাশ হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে ভাল শেয়ার কিনেও লোকসান হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের।
অন্যদিকে তারল্য সংকটের এই বাজারেও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়ায় মার্কেটে তারল্য সংকটের মাত্রা বেড়েছে। তাই তারল্য সংকট ঠেকাতে আগামী এক-দুই মাস আইপিও’র অনুমোদন বন্ধ রাখার আহবান জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নতুন করে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট না বাড়ায় ব্যাংক ও অর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তারল্য সংকটে পড়েছে। এর প্রভাব পুঁজিবাজারেও পড়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৮
এমএফআই/এমজেএফ