ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সিঙ্গাপুর

মসজিদ তেনতারা দিরাজায় ঈদের জামাত

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৭
মসজিদ তেনতারা দিরাজায় ঈদের জামাত মসজিদ তেনতারা দিরাজায় ঈদের জামাত

সিঙ্গাপুর থেকে: সকাল ৭টায় ঘুম ভাঙলো। সিঙ্গাপুরে ঈদের নামাজের জামাতের অভিজ্ঞতা বাদ দেয়ার ইচ্ছে নেই। দ্রুত গোসল সেরে রওনা দিলাম। ৮৮ ক্লেমেন্তিতে মসজিদ তেনতারা দিরাজা। গুগল ম্যাপ খুলে বাঙালির ঈদ ঐহিত্য পাঞ্জাবি পরে রওনা দিলাম। 

ক্লেমেন্তি প্রধান সড়কে ওঠার পর দূর থেকেই দেখলাম মালয় পোশাক পরা এক পৌড় ভদ্রলোক হাঁটছেন। মাথার টুপি আর হাঁটার দ্রুততায় আন্দাজ করা যায় তিনি ঈদের জামাতেই যাচ্ছেন।

অনুসরণ করলাম এবার তাকে।  

কেন্ট ভেল থেকে হাঁটায় ১০ মিনিটের পথ মসজিদ একটি ছোট টিলার ওপর। সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই বোঝা গেলো ভিড় হবে। সিঙ্গাপুরের বন্ধু জাকারিয়া জয়নালের তথ্যমতে এখানে মূলত মালয়রা নামাজ আদায় করবেন। মসজিদের বাইরে নারীদের অবস্থানও উল্লেখযোগ্য। নারীদের জামাতের জন্যে আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা রয়েছে।  

...তবে জাকারিয়ার কথা পুরোপুরি সত্য হলো না। ২০ শতাংশের বেশি বাংলাদেশি। অন্তত পাঞ্জাবি আর শরীরের কাঠামোতে তাই মনে হলো। বেশ গুরুগম্ভীর পরিবেশ।  

সিঙ্গাপুর পৃথিবীর তৃতীয় ধনী দেশ। তবে এই মসজিদের ভেতরের কাঠামো দেখে বোঝা যায় এখানে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করেনি। যেখানে আমার গ্রামের ছোট মসজিদেও টাইলসসহ নানা কারুকাজ করে রেখেছে। তবে জাকারিয়ার তথ্য মতে, এখানে মুসলমানরা অনেক বেশি দান করে তৃতীয় বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোতে অর্থ পাঠানোর জন্য। আর মসজিদে মানুষ নামাজ পড়তে এলে এমনিতেই সুন্দর দেখায়, বাড়তি চাকচিক্যের দরকার নেই।  

...ইমামকে এখানে ইংরেজিতে এবং যতগুলো সম্ভব ভাষায় দক্ষ হতে হয়। কারণ আরবী ছাড়াও মালয়, তামিল, চায়নিজ এবং ইংরেজিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হয় তাকে। নামাজের আগেই বেশ কয়েকবার দাঁড়িয়ে মানুষকে জায়গা ঠিক করতে বলেন। কারণ বাইরে মানুষের ভীড় বাড়ছিল।  

জামাতের সময় সকাল ৮টা। কাতার সোজা করে দাঁড়িয়ে পড়ে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর মুসলমানরা।  

তবে সাধারণভাবেই নামাজের নিয়ত করার সময় ভুল হলো অনেকেরই। এখানে তাকদিরের পর ৭ তাকদিরে যেয়ে হাঁত বাঁধা হয়।  

নামাজ শেষ করতে বেশি সময় নিলেন না ইমাম। তবে এখানে নামাজের পর খুতবা হলো এবং সেই খুতবা সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজিতে সামনের টিভি স্ক্রিনে ভেসে উঠতে থাকে। এর মধ্যেই একজন শিশু দানের ঝোলা নিয়ে প্রতিটি সারিতে হেঁটে বেড়ালো। যার যেটুকু সামর্থ্য আছে দান করলেন। অনেক বাংলাদেশিকেও দেখলাম দান করছে। আর দানের বেলায় পাঁচ এবং ২ ডলারের নোটই বেশি দিতে দেখলাম। অনেকেই আবার শিশুটির লম্বা পোশাকের পকেটে আলাদা করে টাকা গুজে দিচ্ছিল।  

নামাজ শেষে এখানে বাংলাদেশের মতো কোলাকুলির রেওয়াজ নেই। তবে পাশের বাঙালি ভাইকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করলাম।

ক্লেমেন্তি প্লাজায় মেকানিকের কাজ করেন মুন্সিগঞ্জের আবুল কালাম।  

আজকে সিঙ্গাপুরে ঈদের ছুটি। কি করবেন? জানতে চাইলে বলেন, বাসায় যেয়ে ঘুমাবো। এখানেতো আর কোরবান নেই। আগামীকাল দেশে কোরবান দেয়া হবে। তখনই বাড়িতে সবার সঙ্গে কথা বলা হবে বলে জানান তিনি।  

এশিয়ান জার্নালিজম ফেলোশিপের পরিচালক এলান জনের দেয়া তথ্যমতে, আগে এখানে প্রকাশ্যে কোরবানি দেয়া হতো। এখানে ভেড়া কোরবানি দেয়া হয় যেগুলো অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হয়। তবে অস্ট্রেলিয়া বলেছে, এই প্রকাশ্যে কোরবানি দিলে তারা পশু সরবরাহ বন্ধ করে দিবে। তাই এখন কসাইরা কোরবানি দেয় এবং পরে মাংস মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দেন।  

কেন্ট ভেলে ফিরে এলাম। সরাসরি নাস্তার জন্যে কেন্টিনে গেলাম। কে বলবে আজ ঈদের দিন! সবাই বুফেতে নাস্তা নিতে আর কাজের কথায় ব্যস্ত।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৭
এমএন/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

সিঙ্গাপুর এর সর্বশেষ