সিঙ্গাপুরের লিউ কিউয়ান ইউ ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়াম। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সিঙ্গাপুরের ভেতরেই।
দীর্ঘ শরীর। পুরো একটি হল রুম প্রয়োজন হয়েছে এই ডাইনোসর পরিবারের জন্য। দুনিয়ায় এখন পর্যন্ত একটি মাত্র ডাইনোসর পরিবার পাওয়া গেছে। তাদের স্থান এখানে রয়েছে। বাবা ডাইনোসরের নাম প্রিন্স, মায়ের নাম এ্যাপোলোনিয়া, সন্তান টুইংকি।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের জীব বিজ্ঞানের প্রবীণ অধ্যাপক লিও তান এদিন আমাদের গাইড। তিনি বলেন, জিন থেকে পাওয়া প্রাণীর অস্তিত্বে ৩০ শতাংশ পাওয়া গেলেই সেটাকে পরিপূর্ণ বলা যায়। তবে আমরা ভাগ্যবান, কারণ এই ডাইনোসরগুলোর শরীরের ৮০ শতাংশই পেয়েছি আমরা।
২০০৭ সালে আমেরিকার টেন শিপ শহরে জীব বিজ্ঞান অনুসন্ধানরত এক পরিবারের কাছ থেকে চার কোটি ৯ লাখ ডলারে এই ডাইনোসর পরিবার কেনা হয়েছে। তিনি বলেন, ওই সময় আমার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন গবেষক ছিলেন আমেরিকান। তার জমিতেই পাওয়া গিয়েছিল এই ডাইনোসরের কঙ্কাল। তাই বেশ কম দামেই আমরা কিনতে পেরেছিলাম।
এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হওয়া ডাইনোসর কঙ্কালের মধ্যে এগুলোই সবচেয়ে বড়। গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, এই ডাইনোসর প্রজাতি সবজি খেতো। তারা ঘাস এবং লতাপাতা খেয়ে বেঁচে থাকতো।
কিভাবে মৃত্যু হয়েছিলো তাদের? লিও তান বলেন, বড় ভূমি ধস বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে এদের মৃত্যু হয়নি। ভূমি ধসে মারা যাওয়া অন্য ডাইনোসরের আকৃতি এতো নিখুঁতভাবে পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, প্রিন্স তার পরিবার নিয়ে নদীতে পানি খেতে গিয়েছিল। তবে বালুময় নদীতে নামার পর তারা হয়তো আর উঠে আসতে পারেনি। বরং নদীর নিচে বালু চাপা পড়ে যায়। তবে এ জন্যই তাদের শরীরের কাঠামোর আশিভাগই সঠিকভাবে পাওয়া গেছে।
দুই বছর আগে চালু হওয়া এই জাদুঘরে এখন প্রতিদিন কয়েকশ’ দর্শণার্থী দেখতে আসেন ডাইনোসরের কঙ্কাল।
মিউজিয়ামের অন্যতম উদ্যোক্তা হিসেবে লিও তান বলেন, আমরা সরকারকে প্রথমে বোঝানোর চেষ্টা করি একটি প্রাকৃতিক জাদুঘরের প্রয়োজনীয়তা। প্রথম দিকে সরকার থেকে সাড়া থাকলেও অর্থের যোগান হচ্ছিল কম। আমি গণমাধ্যমের অফিসগুলোতে ছুটতে শুরু করি। তারা আমার উপর বিশ্বাস রেখে কিছু রিপোর্ট করে। যেখানে আমি জনগণকে একটি প্রাকৃতিক জাদুঘর গড়ে তোলার জন্য দান করতে বলি। আমি ভাবিনি এতো সাড়া পাবো। তবে বিত্তশালীরা অভূতপূর্বভাবে সাড়া দিয়েছেন।
লিও তান বলেন, ভবিষ্যতের দিনগুলোতে প্রাকৃতিক এবং জীব বৈচিত্র নিয়ে জাদুঘরগুলো মূল্যবান হয়ে উঠবে। কারণ মানুষ এই পৃথিবীর জীবন প্রণালী নিয়ে আরো অনেক বেশি গবেষণা করবে।
এখানে ডাইনোসরের হাড়ের একটি অংশ খোলা রাখা হয়েছে। তান বলেন, গবেষণার জন্যে এই হাড়টি রাখা হয়েছে। এছাড়াও মানুষ ধরে দেখতে চায়। ধরে দেখলাম। মনে হলো, যেন কয়েক কোটি বছর আগের এক সবুজে ঘেরা বন দেখতে পাচ্ছি। যেখানে গাছ পালা মুড়িয়ে শরীর দুলিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এই বৃহদাকার প্রাণী।
সাগরে নদীতে প্লাস্টিক ফেলার আগে ভাবুন
ডাইনোসরের কঙ্কালের পরই আরেকটি বড় প্রাণীর কঙ্কাল। এটা আন্দামান সাগর উপকূলে পাওয়া এক তিমির কঙ্কাল। ২০১৫ সালের ১০ জুলাই এই তিমির মৃত্যু হয়। এরপর এর কঙ্কাল রাখা হয় এই জাদুঘরে।
মৃত তিমির শরীরে বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য পাওয়া যায়। তান বলেন, এসব প্লাস্টিকের জিনিসগুলো এখানে রেখে দেয়া হয়েছে। সাগরে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে এই প্লাস্টিকগুলোও তিমি মাছটি খেয়ে ফেলেছিল। তবে অন্যন্য জিনিস পচে গেলেও এগুলো পচেনি। এতে বোঝা যায়, সাগর বা নদীতে প্লাস্টিক ফেললে প্রাণী কূলের জন্য তা কতোটা ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭
এমএন/জেডএম