নীলফামারী: নীলফামারীর মেয়ে মারুফা আক্তার। একদিন বাবার সঙ্গে জমিতে টেনেছেন মই, হতদরিদ্র বর্গাচাষি বাবাকে সহায়তা করেছেন কৃষিকাজে।
ছোটবেলা থেকেই খেলার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল মারুফার। শুরুতে তার খেলার দিকের এই ঝোঁককে গ্রামের অনেকেই ভালোভাবে নেয়নি। তবে বাবার স্বপ্ন পূরণে গাঁয়ের লোকের কথা কানে না তুলে এগিয়ে গেছেন অদম্য সাহস নিয়ে।
মারুফার অনেক বড় খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আগেই। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলছে। টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলেছেন মারুফা। তার সতীর্থ স্বর্ণা, দিশা, দিলারাও খেলেছেন দারুণ।
আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলেও আছেন তিনি। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের তার তিন সতীর্থর সঙ্গে সুযোগ পেয়েছেন নারী টি-টোয়েন্টির জাতীয় স্কোয়াডে।
নীলফামারী সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের ঢেলাপীর এলাকার কৃষক আলিমুল্লাহর ছোট মেয়ে মারুফা আক্তার। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভালো লাগা তার। প্রথম দিকে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গেই খেলতেন। পরে বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ পান তিনি। খেলেছেন বিভিন্ন ক্লাব ও দলে।
২০২১ সালে করোনাকালে খেলা বন্ধ থাকায় বাবার সঙ্গে বর্গা জমিতে মই টানার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নজরে আসেন মারুফা।
বড় ভাই আল-আমিন খুলে বললেন সেই সময়ের কথা। অভাব-অনটনের সংসারে দুই বেলা ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য যেখানে সংগ্রাম করতে হয়, সেখানে ক্রিকেট খেলা বিলাসিতা মনে হয়েছিল মারুফার।
তাই করোনার সময়ে পারিবারিক দুরবস্থায় ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন তিনি। তবে এগিয়ে আসে বিসিবি। মারুফা ফিরে যান আগের ঠিকানা বিকেএসপিতে। বছর না পেরোতেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখিয়ে ১৮ বছর বয়সেই ডাক পেয়ে যান জাতীয় দলে।
এবার নিগার সুলতানা জ্যোতির নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের এই দলে জায়গা করে নিয়েছেন ১৯ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার মারুফা। জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়ায় তার পরিবার ও নীলফামারীতে এখন বইছে খুশির বন্যা।
নীলফামারী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন মুন বলেন, মারুফা আক্তার আমাদের গর্ব। বিশ্ব দরবারে ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’ মারুফা বাংলাদেশকে তুলে ধরবে তার নৈপুণ্যে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা মেয়েটি অল্প সময়ে ক্রিকেটজগতে তোলপাড় করায় আমরা অভিভূত।
মারুফা আক্তার বলেছেন, ‘প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছি। দেশের হয়ে বিশ্বকাপ ছিনিয়ে আনার একমাত্র লক্ষ্য থাকবে আমার। ’
মারুফা জানিয়েছেন, পড়ালেখার পাশাপাশি ছোটবেলা থেকে কৃষিকাজে বাবাকে সাহায্য করতেন তিনি। এই সবকিছুর পাশাপাশি বড় ভাই আল-আমিনকে সঙ্গে নিয়ে পরিত্যক্ত রেললাইনের পাশে নিয়মিত ক্রিকেট অনুশীলন করতেন। ২০১৮ সালে তিনি বিকেএসপিতে সুযোগ পান। সেখানে দুই মাসের ক্যাম্প শেষ করেন।
ক্যাম্প শেষে খুলনার ইমতিয়াজ হোসেন পিলু তাকে ২০১৯ সালে মোহামেডানের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলার সুযোগ করে দেন। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মারুফাকে।
বিশ্বকাপে মেয়ে খেলবে এমন সংবাদে বেজায় খুশি মারুফার বাবা আলিমুল্লাহ। তিনি বলেছেন,নিজের কোনো জমি কিংবা বসতভিটা নেই। শ্বশুরের দেওয়া বাড়িতে থাকি। অন্যের জমি বর্গাচাষ ও দিনমজুরি করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছি। বিশ্বকাপে মেয়ে ভালো কিছু করবে, এই বিশ্বাস রয়েছে।
তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে আমার মেয়েটা বড় হয়েছে। আশা করি সে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে। গ্রামবাসীর জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৩
এসএএইচ