ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

অদম্য চার নারীর হার না মানার গল্প

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২১ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৭
অদম্য চার নারীর হার না মানার গল্প ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সঠিক পথ নির্দেশনা আর সহযোগিতা করা হলে নারীরাও যে সফলতার শ্রেষ্ঠ আসনে বসতে পারেন তার অনন্য উদারহণ শিরিন আক্তার, মাহফুজা খাতুন শিলা, আফরানা ইসলাম প্রীতি ও হিরা মণি। সমাজের তথাকথিত পুরুষতান্ত্রিকতা বাধা ডিঙ্গিয়ে দেশের সর্বোচ্চটা অর্জন করেছেন। বদলে দিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতের চিত্রপট। হয়েছেন উজ্জ্বল নক্ষত্র।

তবে তাদের সফলতার পেছনের গল্পটা কঠিন যুদ্ধকে জয় করার। যেটা অনেকেরই অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।

কত কষ্টের মধ্যেও কীভাবে সফল হয়েছে সেই হার না মানার গল্পগুলো শুনিয়েছেন এই চার ক্রীড়াপ্রেমী।

বুধবার (০৮ মার্চ) নারী দিবস উপলক্ষ্যে বার্গার কিং বাংলাদেশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই চার নারী জীবনযুদ্ধের গল্প শোনান।

দেশের অ্যাথলেট জগতে অনন্য এক নাম শিরিন আক্তার। টানা তিনবার দ্রুততম মানবী হয়েছেন। সামার অলিম্পিকে দেশের হয়ে করেছেন প্রতিনিধিত্ব। শিরিন আক্তার বলেন, ‘পরিবারে ও এলাকায় আমাকে ‘মেঝ ভাই‘ হিসেবে ডাকতো। পরিবারের প্রথম সন্তানটি মেয়ে হওয়ায় বাবা চেয়েছিল পরের সন্তানটি ছেলে হোক। এ নিয়ে মাজার মান্নতও কম হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমি হলাম। তাও আবার শ্যাম বর্ণ। স্কুলে পৌঁছাতে হবে সবার আগে। তাই নিজের আগে কেউ যেতে দেখলে দৌড়ে সবার আগে পার হয়ে যেতাম। খেলায় এতো পুরস্কার পেতাম যে পুরস্কার নেয়ার জন্য কাউকে সাহায্য করতে হতো। দৌড়াদৌড়ির কারণে পায়ের স্যান্ডেল টিকতো না। পারিবারিক অবস্থা করুণ থাকায় বাবা স্যান্ডেলও কিনে দিতে পারতেন না। অবশেষে শত বাধা পেরিয়ে বিকেএসপিতে ভর্তি হই। সেখান থেকেই দ্রুত মানবী হয়ে ‍উঠি। জাতীয় পর্যায়ে সেরা খেতাব পাই। ’

এতিমখানা থেকে সেরা হওয়ার গল্পটি শোনালেন মাহফুজা খাতুন শিলা। তিনি ২০১৬ সালে সাউথ এশিয়ান গেমসে ৫০ ও ১০০ মিটার সাঁতারে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। শিলা বলেন, ‘জীবনের শুরুতে এতিমখানায় কাটাতে হয়েছে। এতিম ছিলাম না কিন্তু সাঁতার ও অন্যান্য খেলাধুলায় জেলা পর্যায়ে এতিমখানায় সুযোগ বেশি ছিল বলেই সেখানে থাকি। দিনের পর দিন এতিমখানায় থাকার সময় নিজেকে এতিম মনে হতো। প্রশিক্ষণের জন্য অনেকদিন থেকে কোচের বাসায়। এমন অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে দেশের সেরা সাঁতারু হয়েছি। ’

টেনিস সম্পর্কে প্রথম দিকে কোনো ধারণাই ছিল না আফরানা ইসলাম প্রীতির। ছোটবেলা থেকে খেলার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ ও পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে দেশের সেরা টেনিস খেলোয়াড় এখন তিনি। খুব কম বয়সেই দেশের টেনিস জগতে সকল বয়সের চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। আফরানা ইসলাম বলেন, ‘স্কুলে পরিচিত ছিলাম চ্যাম্পিয়ান গার্ল হিসেবে। সেটি ছিল ব্যাডমিন্টনের জন্য। ছোটবেলা থেকেই খেলার প্রতি আগ্রহ ছিল। পরিবারের সমর্থন ছিল। তাই বিকেএসপিতে কোচিং শুরু করি। কিন্তু সেখানে ব্যাডমিন্টন নেই বলে বেছে নেই টেনিস। যদিও খেলাটি কী তা তখনও জানতাম না। ভর্তি যখন চূড়ান্ত তখনি বাবা বিগড়ে বসেন। মা ও নানীর সক্রিয় সহযোগিতায় বিকেএসপিতে ভর্তি হই। অনেক কম বয়সে সাফল্য পাই। অনূর্ধ্ব-১৪ এশিয়ান টেনিস চ্যাম্পিয়ন হই। ‘

হিরা মনিকে তীর ধনুকের রানী বলা হয়। মাওলানা ভাসানী জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথম আইএসএসএফ ইন্টারন্যাশনাল সলিডারিটি আর্চারি চ্যাম্পিয়নশীপে আজারবাইজানকে হারিয়ে মহিলা এককে স্বর্ণপদক লাভ করেন। যদিও সফল হওয়ার গল্পটা তার বেশ কঠিন ছিল। হিরা মনি শোনালেন সেই দু:খগাঁথা গল্পটি, পরিবারে চার বোনের মধ্যে ছিলাম তৃতীয়। সবাই ভাবতো মেঝো বোনই হয়তো ভালো খেলোয়াড় হবে। কেননা তার পুরস্কারই ছিল সবচেয়ে বেশি। লেখাপড়ায় কম মনোযোগী ছিলাম। খালার উৎসাহে বিকেএসপিতে প্রথম ভর্তি হই। তীর ধনুক দেখে মুগ্ধ হই। এক সময় খেলায়েও মনোযোগ হারিয়ে ফেলি। তারপর ফিরে আসি। প্রথম যেদিন আমার জন্য জাতীয় সঙ্গীত বাজে সে স্মৃতি ভুলতে পারি না। আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে মহিলা এককে স্বর্ণপদক লাভ করি।     

ক্রীড়াজগতের এই নক্ষত্রদের সম্মাননা প্রদান করেছে ফাস্ট ফুড বার্গার চেইন বার্গার কিং বাংলাদেশ। সম্মেলন শেষে চারজনকে সম্মাননাসূচক ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

এ সময় বার্গার কিং বাংলাদেশ রেস্টুরেন্টের রেস্টুরেন্ট অপারেশনস কাজী তানভীর আক্তার, হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স রকিব মাহমুদ এবং গ্রুপ হেড অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মনোয়ার হোসেনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, ০৮ মার্চ, ২০১৬
জেএইচ/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।