ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারার ফুল

পুনর্মিলন নয়, পূর্ণ মিলন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
পুনর্মিলন নয়, পূর্ণ মিলন আনিসুর রহমান মিলন/ছবি-নূর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

‘ব্ল্যাকমেইল’ ও ‘ভালোবাসার গল্প’- দুটি ছবি নিয়ে বছর শেষ হতে চলেছিলো আনিসুর রহমান মিলনের। কিন্তু বছরের প্রান্তে এসে নিজেই চমকিত।

অভিনয় দেখাতে পেরেছেন এমন আরেকটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে। ‘লালচর’-এর মাধ্যমে মিলন পূর্ণতার তৃপ্তি পাচ্ছেন শেষমেষ, এটাই ২০১৫ সালের সেরা প্রাপ্তি।

মাছ ধরে সংসার চালাতে চালাতে বিরক্ত এক তরুণ। নদী তীরবর্তী জনপদ। নদী জীবন, নদীই জীবিকা। কৃষিকাজ করারও উপায় নেই। তরুণের খুব ইচ্ছে হয় হালচাষ করবে, মানে মাছ ধরা থেকে সে মুক্তির উপায় খোঁজে, কিন্তু পায় না। এমন সাদামাটা দিন যখন যাচ্ছে, আকস্মিকভাবে সেই নদীটিতে জেগে ওঠে নতুন চর। এর সঙ্গে সঙ্গে এই তরুণতো বটেই, পুরো এলাকার মানুষ স্বপ্নবিলাসী হয়ে ওঠে। তরুণটি ভাবে, যাক, এখন থেকে আর মাছ ধরতে হবেনা তাকে। এতোদিনে সে এও জানতে পারে যে, ওই চরে তাদের নিজেদের জমি আছে। এবার আর ঠেকায় কে! তরুণটি ভাবে, এবার কৃষিকাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো যাবে। নিজের ভিটেয় নতুন ঘর হবে, আসবে বউ আর কতো কী। কিন্তু বিপত্তি অন্যখানে। স্বপ্নে ঘটে ব্যাঘাত। ক্ষমতাশালীরা দখলের চেষ্টায় মাতে, ‘এই চর আমার’ বলে। সহজ-সরল সেই ছেলে এবার আর চুপ থাকে না। ‘জাইল্যার পুত’ মিলন প্রতিবাদে নামে। গড়ে তোলে প্রতিরোধ।

এমনই গল্প ‘লালচর’ ছবির। নাদের চৌধুরীর পরিচালনায় এ ছবিতে মিলন হাজির হচ্ছেন ভিন্নরূপে। ‘অনেক সাধের ময়না’র পর এটি তার ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই বিশ্বাস করেন তিনি। ‘লালচর’ সারাদেশে মুক্তি পাচ্ছে ২৫ ডিসেম্বর। সরকারি অনুদানের এই ছবিটির ব্যাপারে ইতিমধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে দর্শকমহলে। ট্রেলার ও গানের প্রমোশনেই সেটা টের পেয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সঙ্গতকারণেই মিলনের প্রত্যাশা একটু বেশিই।

‘লাল চর’-এর শুটিং হয় মুন্সীগঞ্জের চর এলাকায়। সময়টা এ বছরের ফেব্রুয়ারি, তখনো শীত ছিলো। টানা কয়েক সপ্তাহ সেখানে ছিলেন শিল্পী ও কলাকুশলীরা। একমাত্র মিলন ঢাকা থেকে গিয়ে শুটিংয়ে যোগ দিতেন। কাজের অভিজ্ঞতা হিসেবে মিলন বলেন, ‘এমনও হয়েছে যে, আমি শেষ রাতে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে স্পটে পৌঁছে দেখি সবাই ঘুমে ব্যস্ত। তো, হয় কী, নায়ক আগেভাগে সেটে চলে এলে সবাই তাড়াহুড়ো শুরু করে। স্পিরিট পায়। সেটাই ঘটেছে ছবিটির শুটিংয়ের বেলায়। খুব যত্ন নিয়ে, আন্তরিকতার সঙ্গে আমরা কাজটি করেছি। ’

জানালেন ছবিটি নিয়ে তার প্রত্যাশা-প্রতীক্ষার কথাও। বলেন, ‘ছবিটি দেখলে দর্শক তৃপ্তি নিয়েই হল থেকে বেরুবেন। গ্রাম-বাংলার ছবি। মাটি-মানুষের ছবি। বৈচিত্র আছে গানেও। আঞ্চলিক ভাষার গানগুলো দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাবে। ’

ছবিটিতে মিলনের বিপরীতে আছেন নবাগতা মোহনা মীম। নতুন নায়িকা সম্পর্কে মিলনের বক্তব্য, ‘শুরুতে ওর কিছুটা জড়তা ছিলো। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ও কাজটার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরেছে। আর নাচের মেয়ে বলে মীমের এক্সপ্রেশন ও রি অ্যাকশন খুব দিতে পেরেছে। মীমের মধ্যে ভীষণ চেষ্টাও দেখেছি। মেয়েটা ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে। ’

এক বছরে তিন ছবি মুক্তিতে মিলন বেশ খুশি। তিনি মনে করেন, সংখ্যার দিক দিয়ে এটা যথেষ্ট। নিজের কাজের মূল্যায়ন করলেন এভাবে, “এখন কোনো ছবিই চলছে না, এটা অনেকেই বলছেন। এটা একটা বিষয়। আমি যদিও বেছে বেছে করেছি। কিন্তু সবার কাছে যে ভালো লাগবে সেটা নাও হতে পারে। ‘ভালোবাসার গল্প’ আমার পছন্দের ছবি। অন্যদিকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ অন্য ঘরানার। এটা নিয়ে কথা উঠেছিলো। যা’ হোক, ‘লালচর’ বেশ প্রিয়। সবগুলোর দায় আমার। হয় কী, ভালো-মন্দ শুধু নায়কের ঘাড়ে চাপালে হয় হয় না। পরিচালক কিংবা অন্যদের ঘাড়েও যায়। সব মিলিয়ে ২০১৫ আমার জন্য বেশ ভালো বছর। ”

নকল বা অনুকরনের ছবি নিয়ে মিলন জানান, পাশের দেশেও অনুকরন কিংবা নকল ছবি হচ্ছে। সফলতা পাচ্ছে আবার ব্যর্থও হচ্ছে। এই সমীকরনটা জটিল। এ দেশে অনুকরনের ছবি নানা কারণে মার খাচ্ছে। বাজেট স্বল্পতা একটা বিষয়। শিল্পী ও টেকনিশিয়ানরা হয়তো পুরোপুরি ভালো করতে পারছেন না। এসব কারণে একটা নকল গল্পের ছবি বা অনুকরনের ছবি ফ্লপ হচ্ছে। যখন সেটা আসল ছবিকে উতরে যেতে পারছে তখনই সফল হচ্ছে। মিলনের মতে, শতভাগ মৌলিক গল্পের বাণিজ্যিক ছবি এখন কমই হচ্ছে। কোনো না কোনোভাবে ছবিগুলো অন্য দেশের ছবির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। এটা হতেই পারে। ভালো ও সফল হওয়াটাই শেষ কথা।    

মিলন জানান, ২০১৫ সালে তার আরেকটা বড় প্রাপ্তি বুলবুল বিশ্বাস পরিচালিত ‘রাজনীতি’ ছবিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া। এতে শাকিব খানের সঙ্গে সমান্তরাল একটি চরিত্রে দেখা যাবে তাকে। আছেন অপু বিশ্বাস। মিলন বলেন, ‘গল্পে এতো বাঁক-উপবাক যে, দর্শক ছবিটিতে দেখতে দেখেতে একেক সময় একেকটা ভাববেন। ছবির চরিত্রগুলো রহস্যাবৃত। এই মনে হবে মিলন ভালো, এই মনে হবে খারাপ। সব মিলিয়ে আমি প্রাণ খুলে অভিনয় করতে পারছি। ’

মিলন এখন আছেন স্ত্রী ও সন্তানের কাছে, যুক্ত্ররাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসে। উদ্দেশ্য, একমাত্র ছেলের জন্মদিন পালন। সেখান থিকে ফিরে আবারও ‘রাজনীতি’র সেটে ঢুকবেন নায়ক।

এদিকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) ‘লালচর’ ছবিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টার সিনেমাসে। সেখানে উপস্থিত থাকতে পারছেন না মিলন। এ নিয়ে আক্ষেপ আছে তার। খুব ইচ্ছে ছিলো ছবিটির প্রচারনায় অংশ নেওয়ার। পারিবারিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সেটা ঘটছে না। মিলনের বিশ্বাস, ‘লালচর’ সাফল্য পাবে, দর্শকের ভালোবাসা পাবে।

** ‘লালচর’ ছবির গান ‘হংসমিথুন এক জোড়া’ :


বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
এসও/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ