ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারার ফুল

হুমায়ূন আহমেদ আমাকে দশে ১২ দিতেন: শাওন

সোমেশ্বর অলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
হুমায়ূন আহমেদ আমাকে দশে ১২ দিতেন: শাওন মেহের আফরোজ শাওন/ছবি: নূর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হুমায়ূন আহমেদের ‘চলো না বৃষ্টিতে ভিজি’ গানটি নতুন করে ইউটিউবে এলো। এর দু’দিনের মাথায় অতর্কিত বৃষ্টি নামলো ঢাকায়! ২৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি বৃষ্টি-হাওয়ায় অন্যরকম।

এমন একটা দিনে, ‘কৃষ্ণপক্ষ’ মুক্তির মুখে (২৬ ফেব্রুয়ারি) দাঁড়িয়ে ঝড়ো সংলাপ বিনিময় হলো পরিচালক মেহের আফরোজ শাওনের সঙ্গে।

আলোচনায় অবধারিতভাবে উঠে এলেন হুমায়ূন স্বয়ং। এবং অবশ্যই ‘কৃষ্ণপক্ষ’র নানা দিক। প্রথম ছবির প্রচারণায় দারুণ ব্যস্ত শাওন। সকালে এই টিভি, বিকেলে ওই পত্রিকা- এভাবেই চলছে ক’দিন। হুমায়ূনহীন পৃথিবীতে কেমন বোধ করছেন শাওন? বাংলানিউজের কাছে অনেক কিছুই বললেন তিনি। পড়ুন তার সাক্ষাৎকার-

বাংলানিউজ: প্রথম ছবি পরিচালনা করবেন। আপনার কাঁধে হাত রেখেছেন হুমায়ূন আহমেদ- দৃশ্যটা এমন হতে পারতো। কোনো আক্ষেপ কাজ করছে?
মেহের আফরোজ শাওন: আমি যখন প্রথম নাটক নির্মাণ করি, স্নেহ ভালোবাসা পেয়েছিলাম তার। অনুপ্রেরণা ছিলো। উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও পেয়েছিলাম। আক্ষেপ আছে নিজের প্রতি।

বাংলানিউজ: আপনার প্রথম ছবি হতে পারতো ‘গৌরীপুর জংশন’ বা ‘নির্বাসন’। প্রস্তুতিটা তো তেমনই ছিলো?
শাওন: কথা ছিলো ২০০৮ সালে ছবি বানাবো। অনেকদূর এগিয়েও ছিলাম। তখন শুরু করলে হুমায়ূন আহমেদকে পাশে পেতাম। হয়ে ওঠেনি। ‘গৌরীপুর জংশন’-এর জন্য শিল্পী নির্বাচনও করেছিলাম। অার ‘নির্বাসন’ তো বেশ বড় পরিসরের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি। যা হয়, যা ভাবি তা অনেক সময় করা হয়ে ওঠে না।    

বাংলানিউজ: তো হঠাৎ করে ‘কৃষ্ণপক্ষ’ দিয়ে যাত্রা শুরু করলেন। এর পেছনে কী কারণ?
শাওন: ‘গৌরীপুর জংশন’ বা ‘নির্বাসন’ বানাতে গিয়ে বেশি সময় লাগতো। খুব ডিটেইল ভেবে রেখেছিলাম ‘গৌরীপুর জংশন’-এর। এ দুটোই অনেক বড় আয়োজনের ছবি। সব মিলিয়ে মনে হয়নি, এ দুটির কোনো একটি আমি ৪০ দিনের মধ্যে বানাতে পারবো এবং মুক্তি দিতে পারবো। তাছাড়া হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে ছবি করবো, আমি চেয়েছিলাম সেটা হোক প্রেমের গল্প। প্রেমের ছবি দিয়েই আমার ভালোবাসার মানুষটিকে ট্রিবিউট করতে চেয়েছি। এ কারণেই ‘কৃষ্ণপক্ষ’ বেছে নিয়েছি। বেঁধে দেওয়া সময়ে ঘোষণা অনুযায়ী এ ছবিই উপযুক্ত মনে করেছি।  

বাংলানিউজ: ছবিটি নির্মাণ করতে গিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই হয়েছে?
শাওন: সে তো অবশ্যই। কাজ করার আগে মনে করেছিলাম ‘কৃষ্ণপক্ষ’ তৈরি করা আমার জন্য সহজ হবে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, এটি একটি প্রেমের উপন্যাস। আসলে এটাতে অনেক কাজের জায়গা আছে। এখানে ক্লাইমেক্স বা এক্সিডেন্ট আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। ছবির জন্য এক্সিডেন্টের দৃশ্যটি ধারণ করতে গিয়ে মনে হয়েছে এর সঙ্গে নতুন পরিচয় হলো। আমি এবং সংশ্লিষ্ট সবাই বলেছেন যে, এটা বেশ অন্যরকম। এর অাগে এ ধরনের কাজ করা হয়নি।

বাংলানিউজ: উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণে কিছুটা ঝুঁকি থাকে। ‘কৃষ্ণপক্ষ’র বেলায় কী সেটা সত্যি?
শাওন: লেখক নিজের কল্পনা থেকে লেখেন। পাঠক নিজের কল্পনা থেকে পড়েন। ‘মেয়েটি সুন্দর’- এই সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা একেকজনের কাছে একেক রকম। লেখক নিজে নির্মাতা হলেও এই ঝুঁকি নিয়েই ছবি বানান। আমাকেও নিতে হয়েছে। একটি বহুল পঠিত উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র বানানো বেশ কঠিন কাজ। তবে এটা ঠিক, নির্মাতা হিসেবে নয়, দর্শক হিসেবে আমি ‘কৃষ্ণপক্ষ’কে সিনেমার পর্দায় কীভাবে দেখতে চাই- সেটাই তৈরি করেছি।

আবার এটাও মনে হয়, একটু কম পঠিত উপন্যাস নিয়ে কাজ করলেও হতো। এটা দুঃসাহসই বলতে পারেন। একটি ‘ভয়ঙ্কর’ জনপ্রিয় উপন্যাস নিয়ে পাঠকের সব কল্পনা আমার পক্ষে স্পর্শ করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সিনেমা হলে ‘কৃষ্ণপক্ষ’ দেখে অনেকের মনোক্ষুণ্ন হতেই পারেন! তবে হুমায়ূন আহমেদের দীর্ঘদিনের সঙ্গী হিসেবে চেষ্টা করেছি তার কল্পনার জায়গাটা ছুঁয়ে যেতে। আমি এটুকু বলতেই পারি, অন্য অনেকের তুলনায় আমি তাকে ভালো বুঝি।

বাংলানিউজ: শুনেছি, উপন্যাসের শেষ দৃশ্যটি ছবিতে রাখছেন না…
শাওন: উপন্যাস পড়ার আগে ‘পথের পাঁচালী’ ছবিটি দেখেছিলাম। শেষটা বেশ ভালো লেগেছিলো। পরে যখন উপন্যাসে শেষটা পড়েছি, মনে হলো, এটা আরও অনেক সুন্দর। ‘কৃষ্ণপক্ষ’র সমাপ্তিটা উপন্যাসে হুমায়ূন আহমেদ যেভাবে রেখেছেন সেটা অনেক বেশি বাস্তবিক ও যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু আমি চেয়েছি অরু (মাহি) থাক মুহিবের(রিয়াজ) অপেক্ষায়। মুহিব তো ফিরেও আসতে পারে! এ কারণে আবরারের (ফেরদৌস) সঙ্গে ওর বিয়েটা আমি দেখাইনি। দর্শক হিসেবে আমি হ্যাপি এন্ডিং দেখতে চাইনি, দেখাতেও চাইনি। চলচ্চিত্রের বিচারে আমি মনে করেছি যে, ‘কৃষ্ণপক্ষ’তে হ্যাপি এন্ডিং রাখা ঠিক হবে না।     

বাংলানিউজ: অরু নিজেই একটি জনপ্রিয় চরিত্র। এজন্য আপনি চাইলে নতুন মুখ নির্বাচন করতে পারতেন। কিংবা মঞ্চ বা টিভি নাটকের কাউকে নিতে পারতেন। সাহিত্যনির্ভর এ ছবিতে বাণিজ্যিক ছবির জনপ্রিয় নায়িকা মাহিকে পছন্দ করলেন কেনো?
শাওন: আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এ চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রের জন্য নতুন মুখই দরকার। কারণ মুহিবের নিজের একটি চেহারা আছে। এ ক্ষেত্রে রিয়াজ যখন মুহিব চরিত্রে রূপদান করে, তাকে রিয়াজই মনে হয় বেশি। আমি সময় পেলে অরুর জন্য নতুন মুখ নিতাম। কিন্তু একটি নতুন মেয়েকে শিখিয়ে কাজটা করার সুযোগ পাওয়া যায়নি। এ ক্ষেত্রে ভাবলাম, খুব দ্রুত চরিত্রটি কে ফুটিয়ে তুলতে পারবে। মাহির ‘অগ্নি টু’ ছবিটি দেখেছিলাম। মনে হলো, মেয়েটিকে দেখা যাক।

ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড থেকে ওকে চ্যানেল আইয়ের অফিসে দাওয়াত দেওয়া হলো। বলা হলো, যেন মেকাপ ছাড়া আসে। মাহিকে দেখলাম, ওর চেহারা এতো মিষ্টি! এরপর প্রস্তাব দেওয়া হলো ওকে। মাহি সানন্দে রাজি হলো। ও বলেছিলো, ‘স্যারের কাজ অামি করতে পারবো তো!’

হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের ছবিতে কাজ করবে- এই তীব্র আগ্রহটা ওর মধ্যে ছিলো। আমার মনে হলো হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে যার এতো আকর্ষণ, সেই মেয়েটির প্রতি সঠিক বিচার করা উচিত। অরুর চেহারা শ্যামলা বা সুন্দর এমন বর্ণনা উপন্যাসে ছিলো না। কাজেই মেকাপ ছাড়া মাহিকে অরু বলতে অসুবিধা নেই। মাহি দারুণ অভিনয় করেছে। দর্শক এবার মায়াবতী এক মাহিকে দেখবেন।    

বাংলানিউজ: হুমায়ূন আহমেদ যদি ‘কৃষ্ণপক্ষ’ দেখতেন, আপনাকে কতো নম্বর দিতেন?
শাওন: হুমায়ূন আহমেদ দশে আমাকে ১২ দিতেন! আমার ব্যাপারে তিনি অন্ধ ছিলেন। এ কারণেই বেশি নম্বর দিতেন। আমার প্রতি তার স্নেহ কিংবা মমত্ববোধ সবই ছিলো একটু বেশি।  

বাংলানিউজ: পরিচালক হিসেবে নিজেকে নিজে কতো নম্বর দিতে চান?
শাওন: আমি নিজেকে চলচ্চিত্র নির্মাতা মনে করি না। সবে তো যাত্রা শুরু হলো। আমি মনে করি, আমি জাস্ট পাশ করেছি।  

বাংলানিউজ: দ্বিতীয় বা পরের ছবির পরিকল্পনা আছে নিশ্চয়ই? হুমায়ূন আহমেদের গল্প নিয়ে তো কাজ করবেনই…
শাওন: হুমায়ূন আহমেদের লেখার ভাণ্ডার বেশ বড়। আমার পক্ষে একজীবনে তার গল্প-উপন্যাস নিয়ে কাজ করে শেষ করা সম্ভব নয়। তবে তিনি তো থাকবেনই আমার কাজে। কখনও সুযোগ পেলে নিজের চিন্তার কাজগুলোও পর্দায় ‍তুলে ধরতে চাই। আমি ইনসমোনিয়ায় ভুগি। রাতে যখন ঘুম হয় না, প্রচুর দৃশ্য ভাসে আমার চোখের সামনে। এগুলো দেখাতে চাই সিনেমায়।

বাংলানিউজ: অভিনেত্রী শাওন কী হারিয়ে যাচ্ছেন?
শাওন: আমি অরু চরিত্রে অভিনয় করতাম, যদি বয়স আমাকে সাপোর্ট করতো। আমি যে ধরনের চরিত্রে নিজেকে দেখতে চাইতাম সেগুলোতে অভিনয় করে ফেলেছি। সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে আগ্রহী নই। ঠিক সেজেগুজে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবো, প্রেমের সংলাপ বলবো- এগুলো আমার মধ্যে নেই। সত্যি বলতে, আমি অনেকটা হুমায়ূন আহমেদের গল্প-উপন্যাসের নায়িকাদের মতো। এখন যেসব চরিত্রের প্রস্তাব দেওয়া হয়, আমার মনে হয় পরিচালকরা ঠিক আমাকে বোঝেন না।   

বাংলানিউজ: গানের কী খবর?
শাওন: মাঝখানে চর্চা কমে গিয়েছিলো, আবার শুরু করেছি। গানটা গাইতে চাই, ভালো লাগে। সব ধরনের গান গাইতে পছন্দ করি। আইটেম নাম্বার গাইতেও আপত্তি নেই। তবে অ্যালবামের চল তো এখন নেই। কাজেই অ্যালবাম আসবে কি-না বলা যাচ্ছে না।

বাংলানিউজ: নিষাদ ও নিনিত নিশ্চয়ই বাবার খবর জানতে চায়!
শাওন: ওদের কখনও মনে হয় না যে, ওদের বাবা বেঁচে নেই! কারণ ওরা যখন গাড়িতে করে কোথাও যায়, পাশে একটা সিট খালি রাখে বাবা বসবে বলে। সেলুনে গেলেও একটা চেয়ার পাশে রেখে বসে। ওদের কাছে হুমায়ূন আহমেদ সব সময় বর্তমান। আমারও তাই মনে হয়…

বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
এসও/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ