ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারার ফুল

‘ট্রেলার যদি ক্ষ্যাত লাগে, ঝকঝকে ছবি বানিয়ে লাভ কী?’

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩১ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৬
‘ট্রেলার যদি ক্ষ্যাত লাগে, ঝকঝকে ছবি বানিয়ে লাভ কী?’ মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ-ছবি: নূর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

টিজারে প্রশংসা কুড়িয়েছেন, ট্রেলার বের হওয়ার পর তা বেড়েছে কয়েক গুণ। তাই উচ্ছ্বসিত মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ।

তার পরিচালিত চতুর্থ ছবি ‘সম্রাট’ মুক্তি পাচ্ছে ঈদের দিন। অ্যাকশন-রোমান্টিক ধাঁচের ছবিটি চলবে ঢাকাসহ সারাদেশের ৭৬টি প্রেক্ষাগৃহে। এটি নির্মাণের অভিজ্ঞাত, চলচ্চিত্র শিল্পে পরিচালকের কাজের জায়গা, অভিনয়শিল্পীদের মনোভাব ও অন্যান্য বিষয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।  

বাংলানিউজ : প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা কম হয়ে গেলো? নাকি ঠিকই আছে?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ :
এবারের ঈদে বড় বাজেটের চারটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে একসঙ্গে। সেখানে ৭৬টি সিনেমা হল ভালোই। ঠিকই আছে। অবশ্যই সন্তুষ্ট আমি।

বাংলানিউজ : ‘সম্রাট’ ছাড়া শাকিব খানের আরও দুটি ছবি আসছে ঈদে। বিশেষ করে ‘শিকারী’তে তার নতুন লুক ব্যাপক আলোচিত। আপনি কি একটু শঙ্কিত?
রাজ :
না, একদমই না। আমার কোনো ভয় নেই, ঈর্ষাও নেই। কারণ চারটি ছবিই ব্যয়বহুল। আমার তো মনে হয়, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক ঈদে এতো বেশি বাজেটের চারটি ছবি একসঙ্গে মুক্তি পায়নি। শুধু বড় বাজেট বললে ভুল হবে; মান, লোকেশন, পোশাক, গান, তারকাদের লুক- সবকিছুই চোখে পড়ার মতো। আমার ধারণা, যারা শাকিব খানের দর্শক, তারা তিনটি ছবিই দেখবেন তুলনা করার জন্য। আমি চাই, সবাই তিনটি ছবিই দেখুক, দেখলে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পেরই লাভ।  

বাংলানিউজ : শাকিব খানের তিনটি ছবির মধ্যে যদি ‘সম্রাট’কে এগিয়ে রাখতে বলি?
রাজ :
আসলে আমি নিজের ঢোল নিজে বাজাতে পারি না! উল্লেখযোগ্য ব্যাপার যদি বলেন, তাহলে ভাবুন ‘সম্রাট’ বাংলাদেশের একটা ছেলে বানিয়েছে। আর ‘শিকারী’র নেপথ্যে কাজ করেছে আন্তর্জাতিক একটি টিম। ওটা টিমওয়ার্ক। সত্যি বললে আমাদের দেশে যথাযথভাবে টিমওয়ার্ক হয় না। তাদের মারামারির দৃশ্যগুলোতে কাজ করেছে চেন্নাইয়ের একটি টিম। তাদের বাজেটও প্রচুর। তাদের পরিচালকের কাজ হচ্ছে পরিচালনা করা। বাদবাকি সবকিছুতে প্রযোজকের হয়ে দায়িত্বশীল কাজ করেন অন্যরা। কোথায় বাজেট গেলো, কোথায় কি হলো এসব নিয়ে পরিচালকের কোনো দুশ্চিন্তা নেই।  

কিন্তু এখানে আমি শুধুই পরিচালক ছিলাম না। আমাকে ম্যানেজারের কাজও করতে হয়েছে! শাকিব খান এসেছেন কি-না, অপু বিশ্বাসের রাগ হলো নাতো, মিশা সওদাগরের কি লাগবে, প্রযোজক টাকা পাঠালেন কি-না, লাইটের টাকা বন্টন হলো কি-না, চিত্রগ্রাহক ফোনে কথা বলছেন, কাবিলা ঝামেলা করেছেন- সবকিছু দেখভাল করার দায়িত্ব ছিলো আমার। এতোকিছুর পরও ছবিটি বানাতে পেরেছি, এখানে অন্তত আমি এগিয়ে!

বাংলানিউজ : শাকিব খানের তিনটি ছবির সঙ্গে জিৎ অভিনীত ‘বাদশা-দ্য ডন’ও মুক্তি পাবে। ঈদে বাইরের দেশের নায়কের ছবি মুক্তি দেওয়াটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য কতোটা সুফল বয়ে আনবে?
রাজ :
নায়ক কলকাতার হলেও এ ছবিতে আমাদের নায়িকা (নুসরাত ফারিয়া) আছে। ঈদের চারটি ছবির মধ্যে এর বাজেট সবচেয়ে বেশি। আমার জানা মতে, ছয় কোটি রুপি খরচ হয়েছে এটি বানাতে। মেকিংও ভালো হয়েছে যতোটুকু জানি। তবে আমার কাছে মনে হয়, এ ধরনের ছবি যদি দর্শক দেখে তাহলে তাদের রুচি বদলাবে।

এমন ঝকঝকে ছবি দেখলে চোখের আরাম পাওয়া যায়। গল্পটা হয়তো ভারতের দক্ষিণের কোনো ব্যবসাসফল ছবির স্বত্ত্ব কিনে বানানো। এ নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। আসল ব্যাপার হলো, টেকনিক্যালি ভিএফএক্স, সাউন্ড ডিজাইন কিংবা শট টেকিং বলেন, সবকিছুতে বিদেশি আমেজ পাওয়া যায়। ফলে সব মিলিয়ে চলচ্চিত্রই মনে হয়, ভিডিও মনে হয় না।  

আপনাকে একটা উদাহরণ দেই। ‘সম্রাট’ ছবির ট্রেলার মুক্তি দেওয়ার পর বাংলাদেশের একজন সুপারস্টার আমাকে বলেছেন, ‘তোমার ট্রেলার অনেক পশ (চকচকে) হয়ে গেছে!’ তার কথাটা ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক ভাবলাম। জানতে চাইলাম। কিন্তু ইতিবাচক কিছু পেলাম না। তার কথা হলো, বাণিজ্যিক ছবি এতো পশ বানানো উচিত হয়নি। তাকে বললাম, আমি এরকমই বানাতে চাই। আমার মানসিকতাই ছিলো এমন।

আমার লক্ষ্য, দর্শককে পশ বানানো। কিন্তু তার ওই একই কথা, বাণিজ্যিক ছবি নির্মাণ করতে হলে কিছুটা ক্ষ্যাত টাইপের বানাতে হবে! কিন্তু আমার পক্ষে তো তা সম্ভব না। ব্যবসার জন্য ক্ষ্যাত হওয়া অসম্ভব। পশ জিনিস দেখিয়ে ব্যবসা করলে তবেই নিজেকে সফল ভাববো। আমি চাই, দর্শকের রুচি উন্নত হোক। বলুন তো, এমন কথা যদি এ অঙ্গনেরই কেউ বলে তাহলে এ দেশে সিনেমা বানাবো কীভাবে?

দুঃখজনক ব্যাপার হলো, কাকরাইলে চলচ্চিত্র পাড়ার জন্য পাঁচ মিনিটের আরেকটি ট্রেলার বানাতে হয়েছে। এটা না বানানোর সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম। প্রয়োজনে সিনেমাই করবো না। কিন্তু প্রযোজকের এক কথা, কাকরাইলের হলমালিকরা এ ট্রেলার দেখে ছবি নেবে না। তাদের কাছে এটা পশ। শেষ পর্যন্ত বুকিংয়ের জন্য পাঁচ মিনিটের ক্ষ্যাত টাইপের একটা ট্রেলার বানানোই লাগলো।  

এখনও ২০১৬ সালে এসেও যদি এ ধরনের আলাদা ট্রেলার বানিয়ে বুকিং এজেন্টদেরকে ওভাবে খাওয়াতে হয় তাহলে এ সিনেমা বানানোর দরকার কি আমাদের? তাহলে ক্ষ্যাতই বানাই, সিনেমা পশ বানিয়ে লাভ কী? পশ জিনিস বানানোর পরও ক্ষ্যাত জিনিস দেখিয়ে যদি বিক্রি করতে হয় তাহলে আমার দরকার নাই সিনেমা বানানোর।  

বাংলানিউজ : ‘প্রজাপতি’, ‘ছায়া-ছবি’ ও ‘তারকাঁটা’র চেয়ে নতুন কী অভিজ্ঞতা হয়েছে ‘সম্রাট’-এ?  
রাজ :
শুরু থেকে টেলিভিশন অঙ্গনে কাজ করে এগিয়েছি। টিভি মিডিয়াই আমার শেকড়। তাই ‘প্রজাপতি’তে ফিল্মের একজন ছাড়া বাকি সবাইকে ছোট পর্দা থেকে নিয়েছি। ‘ছায়া-ছবি’র বেশিরভাগ অভিনয়শিল্পীও টিভির। ‘তারকাঁটা’য়ও একই ঘটনা। ‘সম্রাট’ই আমার একমাত্র ছবি যেটাতে টেলিভিশন মিডিয়ার একজন অভিনয়শিল্পীও নেই। সবাই চলচ্চিত্রের নিয়মিত শিল্পী। মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিতে যারা অভিনয় করেন, তাদেরকে নিয়েই বানিয়েছি ‘সম্রাট’।  

এ ছবির দৃশ্যধারণের সময় প্রম্পটিং (অভিনয়শিল্পীর জন্য পেছন থেকে সংলাপ বলে দেওয়ার পদ্ধতি) করতে হয়েছে। সংলাপ শুনে শুনে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অভিনয় করেছেন। আগের তিনটি ছবিতে আমার এ অভিজ্ঞতা ছিলো না। ডাবিংয়ের সময়ও প্রম্পটিং করতে হয়েছে। তখন আমার নিজেরই অস্বস্তি লাগছিলো। ভাবছিলাম প্রম্পটিং করলে ডাবিং করে কীভাবে? আবার এটাও মনে হলো, প্রম্পটিং ছাড়া তারা কাজটা পারেন না, এটা কিন্তু মেধার ব্যাপার। আমি এ পদ্ধতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিয়েছি।  

বাংলানিউজ : আপনার আগের তিনটি ছবির চিত্রগ্রাহক ছিলেন অন্যজন। এবার নিয়েছেন আরেকজনকে। তার কাজ নিয়ে মূল্যায়ন করুন।  
রাজ :
চিত্রগ্রাহকের মধ্যে লাইটের জ্ঞান থাকতে হয়। কম্পোজিশন চিত্রনাট্যেই থাকে। এটা কিন্তু চিত্রগ্রাহক করেন না। ‘সম্রাট’ নির্মাণের এক মাস আগে থেকে প্রতিদিন চিত্রগ্রাহককে গল্পটা বলেছি, রাতে কোনো আইডিয়া এলে শেয়ার করেছি। পান্ডুলিপি ছাড়াই গল্প মুখস্থ করানো ছিলো আমার উদ্দেশ্য। চিত্রগ্রাহক চন্দন রয় চৌধুরী মনোযোগী ছাত্রের মতো সব শুনেছেন। তার লাইটিং জ্ঞান ভালো। তিনি চারুকলার ছাত্র ছিলেন। ফলে গ্রাফ আর সাবজেক্ট-অবজেক্টের ফারাকটা ভালো বোঝেন।  

বাংলানিউজ : আপনার আগের তিনটি ছবিতে বিদেশি লোকেশন দেখা যায়নি। এবার থাইল্যান্ডে গিয়েছিলেন গানের কাজ করতে।  
রাজ :
এটা ছিলো শাকিব ভাইয়ের চাওয়া। গানগুলোর কাজ বিদেশে করার জন্য তিনিই উদ্বুদ্ধ করেছেন।  তবে আমি মনে করি, দিনের শেষে একটা ছবির মূল হচ্ছে গল্প। যদি গল্প দর্শককে আকৃষ্ট করে তাহলে গান-টান মুখ্য থাকে না। আমার এ ছবিতে চারটা গান। পাঁচ মিনিট করে হলে ২০ মিনিট চলে যেতো গানেই। কিন্তু ১২ মিনিট রেখে ৮ মিনিট ফেলে দিয়েছি।

আমার কাছে মনে হয়, পাঁচ মিনিট গান দেখা মানে গল্প থেকে বেরিয়ে যাওয়া। তখন আগের দৃশ্য-পরের দৃশ্য ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে গান যে প্রয়োজন নেই তা না। প্রয়োজন আছে বলেই রেখেছি। আড়াই-তিন মিনিটের মধ্যে গান শেষ করেছি। এজন্য আমার ছবির ব্যাপ্তি দুই ঘণ্টা। তবে সোয়া দুই ঘণ্টা ছিলো, কিন্তু ইচ্ছে করেই দুই ঘণ্টা রেখেছি।  

বাংলানিউজ : বাইরে দেশগুলোতে নির্মাণের মতোই গুরুত্ব দেওয়া হয় প্রচারণাকে। আমাদের এখানে এই ধারণা এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সেক্ষেত্রে ‘সম্রাট’-এর প্রচারণা নিয়ে আপনি কতোটা সন্তুষ্ট?
রাজ :
এখন প্রচারেই প্রসার, এতে কোনো দ্বিমত নেই। আমরা আসলে ছবি বানানোর আগে অনেক পরিকল্পনা করি। কিন্তু দিনের শেষে প্রচারটা করি না। কারণ প্রযোজকের টাকা শেষ হয়ে যায়। বাজেট ধরি ১ কোটি, সেটা গিয়ে ঠেকে দুই কোটি টাকায়। এসব পরিস্থিতি প্রচারের জন্য বরাদ্দ টাকা খেয়ে ফেলে। কেনো এমন হয় সেটা আরেকদিন বিস্তারিত বলা যাবে।

একটা উদাহরণ দেই। আমার পরিকল্পনা ছিলো সকাল ১০টায় কাজ শুরু করবো। কিন্তু অভিনয়শিল্পী এলেন বিকেল তিনটায়। আমি সকাল আটটায় স্পটে যাওয়ার পর যে সৃজনশীলতার ব্যাপারটা মাথায় থাকে, অপেক্ষা করতে করতে সেটা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়! এরপর নায়ক এলে আমার পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে কোনোরকম শেষ করেছি। আপস করেছি। রাত তিনটা পর্যন্ত দৃশ্যধারণ করলেও আমি তখন খুশি হতে পারিনি। এর একটা কারণ হলো শিফট বেড়েছে, ডাবল শিফট হয়েছে। তাই বাজেটও বেড়ে গেছে। কিন্তু আমার তো উপায়ও নেই, কাজটা নামাতেই হবে। আরেকটা হলো চাপ নিয়ে কাজ করেছি, তাড়াহুড়ো ছিলো। সবাই ভাবছে সময়মতোই চিত্রায়ন শেষ হয়েছে। কিন্তু খরচও তো বেড়েছে।

তাছাড়া প্রচারণা কীভাবে করবেন? আমাদের দেশের কোনো অভিনয়শিল্পীই এজন্য বাড়তি সময় দেন না। ভারতে যেটা হয়, কোনো ছবি মুক্তি পেলে অভিনয়শিল্পী প্রচারের জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ রাখেন। তার লক্ষ্য থাকে, ছবিটা হিট হলে পরের ছবিতে সম্মানী বাড়বে, হাতে নতুন নতুন ছবিও আসবে। ছবি এবং নিজের স্বার্থেই প্রচারণা করেন তারা। কিন্তু আমাদের দেশের তারকাদের মাথায় এটা থাকে না। তারা ছবির কাজ শেষ হলে ফি আমানিল্লাহ, খোদা হাফেজ বলে এটাকে জারজ সন্তান মনে করে চলে যান। এরপর আর খোঁজ নেন না। আবার ব্যবসাসফল হয়ে গেলে ঠিকই বলতে থাকেন- আমার ছবি হিট।  

বাংলানিউজ : এর সমাধান কী? প্রচারণা না থাকলে ভালো উপাদান হলেও দর্শক আগ্রহী হবে কী করে?
রাজ :
তা তো ঠিক। সমাধান হলো দিনের শেষে অভিনয়শিল্পীকেই স্বেচ্ছায় প্রচারণার মানসিকতা দেখাতে হবে। নয়তো তাদেরকে চুক্তি করার সময় প্রচারণার শর্ত যুক্ত করা যেতে পারে।  

বাংলানিউজ : আপনার ছবির নায়িকা অপু বিশ্বাসের কোনো খোঁজ নেই অনেকদিন ধরে। তার লাপাত্তা থাকাটা কি ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে? নাকি ইতিবাচকও হতে পারে?
রাজ :
এ বিষয়টিকে কোনো বাচকের মধ্যেই ধরছি না! অপু বিশ্বাস থাকলে হয়তো টিভিতে গিয়ে ‘সম্রাট’ নিয়ে দু'চার কথা বলতেন। তবে তিনি নেই বলে যে ছবির মাইনাস হচ্ছে তা না। দর্শক তো সিনেমা হলে পর্দাতেই তাকে দেখতে ঢুকবেন। তিনি সামনাসামনি আছেন কি নেই সেটা মুখ্য নয়। আমার কাছে মনে হয় না এটা ছবির জন্য মাইনাস। আবার প্লাসও হবে না।

বাংলানিউজ : শাকিব খান ‘সম্রাট’ হিসেবে কেমন করলেন? 
রাজ :
যখন দৃশ্য পড়ে শোনাতাম, শাকিব ভাই হাসতেন। মনে হতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কিন্তু ক্যামেরার সামনে তার কোনো শটই এনজি হয়নি। শাকিব ভাই রাত দুইটা-তিনটা পর্যন্ত কাজ করে দিয়েছেন। তিনি অভিনেতা হিসেবে তিনি দুর্দান্ত।  

আর একটা কথা, এ ছবিতে শাকিব খানের লুকে পরিবর্তন এনেছি। পোশাক পরিকল্পক রামীম রাজ সহযোগিতা করেছেন। এখন সবাই ‘শিকারী’তে তার লুকের প্রশংসা করছেন। কিন্তু আমিই যে তাকে প্রথম নতুনভাবে উপস্থাপনা করলাম, সেটা কিন্তু কেউ বলেন না। কারণ আমি বাংলাদেশি! ‘সম্রাট’ যদি ভারতীয় কেউ বানাতেন সবার মুখে তখন হয়তো এ বিষয়টি শোনা যেতো।  

বাংলানিউজ : অন্য অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে বলুন।  
রাজ :
অভিনয়ের দিক দিয়ে আমি সবার কাজে সন্তুষ্ট। মিশা ভাই চমৎকার অভিনেতা। অপু বিশ্বাস খুবই ভালো অভিনয় করেছেন। তাকে সকাল আটটায় বললে এক ঘণ্টা আগে এসে হাজির হয়েছেন। একটা গানের কাজ তো সারারাত করেছেন অপুদি। তার সময় বজায় রেখে চলা মনে থাকবে আমার। অনেক সহযোগিতা করেছেন তিনি। ইন্দ্রনীলও সময় বজায় রেখে কাজ করেন। তার অভিনয় দারুণ। তবে তিনি প্রম্পটিংয়ের সহায়তা নেন না।  

বাংলানিউজ : ছবি মুক্তির পর সমালোচনা হলে নিশ্চয়ই মন খারাপ হয়?
রাজ :
আমার আগের ছবি ‘তারকাঁটা’ মুক্তির পর সমালোচনার বন্যা বয়ে গেছে। তখন মনে হচ্ছিলো ছবি বানিয়ে বিশাল অপরাধ করেছি। ব্যাপারটা যেন এমন ছিলো- এলাকায় এমপি ইলেকশনে দাঁড়িয়েছি। নির্বাচনের আগে কথা দিয়েছি ব্রিজ, স্কুল, মাদ্রাসা গড়ে দেবো; কিন্তু এমপি হওয়ার পর কিচ্ছু করে দেইনি, এ কারণে আমাকে ধুয়ে-মুছে শেষ করে দিলো! তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, যারা এতোদিন ঘুমিয়ে ছিলেন তারা জেগে ওঠেন। সমালোচনা করেন। তবে শর্ত একটাই, গঠনমূলক হতে হবে।

সমালোচনা যদি গঠনমূলক না হয় তাহলে এবার সোচ্চার হবো। বিশেষ করে আমার ছবিতে গান লিখতে, গান গাইতে কিংবা অভিনয় করতে পারেনি এমন কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে সমালোচনা করলে সহ্য করবো না। আগেরবার নিরব ছিলাম, এবার চুপ থাকবো না। গঠনমূলক সমালোচনা করলে মেনে নেবো, তাতে আমার পরের ছবির উপকার হবে। আমি উল্টো সাধুবাদ জানাবো তখন। সমালোচনা না হলে ছবির ভুল-ত্রুটি বের হবে না। আমি সমালোচনার পক্ষে, কিন্তু সেটা হতে হবে গঠনমূলক।  

বাংলানিউজ : গুলশান ট্র্যাজেডি কি ছবির ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে?
রাজ :
পড়তে পারে। আমরা আসলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি এ হামলার ঘটনায়। এটা মনে পড়লেই রাতে ঘুমাতে পারি না। আমি ছবির চিন্তা করি না, দেশের ও জাতির কথা ভাবি। স্মরণকালের এ ঘটনায় কতো মায়ের বুকই না খালি হয়েছে, এটা আপনার-আমার বেলায়ও তো হতে পারতো। নিহতদের জায়গায় আমিও থাকতে পারতাম।  

বাংলাদেশ সময় : ১৯৫১ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ