ব্যাংকক থেকে: অল্প কিছু ডিজাইন আর কালেকশন ছিলো বাংলাদেশি সিরামিক পণ্যের। তা দেখেই মুগ্ধ থাইরা।
বাংলাদেশি সিরামিক পণ্য গুণে-মানেও থাই বাজারের অন্য যেকোনো সিরামিক পণ্যের চেয়ে অনেক গুণ ভালো। আর তা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন থাই সাধারণ ক্রেতা, ব্যবসায়ী এমনকি থাই সরকারে মন্ত্রীরাও।
থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো আয়োজিত এ এক্সপোতে পণ্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্ক বাড়াতে প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে দু’দেশের নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ ছিলো এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।
এ নিয়ে তিন দিনে দফায় দফায় বৈঠকে বাংলাদেশের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে থাই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা বৈঠক করেন। এছাড়া বাণিজ্য বাড়াতে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা জানান, থাইল্যান্ডের বাজারে চীনসহ অন্য অনেক দেশের সিরামিক পণ্য রয়েছে। তাদেরও নিজস্ব কিছু পণ্যও রয়েছে। তবে থাই ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশি পণ্যই পছন্দ করেছেন। তারা বাংলাদেশ থেকে সিরামিক আমদানি করতেও ইচ্ছুক।
তবে এক্ষেত্রে পাহাড়সম শুল্ককে প্রধান বাধা বলে মনে করেন উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে সিরামিক পণ্য আমদানি করতে এখানকার ব্যবসায়ীদের ৩০ শতাংশ শুল্ক গুনতে হয়। যদিও ভারত কিংবা চীনের ক্ষেত্রে শুল্ক নামমাত্র। এসব দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশ ও থাই ব্যবসায়ীরা দু’দেশের মধ্যে এমন কোনো চুক্তি কিংবা সিরামিক পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চাইছেন।
প্রতিবছর ঢাকায় থাই পণ্য মেলা আয়োজন হলেও দু’দেশের গত ৪৪ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কে এবারই প্রথম থাইল্যান্ডে বাংলাদেশি পণ্য নিয়ে মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে সিরামিক পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছিলো দেশের অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি শাইনপুকুর সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ।
বাংলাদেশ এক্সপোতে ঘুরে দেখো যায়, শেষ দিনে শাইনপুকুর নিজেদের স্টল থেকে একটি পণ্য নিয়েও ফিরতে পারেনি। স্থানীয় ক্রেতারা সবগুলোই কিনে রেখেছেন।
এ বিষয়ে শাইনপুকুরের হেড অব মার্কেটিং তানভীরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এদেশে সিরামিক পণ্যের বাজার রয়েছে। যদিও চীনসহ অন্য অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী আছে। তবে আমাদের পণ্যের মান অন্য অনেক দেশের চেয়ে ভালো হওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবো। কিন্তু সমস্যা হলো বিরাট শুল্ক। এই শুল্কের পাহাড় এড়িয়ে এখানে ব্যবসা করা কঠিন। তাই দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক কমাতে হবে।
এ বিষয়ে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাঈদা মুনা তাসনিম বাংলানিউজকে বলেন, এ আয়োজনের মাধ্যমে থাই বাজারে কোন কোন বাংলাদেশি পণ্যের সম্ভব্যতা রয়েছে তার একটা ধারণা আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে সিরামিক পণ্য একটি। এখন থাই সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা আমাদের সহজ হবে। ২০১৭ সালে থাই সরকার শুল্কমুক্ত পণ্যের তালিকা পুনর্বিবেচনা করবে। তার আগে আমরা কোন কোন পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চাই, তার একটা তালিকা পাঠাবো। সেখানে অবশ্যই সিরামিক পণ্য রাখা হবে।
জানা যায়, বাংলাদেশের একটি ক্রমবর্ধমান উত্পাদন খাতের মধ্যে সিরামিক শিল্প অন্যতম। ১৯৫০ নাগাদ শুরু হওয়া দেশের সিরামিক শিল্প এখন বিশ্বজুড়ে সমাদৃত।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে ৮০ শতাংশ দেশীয় চাহিদা মিটিয়েও প্রায় ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সিরামিক পণ্য রপ্তানি করা হয়।
তৈজসপত্র, টয়লেট সামগ্রী ও টাইলস প্রভৃতি পণ্যের ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত মুনা আরও বলেন, থাইল্যান্ডের মধ্য দিয়ে এখন আমরা আসিয়ান অঞ্চলের বাজারেও প্রবেশ করতে চাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৬ জন ০৩, ২০১৬
জেপি/এএ