ব্যাংকক (থাইল্যান্ড) থেকে: সময়টা বেশি দিন আগের নয়। কপর্দকশূন্য হাত।
ভিজিটিং কার্ড করার মতো অর্থও ছিলো না। "আমি কি আপনাকে সহযোগিতা করতে পারি" - কম্পিউটারে কম্পোজ করা কাগজ নিয়ে এভাবেই পথে পথে ঘুরে সামান্য কাজ খোঁজা মানুষটিকেই আজ খোঁজে অন্যরা । মাঝে সময়ের ব্যবধান মাত্র আড়াই বছর।
তিনি জামাল হোসেন (৪১)। গাইডলাইন হলিডেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এখন থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের ব্যস্ততম এলাকায় তার নিজ কোম্পানির অফিস। সেখানে কাজ করে চারজন থাই নাগরিক। এ ছাড়াও ভারতের কোলকাতা ও বাংলাদেশের ঢাকাতেও রয়েছে তার অফিস।
বাবা মৃত শামসুল হক। কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার জাফরগঞ্জ গ্রামের সন্তান। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে চতুর্থ। একটা সময়ে দেশে চাকরি করতেন ইন্স্যুরেন্সে। পরে ছোট পরিসরে চান্দিনায় সোয়েটার কারখানা প্রতিষ্ঠা, ইস্টার্ন প্লাজায় দুটি দোকান। ইলেকট্রনিক্সসহ নানা ব্যবসা। সবই কেবল দুঃসহ স্মৃতি।
স্মৃতির পর্দা সরিয়ে জীবনের পেছনের অধ্যায় বাংলানিউজের কাছে মেলে ধরেন জামাল হোসেন। "অার্থিক বিপর্যয়ে তছনছ হয়ে যায় জীবনের কাঠামো। স্ত্রী সরকারি চাকরি করতেন। সন্তানরা স্কুলে যাবে। সকালে তাদের হাত খরচটা তুলে দেবার অর্থও ছিলো না তার।
সবচাইতে কম অর্থে কোন দেশে যাওয়া যায়। সেটা ভেবে ধার দেনা করে বিমান ভাড়া জুটিয়ে ২০১৩ সালে চলে আসি এখানে। কাজ নেই বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি রেস্টুরেন্টে।
আমার কাজ ছিলো বয় বেয়ারার। দু’মুঠো খাবার আর অাশ্রয়। তাও রাতে ঘুমুতে হতো হোটেলের বেঞ্চে। কথা ছিলো মাসে বেতন দেবে সাত হাজার বাথ। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬ হাজার। তবে বেতন কেবল প্রতিশ্রুতিতে। বাস্তবে আর মিলতো না। এভাবে চললো তিন মাস।
আবার নামলাম পথে। এবার কম্পিউটারে কম্পোজ করা কাগজে হাতে নিয়ে পথে ঘাটে ঘুরে মানুষকে সহায়তা করতাম। কাউকে হোটেল বা হাসপাতাল চিনিয়ে দিতাম। বিনিময়ে কিছু পেলে সেটা দিয়েই চলতো দিন।
আজ আমি সুকম্ভিত ১৩ নম্বর সুইট বিল্ডিংয়ে এ ট্যুরিজম কোম্পানি খুলেছি। দেশ বিদেশের অসংখ্য মানুষ আমার সেবা নেন। তাদের নানা জায়গায় ঘুরিয়ে দেখায় আমার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।
আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি। তবে এখনো মনে রাখি পথে পথে ঘুরে বেড়ানো কষ্টের সেই দিনগুলোর কথা। এখন মানুষকে ভালোবাসা আর সেবা দিয়েই দিন কাটে আমার।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৬
আরআই