অপর প্রান্ত থেকে বন্ধু তাকে আশ্বস্ত করে একটি নম্বর দিয়ে বললেন, জামাল হোসেন পিএসসি’র সঙ্গে যোগাযোগ করো।
ঢাকার ফোন ছেড়ে ব্যাংককের দেওয়া নম্বরটিতে ডায়াল করার ২০ মিনিটের মধ্যেই হাজির জামাল হোসেন পিএসসি।
দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা বললেন, ‘হার্ট অ্যাটাক। আরেকটু দেরি করলে সর্বনাশ হতে পারতো। ’
পরদিন দুপুর পর্যন্ত প্রিয় স্বজনের মতোই ফাইয়াজ সিদ্দিকীর বিপদে পাশে রইলেন জামাল হোসেন পিএসসি।
বিকেলে গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জামাল হোসেনকে প্রথমে ধন্যবাদ জ্ঞাপন, পরে ইতস্তত হয়েই একটি খামে ভরে দু’হাজার বাথ সাধলেন ফাইয়াজ সিদ্দিকী। কিন্তু কিছুতেই সেই অর্থ নিলেন না জামাল।
দেশে এতোদিন পিএসসি মানে পাবলিক সার্ভিস কমিশন, পাসড স্টাফ কলেজ বা প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট বলেই জানতেন ফাইয়াজ।
কিন্তু এই পিএসসির মানে কী? সাদর আলিঙ্গন করে বিস্ময় চাপা না রেখেই শব্দটার মানে খুঁজলেন তিনি।
‘প্রব্লেম সলিউশন সেন্টার’ তাৎক্ষণিক উত্তর জামাল হোসেনের। ‘আসলে এখানে বাংলাদেশিদের আপদে-বিপদে নিঃস্বার্থভাবে এভাবে এগিয়ে আসার কারণেই অনেকে আদর করে নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে পিএসসি। সেই থেকেই আমার নামের শেষে যুক্ত হয়েছে শব্দ তিনটি। ’
জামাল হোসেন (৪২) থাকেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে। রাজধানী ব্যাংককে গাইডলাইন হলিডেজ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তিনি।
ব্যাংককের ব্যস্ততম সুকম্ভিত এলাকার ১৩ নম্বর সুইট বিল্ডিংয়ে তার ট্যুরিজম কোম্পানির অফিস।
একটা সময় দেশে গাড়ি, বাড়ি, সোয়েটার কারখানা, ইস্টার্ন প্লাজায় দোকান। জমজমাট ইলেকট্রনিক্সসহ নানা ব্যবসা। সবই ছিলো তার। সেসব এখন কেবল অতীত।
বিশ্বস্ত মানুষদের ওপর নির্ভর করেই গড়ে তুলেছিলেন ব্যবসা। তবে সেটাই হয়েছিল কাল।
কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার জাফরগঞ্জ গ্রামের মৃত শামসুল হকের সন্তান। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে চতুর্থ জামাল। ধার-দেনা করে প্লেন ভাড়া জুটিয়ে ২০১৩ সালে চলে আসেন এখানে। বয়-বেয়ারার কাজ নেন বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি রেস্টুরেন্টে।
বেতন নেই। কেবল দু’মুঠো খাবার আর আশ্রয়। তাও রাতে ঘুমুতে হতো হোটেলের বেঞ্চে। সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা।
‘এমন একটা সময় ছিলো, পথে পথে ঘুরতাম। আমি কি আপনাকে সহযোগিতা করতে পারি? কম্পিউটারে এমন কম্পোজ করা কাগজ নিয়ে পথে পথে ঘুরে সামান্য কাজের খোঁজ করতাম। কাউকে হাসপাতাল, কাউকে হোটেল চিনিয়ে দিতাম। ভিজিটিং কার্ড করার মতো অর্থও ছিলো না তখন। ’
‘অন্যের আশ্রয়ে থেকে এভাবেই আজ এই অবস্থানে। ’ জানান জামাল হোসেন।
‘বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন আসেন এখানে। কেউ বেড়াতে। কেউ চিকিৎসায়। কেউবা আবার বিজনেস মিটিংয়ে। লক্ষ্য করলাম, এদের অধিকাংশই ভারতীয় ও থাই কোম্পানির মাধ্যমে সেবা নেন। ’
‘আমার ভাবনাটা হলো আগে সেবা। পরে ব্যবসা। এভাবে রাত-বিরাতে সময়ে-অসময়ে আমি দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াই। এটাই দেশের প্রতি আমার ভালোবাসা। ’
‘ধরেন কারও ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে। কেউবা পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেছেন। কারো চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লাগবে। দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা করাতে এসেছেন এমন ব্যক্তিদের সাশ্রয়ী মূল্যে বাসা লাগবে। কেউ একাই এসেছেন অসুস্থ। এমন মানুষদের এয়ারপোর্ট ট্রান্সফার, ওষুধ কিনে দেওয়া, হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট কালেকশনের ব্যবস্থা করা। - এসব কাজই করি মানবতার সেবায়। ’
এসব কাজের জন্যে কোন ফি নেয় না আমার কোম্পানি- বলেন জামাল হোসেন।
‘আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি। তবে এখনো মনে রাখি, পথে পথে ঘুরে বেড়ানো কষ্টের সেই দিনগুলোর কথা। এখন মানুষকে ভালোবাসা আর সেবা দিয়েই দিন কাটে আমার। এভাবেই মানুষের আর দেশের সেবা করে যেতে চাই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৭
এইচএ/
আরও পড়ুন
** সন্তানের ছবি দেখেই জামানের কষ্টের নোনা জল মেশে সাগরে
**মেরিনের হাসিমুখে ভাসে মমতার বাংলাদেশ!
** দেশে-দেশে বাংলাদেশের অর্জনের ফেরিওয়ালা রাকিবুল আমিন
** অন অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধের শঙ্কা
** তথ্যপ্রযুক্তিতে সুস্থ রাখার এক ফেরিওয়ালা সাজিদ রহমান
** ইন্দোনেশীয় ইউলিয়ানা আর বাংলাদেশি পলাশের প্রেমের আখ্যান!
** ঘামে ভেজা গেঞ্জি থেকেই সাফল্য!
** ইন্দোনেশিয়ায় নেমেই কোটিপতি!
** বাংলার পুকুরেই সাগরের ভেটকি
** প্রবাসে ভবিষ্যত বাংলাদেশ
** ইন্দোনেশিয়ায় অনন্য বাংলাদেশকেই মেলে ধরছেন হুমায়রা
** সন্ধ্যা হতেই বাতি নেভে শাহজালালের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের
** ঢাকা-জাকার্তা অনন্য উচ্চতায়
** ইন্দোনেশিয়া হতে পারে সেরা গন্তব্য
** এবার ইন্দোনেশিয়ার পথে বাংলানিউজের জাহিদ