ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

বিমানের সফটওয়্যার কেনায় দুর্নীতি, যা বললেন অভিযুক্ত কর্মকর্তা

মাছুম কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
বিমানের সফটওয়্যার কেনায় দুর্নীতি, যা বললেন অভিযুক্ত কর্মকর্তা অভিযুক্ত কর্মকর্তা বিমানের মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রশীদ (ইনসেটে)

ঢাকা: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনায় লাভ-ক্ষতির হিসাব নির্ধারণে ৫ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে দুটি সফটওয়্যার কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিমানের ক্রয়নীতি লঙ্ঘন করে এগুলো কেনা হয় বলে অভিযোগ।

 

তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তা বিমানের মহাব্যবস্থাপক (রেভিনিউ অ্যান্ড এফএমআইএস, অর্থ পরিদপ্তর) মিজানুর রশীদ পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, প্রমোশন আটকানোর জন্য প্রতিপক্ষের লোকজন এই অভিযোগ তুলেছেন।

জানা গেছে, ২০১৬ এবং ২০১৮ সালে 'ফ্লাইট প্রফিটিবিলিটি সিস্টেম' (এফপিএস) এবং 'কস্ট অ্যান্ড বাজেট' নামের এ দুটি সফটওয়্যার কেনা হয়। সফটওয়্যারগুলোর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এক্লেয়া কেল সলিউশন। সফটওয়্যার দুটি কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক্লেয়াকে ৫ কোটি ৪ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে বিমান।

২০১৬ সালের আগ পর্যন্ত বিমান মাইক্রোসফট এক্সেলের ফাংশন ব্যবহার করে নিজস্ব পদ্ধতিতে 'রুট কস্টিং' (বিভিন্ন রুটের ফ্লাইট পরিচালনার মোট খরচ) এবং 'রুট প্রফিটিবিলিটি' (লাভসহ বিভিন্ন রুটের ভাড়া নির্ধারণ) প্রস্তুত করত।

পরে এ দুই কাজের জন্য মিজানুর দুটি সফটওয়্যার কেনেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালে কেনা ফিন্যান্স বাজেটিং সফটওয়্যারটি পরবর্তী সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। অন্য সফটওয়্যার এফপিএস (ফ্লাইট প্রফিটিবিলিটি সিস্টেম) দিয়ে কাজ শুরু করা হয় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে।

মিজানুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিমানে কোনো সফটওয়্যার কেনার আগে তার বিকল্প কী কী আছে এবং সেগুলোর বিষয়ে আরএফপি (রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল) দিতে হয়। মিজানুর তা দেননি। এ ছাড়া তিনি বিমানের আইটি বিভাগ বা অন্য কোনো কমিটির পরামর্শ না নিয়ে ইন্টারফেস কস্ট সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করেন।  

প্রোটোকল অনুযায়ী, কোনো কিছু কেনার আগে যেসব কর্মকর্তার মতামত নিতে হয়, তাও নেননি তিনি।

শুধু তাই নয়, একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির সফটওয়্যার কেনার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তিনি বিমানের ক্রয়নীতি লঙ্ঘন করেছেন। একই সঙ্গে অবৈধ আর্থিক সুবিধার জন্য বিমানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে ক্রয়চুক্তি সম্পন্ন করেন তিনি।

এসব অভিযোগ উল্লেখ করে মিজানুরের বিরুদ্ধে গত ৭ জানুয়ারি বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) সিদ্দিকুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়।

সে নোটিশের জবাব দিয়েছেন মিজানুর। জবাবে বিমানের এ মহাব্যবস্থাপক বলেছেন, সফটওয়্যার ক্রয়ের বাজেট বিমানের এমডি এবং সিইওর সক্ষমতার মধ্যে থাকায় বিষয়টি অন্যান্য কর্মকর্তাদের অবহিত করিনি। একই সঙ্গে সফটওয়্যার ক্রয়ে বিমানের আলাদা সফটওয়্যার প্রকিউরমেন্ট পলিসি না থাকায় প্রকিউরমেন্ট পলিসি ১৩/২০০৮ অনুযায়ী আমি তৎকালীন এমডি এবং সিইও'র অনুমোদন নিয়ে ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি।  

কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে মিজান এও জানান, বিমানের জন্য একটি যুগোপযোগী সফটওয়্যার কেনার জন্য তৎকালীন সিএফও ভিনিদ সুদ তাকে বারবার তাকে নির্দেশনা দেন। বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতো।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, এটা এমডি স্যারের অনুমোদন নিয়ে আমি করেছি। আমার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, আমি দিয়েছিও। এর আগেও আমি যখন ডিরেক্টর প্রমোশন পাওয়ার কথা, এ ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছিল। একটা গ্রুপ এটা আটকানোর জন্য এ ধরনের অভিযোগ তোলা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি চাই সত্য বেরিয়ে আসুক। আমি মনে করি, এটার জন্য আমাকে এপ্রিসিয়েশন লেটার দেওয়া উচিত। এটা যদি বন্ধ করি, তাহলে বিমানের যে রুট প্রফিটিবলিটি বন্ধ হয়ে যাবে। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, এটা ২০১৬ সালে ইনস্টলমেন্ট করা হয়েছে। বর্তমানে ম্যানেজমেন্ট এটার মেয়াদ ১ বছর বাড়িয়েছেন। আরও বাড়াবেন। ৫-৬ বছর চলার পর এটা সামনে আনার কারণ কি? ওই অ্যাপস ব্যবহার করলে, শুধু খরচ করতে হবে, না হলে না। অভিযোগ এসেছে, এই অ্যাপস কাজে লাগছে না। আমি আপনাকে সিস্টেমে লগিন করেও দেখাতে পারব যে, কাজ হচ্ছে।

মিজানুর রশীদ বলেন, আমি হালাল খাই, হালাল চাকরি করি। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করেছি, স্ট্যান্ড করা ছাত্র আমি। আমার ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেন আপনি। আমি এভিয়েশন নিয়ে পড়েছি। আমি নিজেও এভিয়েশন পড়াই। এই বিজনেসটা কীভাবে অপারেট করতে হয়, আমি জানি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম বাংলানিউজকে বলেন, ক্রয়নীতি ভঙ্গ করায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তিনি নোটিশের জবাব দিয়েছেন। তবে সেটি আমার কাছে সন্তোষজনক মনে না হওয়ায় একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা নিবিড়ভাবে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবেন। এর ভিত্তিতে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে কোনো সময় বেধে দেওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিমানের আচরণবিধি আইন অনুযায়ী এটা ধাপে-ধাপে সম্পন্ন হবে৷

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘন্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
এমকে/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।