মৌলভীবাজার: পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে দেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্থানে ভ্রমণ করতে আসেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো পর্যটননগরী মৌলভীবাজার।
ঈদকে সামনে রেখে পর্যটকদের বরণ করতে বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ, গেস্ট হাউসগুলো সেজেছে নতুন রূপে। ছোটখাটো কাজকর্ম যেমন রং ও ধোয়ামোছার কাজ বেশ আগেই শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। তারপর পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে রুম বুকিংয়ের ওপর দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞাপন। অনেক হোটেল রিসোর্ট কটেজ বুকিংয়ের ওপর ১৫ শতাংশ ও ২০ শতাংশ এমনকি ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছেন। কিন্তু তারপরও মিলছে না আশানুরূপ বুকিং। এভাবে চলতে থাকলে পর্যটনশিল্পে নেমে আসবে অবশ্যম্ভাবী ধস বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা।
সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক পর্যটন স্থান ঠিক রেখে, শহরের আশপাশে কৃত্রিম পর্যটন স্পট তৈরি করলে পর্যটকদের সমাগম বিশেষ করে দেশি পর্যটকদের সমাগম বাড়তো, এতে সার্বিকভাবে সবাই উপকৃত হতেন। তবে রুম বুকিংয়ের ক্ষেত্রে হোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসের তুলনায় ব্যতিক্রম ছিল ইকো কটেজগুলো।
জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারের পাঁচ তারকা বিলাসবহুল রিসোর্ট গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ এবং দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা বুকিংয়ের ওপর ৪০ শতাংশ, ছাড় দিয়েছে। এছাড়াও নভেম ইকো রিসোর্ট কমপ্লিমেটারি পরিসেবা এবং খাবারসহ ১০ শতাংশ, বালিশিড়া রিসোর্ট ২০ শতাংশ ছাড় দিয়ে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার পর্যটকদের তুলনামূলকভাবে সাড়া মিলছে না।
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ এবং নভেম ইকো রিসোর্টের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, বুধবার (১৯ এপ্রিল) পর্যন্ত প্রায় ৫০ শতাংশ মতো রুম বুকিং হয়েছে।
অনেক হোটেল রিসোর্ট ও গেস্ট হাউজ মালিকেরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আজ বাদে আগামীকাল ঈদ, কিন্তু এখনো সম্পূর্ণ রুম বুকিং হয়নি। এমনিতেই রমজান মাসে ব্যবসা ভালো হয়নি। আশা করেছিলেন ঈদে হয়তো কিছু ব্যবসা করবেন কিন্তু পর্যটকের সাড়া মিলছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, মহামারি করোনার পূর্ববর্তী সময় ও পরবর্তী সময়ের মধ্যে এই প্রথম আমাদের গেস্ট হাউজের মাত্র ২০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। গত দুই দিন ধরে তিনি গেস্ট হাউজ, ও বিভিন্ন হোটেল মালিকদের সঙ্গে ফোনে আলাপ করেছেন অধিকাংশ হোটেল, গেস্ট হাউজের একি অবস্থা, রুম বুকিং স্বল্প। যেখানে অন্য অন্য বছরগুলোতে পর্যটকের চাপে রুম দিতে পারতেন না, সেখানে ঈদ চলে আসছে নিকটে কিন্তু পর্যটকদের সাড়া নেই। অতিরিক্ত গরম এবং মৌলভীবাজারে বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন না করা।
শ্রীমঙ্গলের অবস্থতি শান্তিবাড়ি ইকো রিসোর্টের প্রতিষ্ঠাতা তানভির সরকার লিংকন বলেন, আমাদের সবগুলো রুমই বুকিং হয়ে গেছে। আমাদের তেমন কোনো অসুবিধা হয় না, প্রতিবছরই এরকম বুকিং হয়েছিল। শুধু করোনাকালীন ছাড়া। আমরা গতানুগতিক রিসোর্ট তৈরি করেনি। আমাদের রিসোর্টে প্রকৃতির নিবিড় পরশ রয়েছে। যে কারণে যারা একবার আসেন তারা সময় সুযোগ পেলে আবারও আসতে চান।
তিনি আরো বলেন, তবে বড় রিসোর্টসহ গেস্টহাউজগুলো এখনো পরিপূর্ণভাবে বুকিং হয়নি শুনেছি। রিসোর্ট গেস্ট হাউজগুলো বুকিংয়ের ওপর ছাড় দিয়ে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে যেহেতু ছোট ছোট কটেজগুলো শতভাগ বুকিং শেষ হয়েছে এবং পবিত্র ঈদের আরো কয়েকদিন অবশিষ্ট রয়েছে তাহলে, তাই তিনি আশাবাদী যে হোটেল, গেস্ট হাউজ ও রিসোর্টগুলোর রুম বুকিং বাড়বে।
গেস্ট হাউজের তুলনায় ইকোকটেজগুলো শতভাগ বুকিং হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেন, নগরকেন্দ্রীক মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশে কুঁড়েঘরে নিরিবিলি থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বলেই হয়তো দ্রুত আমাদের ইকোকটেজগুলো বুকিং হয়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৩
বিবিবি/এএটি